ঢাকা : গণমাধ্যমের কাছে ভাইরাল কনটেন্ট কখনও কখনও কাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠে। কেননা, নেটিজেনরাই অনলাইন সংবাদমাধ্যমের অডিয়েন্স। আর বিজ্ঞাপনের মডেলটিই গড়ে উঠেছে কনটেন্ট শেয়ারিং আর কোয়ালিটির ওপর ভিত্তি করে। সে কারণে কোনো কনটেন্ট ভাইরাল হলে শেষ অবধি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের বিজনেসের ক্ষেত্রে সেটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
একে অনেক সময় অনলাইন সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল কনটেন্ট তৈরির প্রচেষ্টাও থাকে। তবে অনেক সময় কীভাবে একটা কনটেন্ট ভাইরাল হয় বা হতে পারে সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা থাকে না। ভাইরাল কনটেন্ট তৈরির জন্য কী কী বিষয় প্রাধান্য দিতে হয় সে ব্যাপারেও তেমন কোনো গবেষণা হয় না। যদিও অডিয়েন্সের প্রচলিত আগ্রহ, নির্দিষ্ট সময়, কনটেন্টের মান এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করা হয়। তবে আগে থেকেই বলা সম্ভব হয় না কোন কনটেন্টটি ভাইরাল হবে।
কনটেন্টের কী কী বৈশিষ্ট্য থাকলে তা ভাইরাল হয়- এ বিষয়টি জানার জন্য ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো গবেষণা করা হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রায় সাত হাজার প্রবন্ধ নিয়ে তিনমাস ধরে গবেষণা করেন একদল গবেষক। তারা শব্দভাণ্ডারভিত্তিক কম্পিউটার অ্যালগরিদম বানিয়ে ফলাফল জানার চেষ্টা করলেন। শেষ অবধি ফলাফল পাওয়া গেল অডিয়েন্সের আবেগ।
প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, নেতিবাচক খবর বা সংবাদই অডিয়েন্সের আগ্রহ সৃষ্টির কারণ। তবে এ গবেষণায় জানা গেল, ইতিবাচক আবেগ উৎসারিত লেখা নেতিবাচকগুলোর তুলনায় অনেক বেশি শেয়ার হয়। তবে এক্ষেত্রে মজার একটা ব্যাপার হলো- একটি ইতিবাচক আর একটি নেতিবাচক প্রবন্ধের মধ্যে নেতিবাচকটাই শেয়ারের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকবে। এখান থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়, আপনার আবেগ আপনাকে কতটুকু উত্তেজিত করবে তার ওপরই শেয়ার নির্ভর করবে।
বিস্তারিত ফলাফলে কনটেন্ট ভাইরালের পেছনে গবেষকরা পাঁচটি কারণ খুঁজে পান। অডিয়েন্সের মানসিকতার মধ্যে এগুলো প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। প্রথমত, বিভিন্ন জ্ঞানগর্ভ বিষয় কিংবা বিনোদনের যোগান দেয় এমন বিষয়গুলোকে প্রিয় মানুষগুলোর জীবনের অংশ বানানোর ইচ্ছে থাকে অডিয়েন্সের। যে কারণে তারা সেগুলো শেয়ার দেন।
দ্বিতীয়ত, অন্যদের কাছে নিজের পরিচয় তুলে ধরা বা সংজ্ঞায়িত করা, তৃতীয়ত, আমাদের জীবনে জড়িয়ে থাকা সম্পর্কগুলো বিকশিত ও শক্তিশালী করা, চতুর্থত, আত্মতৃপ্তি লাভ আর পঞ্চমত, আমাদের বিশ্বাসকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার প্রেরণা থেকেই কোনো কনটেন্ট আমরা শেয়ার দিয়ে থাকি।
অডিয়েন্স কেন ভাইরাল কনটেন্ট শেয়ার দেন সে প্রশ্নের উত্তর গভীরভাবে খুঁজতে বহু গবেষণা হয়েছে। একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কোনো কিছু শেয়ার বা পোস্ট করার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের একাকিত্বের অনুভূতি কমাতে পারি। আর সেই একাকিত্ব কমার পেছনে ছিল বন্ধু ও পরিচিতিদের সঙ্গে নিয়মিত সম্পৃক্ততার অনুভূতি। কেউ যখন তার বিভ্রান্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন, তখন বন্ধুরা কিংবা অন্য সবাই উপলব্ধি করে তাদের অনুভূতি শুধু তাদের একার নয়। তারা আর একা অনুভব করছেন না। এভাবেই ভার্চুয়াল জগতে সুবিস্তৃত সম্পর্ক তৈরি হয়।
লেখক : সাংবাদিক
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।