ঢাকা : টিকা উৎপাদনের ব্যবস্থায় যাওয়াই এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। বিশ্বব্যাপী উন্নত দেশগুলোর টিকার নিশ্চয়তা তাদের আরো বেশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে দেবে। বৈশ্বিক চাপ থেকে বের হয়ে আসা এবং নিজেদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এখনি টিকার পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে বিশ্বব্যাপী ভারত, ব্রাজিল এবং আরো কয়েকটি দেশের মধ্যেই করোনা বর্তমানে বিস্তৃতি লাভ করছে। একদিকে পাশের দেশগুলোতে টিকার অপর্যাপ্ততা, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির গ্যাঁড়াকল—সব মিলে আমাদের মতো দেশের টিকা পাওয়া দিন দিনই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। বিশ লাখ, চল্লিশ লাখ টিকার বিষয়ে যে আলোচনা হচ্ছে বা আমরা পাচ্ছি তা খুব বেশি অপ্রতুল! আমরা যতই লকডাউন আর শাটডাউনের চিন্তা করি না কেন তার চেয়েও বড় চিন্তা হয়ে দাঁড়াবে মানুষের জীবিকা। মৃত্যু ও জীবিকার লেখ অঙ্কন করতে গিয়ে যাতে আমাদের হতাশায় পড়তে না হয়, অর্থনৈতিক ভারসাম্য যাতে ঠিক থাকে এবং মানুষের মধ্যে ভয় কেটে যাওয়ার জন্য এখন একটিই কাজ—সেটি হলো সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করা।
আন্তর্জাতিক চুক্তি, টিকার দুষ্প্রাপ্যতা, দ্রুত আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ার ওপর নির্ভর করে আমাদের পুরো অর্থনীতি। পোশাক শিল্প যদি পিছিয়ে পড়ে তবে সেটা হবে আমাদের জন্য বড় অসহনীয় যাতনার কারণ। মাথাপিছু আয়, প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ—এসবই যদি ওপরের দিকেও যায়, সে ক্ষেত্রেও কিছু মানুষের জীবিকার প্রশ্ন থেকেই যাবে। এখনো আমাদের দেশে দিন আনে দিন খাওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক। রিকশা চালিয়ে জীবন ধারণ, কৃষিকাজে শ্রমিকদের অংশগ্রহণে জীবন নির্বাহ, প্রতিদিনের হিসেবে কাজ করা মানুষ অর্থাৎ দিনমজুর, ইটভাটার শ্রমিক, গণপরিবহনের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক—এমন আরো অনেক কাজের মাধ্যমেই সাধারণ মানুষগুলো তাদের জীবিকা নির্বাহ করে।
অন্যদিকে এই মানুষগুলোরই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। কয়েকদিন ধরে গ্রামে করোনা আক্রান্ত হওয়ার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে সীমান্ত এলাকাগুলোতে এই প্রভাব আরো বেশি। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, আক্রান্তের মোট হারে গ্রামের রোগীই এখন পঞ্চাশ ভাগের কাছাকাছি। আবার অন্যদিকে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির হয়ে আছে। ঠিক পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের কথা চিন্তা করলে দেখা যায় যে, কিছু কিছু দেশ বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেওয়ার ব্যপারে এগুতে পারছে, কারণ তাদের টিকা দেওয়ার হার বেশি। কানাডায় দুডোজ টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা সবাই মাস্ক ছাড়াই আলিঙ্গন করার অনুমোদন পেয়েছে। এগিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। তারা খেলার আয়োজনগুলোতে দর্শক নিয়ে খেলা দেখার বিষয়ে এগুচ্ছে। কিছুদিন পর থেকেই এদেশগুলোর বিপণন, বেচাকেনা সব আবার আগের অবস্থায় ফিরবে বলে আশা করা যায়।
তখন যদি আমাদের দেশে করোনার প্রভাব না কমে, তবে আমরা আবার ব্যবসায়িকভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়ব। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্পে আমাদের থমকে যেতে হবে। বিদেশে যাওয়া মানুষগুলোর ক্ষেত্রে তথা প্রবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ভোগান্তি আরো বাড়বে। অনাকাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক এ জাতীয় বিপর্যয় এড়ানোর জন্য আমাদের এখন থেকেই আরো দ্রুত গতিতে ভালো কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশেষভাবে টিকার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দুটো উপায় চিন্তা করা যেতে পারে। টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সরকারের প্রচেষ্টা তো অব্যাহত। এর সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোগ যোগ করা যায় কি না সে বিষয়টিও ভাবা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিকভাবে ভ্যাকসিনেশনের যে আইন আছে সেখানে কোনো মহামারির সময় ভ্যাকসিনের ম্যাথোড বিভিন্ন দেশের কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রকাশ করার যে নীতিমালা রয়েছে, তাকে ব্যবহার করেই এ বিষয়গুলোর আরো দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন ও সহজলভ্য করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ এখন আর খোলা নেই।
লকডাউন ও শাটডাউন করে হয়তোবা কিছুটা কমিয়ে রাখা যাবে কিন্তু টেকসই ব্যবস্থাপনায় যেতে হলে দ্রুত ভ্যাকসিনের সহজলভ্যতাই একমাত্র পথ। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তাপ সহিষ্ণু ভ্যাকসিন উৎপাদনে কীভাবে দ্রুত এগুনো যায়, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের এখন এ কাজে মনোযোগী হতে হবে। আমাদের অর্থনীতির কাঠামো ধরে রাখতে হলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় পথ না চিন্তা করে দ্রুত করোনার টিকা উৎপাদনে ব্যবস্থা নেওয়াই হবে সঠিক পদক্ষেপ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের কার্যক্রমের কারণে ইতোমধ্যে সংসদে ক্ষোভের মুখে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় দুর্নীতির কথা উঠে এসেছে। কোনো কোনো জেলায় অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারাও যাচ্ছে। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার সংকটও চোখে পড়ার মতো। অন্যদিকে করোনা বাড়ছে বাতাসের বেগে। এ অবস্থায় সামগ্রিক বিষয়গুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে দেখে ব্যবস্থা নিলে কাজে গতিশীলতা আসবে বলে মনে করি। আশা করি, সরকারের সহযোগিতা পেলে আমাদের প্রসিদ্ধ ওষুধ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো করোনার টিকা উৎপাদনে দ্রুতই সমর্থ হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক পরিম্ললে দেশের গৌরব বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতি রক্ষা পাবে করোনার মতো অতিমারি থেকে।
লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি
শ্রীপুর, গাজীপুর
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।
আপনার মতামত লিখুন :