ঢাকা : নির্ভীক সাংবাদিকতা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করার মূলমন্ত্র হিসেবে পৃথিবীর প্রতিটি দেশে পরিগণিত হয়ে আসছে। ‘সুবচন’ নির্বাসনে গেলে রাষ্ট্র হারায় তার কাঙ্ক্ষিত গতিপথ। আজ কোভিড-১৯ দ্বারা গোটা বিশ্ব যখন পর্যুদস্ত, তখন দেশের স্বাস্থ্যখাতের দশাসই চেহারা আপামর জনসাধারণের সামনে খোলাসা হয়ে যায়। কীভাবে জনগণের প্রদত্ত কর-খাজনার টাকা স্বাস্থ্যসেবার নামে লোপাট হয়েছে দুর্নীতির মায়াজালে! সেসব দুর্নীতির খণ্ড খণ্ড চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরেন দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। আর এটিই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জীবনে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গুটিকয়েক দুর্নীতিপ্রবণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে আজ রোজিনা ইসলাম কারাগারে।
আজকের সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বিষয়টি দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয়নি। তবে কি সঠিক সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বাংলাদেশে নিষিদ্ধ? এখন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ বিশ্ব মিডিয়ার কাছে। এদেশে সংবাদপত্রের টুঁটি চেপে ধরার প্রয়াস লক্ষ করা গেছে অতীতেও। মূলত বিভিন্ন সময়ের সামরিক শাসন ও স্বৈরশাসকদের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতেই স্বাধীন সাংবাদিকতা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হতে শুরু করে। কার্যত গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধেই বিভিন্ন সময়ে তৈরি হয় প্রেস অ্যাক্ট— যার সর্বশেষ সংযোজন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ৩২ ধারা। সুতরাং আমরা বলতেই পারি সংবাদপত্রের বাকস্বাধীনতাকে রহিত করতেই অতীতের মতো এবারো রোজিনা ইসলামকে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে সাংবাদিকতার সত্য ভাষণকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল সরকারের স্বার্থান্বেষী মহল। এবং এর মাধ্যমে একজন নারী সাংবাদিকের সঙ্গে করা হয়েছে অসদাচরণ ও নগ্ন হামলা।
আমরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় একজন সাংবাদিকের সঙ্গে এ ধরনের অবিবেচকপ্রসূত আচরণের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। রাষ্ট্রের ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে সংবাদপত্র। এই ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাই বিধ্বস্ত হবে। ন্যায়বিচার, সুশাসন ও উন্নয়ন গতি হারাবে। সংবাদপত্র যা বলে তা বিরোধিতা নয়, শত্রুর বাণীও নয়। সাংবাদিকদের কলম ন্যায়ের প্রতীক হয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে দল-মত নির্বিশেষে সবার ভুলত্রুটি শুধরে দিতে সাহায্য করে। আলোচনা-সমালোচনার ভেতর দিয়ে জাতীয় রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ হতে এবং সঠিক পথে পরিচালিত করতেও সহায়তা করে।
সুতরাং আমরা আশা করি, পেশাগত কারণে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম যে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, তার দ্রুত সমাধান করতে হবে এবং প্রকৃত দোষীদের সামনে আনতে হবে। একইসঙ্গে যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রোজিনা ইসলামের সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন, তাদেরও অতি শিগগির আইনের আওতায় আনতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী উভয়েই বলেছেন, রোজিনা ইসলাম ন্যায় বিচার পাবেন। আমরা সেই সুশাসন দেখতে চাই। বহু বছর আগে দেখা, এদেশেরই কৃতী সন্তান আবদুল্লাহ আল মামুনের লিখিত মঞ্চনাটক ‘সুবচন নির্বাসনে’ তবে কি স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও বিদ্যমান? এ প্রশ্ন জনমনে উঁকি দেওয়ার আগেই বহু বছরের একটি গণতান্ত্রিক দল এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে বর্তমান সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীন মতপ্রকাশে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করবেন, এই বিশ্বাস রাখি। সাংবাদিকদের কলমকে মুক্ত ও সচল রাখুন, এই প্রত্যাশা আমাদের।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।