• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সংবাদমাধ্যম ভাবনা

সাংবাদিকতার বারোটা বেজে গেছে!


নিয়ন মতিয়ুল জুন ৩, ২০২৪, ০৪:১৯ পিএম
সাংবাদিকতার বারোটা বেজে গেছে!

ঢাকা : সিনিয়র এক সহকর্মী, যিনি একজন কলামিস্ট, ফিস ফিস করে বললেন, ‘ভাই, নোংরামির শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে সাংবাদিকতা। এখান থেকে ফেরার সুযোগ আর নেই।’ কৃত্রিম বিস্ময় প্রকাশ করে বললাম, ‘কী যে বলেন! এখন তো সাংবাদিকতার ভরপুর সময় পার করছি আমরা।’
আলাপে যুক্ত হলেন আরেক সিনিয়র। বললেন, ‘আজ প্রেসক্লাবে চরম উত্তেজনা দেখলাম। বড়মাপের এক সাংবাদিক বড় পদ পাওয়ায়, যারা হাজার চেষ্টা করেও বঞ্চিত হয়েছেন তারা চরম ক্ষুব্ধ।’ বললাম, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা যত বেশি হবে, সাংবাদিকদের দাম তত বাড়বে।’

আড্ডা শেষ হওয়ার পর আরেক সহকর্মী এসে বললেন, ‘ভাই, প্রজেক্টের তো বন্যা বইছে। মিডিয়ায় ইনভেস্ট করার জন্য কোটি কোটি টাকা নিয়ে বসে আছে অনেকেই। লোক পাচ্ছে না।’ বললাম, ‘কালোকে সাদা বানানো পানির মতো সহজ, শুধু মিডিয়ায়। এমন সুযোগ আর কোথাও নেই।’

ফেসবুক খুলতেই দেখি, মেগা বাজেটের এক পত্রিকার ১৫ মাসের মাথায় সম্পাদকসহ কোর টিমের সবাই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে আসা পত্রিকাটি নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন জমা ছিল। ফোনে এক সহকর্মীর সঙ্গে কথা হলো। বলল, ‘ভাই, মেগা বাজেটের নতুন মিডিয়া নিয়ে যতই বড় স্বপ্ন দেখছি, ততই বেশি হতাশ হচ্ছি আমরা। এখন তো নতুন পত্রিকায় যোগ দেওয়াই ঝুঁকিপূর্ণ।’

শেষ বেলায় মফস্বলের এক সংবাদকর্মী এসে পরিচয় হতেই জানতে চাইলাম, ‘আপনার জেলার প্রেসক্লাবের খবর কী?’ বোকার হাসি দিয়ে বললেন, ‘ভাই, জেলা প্রেসক্লাবে যারা সদস্য হতে পারেননি, তারা গিয়ে ১০-১২টা ক্লাব, ফোরাম খুলে ফেলেছে।’ বললাম, ‘তাহলে আপনার জেলায় থইথই সাংবাদিকতা হচ্ছে।’ হেসে বললেন, ‘মফস্বলের সব জেলাতেই একই অবস্থা।’

মনে পড়ল, কদিন আগে সিনিয়র এক মেধাবী সাংবাদিক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, জাতীয় প্রেসক্লাবে সদস্যপদ পাওয়ার আশায় ছয় বছর আগে আবেদন ফরম জমা দিয়েও পদ পাননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘সদস্যপদ দানকারীদের’ সিন্ডিকেটের সুদৃষ্টি পাওয়া সাংবাদিকতা করার চেয়েও বহুগুণে কঠিন কাজ। প্রভাবশালী জনপ্রিয় পত্রিকাসহ ৪০ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় থাকা সিনিয়র আরেক সাংবাদিকও জানালেন, কয়েক দশক ধরে অপেক্ষা করছেন প্রেস ক্লাবের সদস্য হতে।

এক সহকর্মীর সঙ্গে আলাপকালে বললেন, সত্যি বলতে কি, সাংবাদিকতার এখন ১২টা বেজে গেছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, অর্থ আর ক্ষমতার লোভে সাংবাদিকরাই নিজেদের পেশার ১২টা বাজিয়েছেন। দীর্ঘ আলাপ শেষে ভাবলাম, ঘড়ির কাঁটায় ১২টার পরে তো আসে ১টা। অর্থাৎ শুরুতে ফিরে যাওয়া। তাহলে কি সাংবাদিকতার এই এক্সট্রিম পরিস্থিতি থেকে আবারও ভালোর দিকে ফিরবো? সেটাই যেন হয়।

লেখক : সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!