• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩০

রাজনীতিকে ‘সার্কাসে’ পরিণত করেছে টকশোগুলো


নিয়ন মতিয়ুল ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪, ১২:২৩ পিএম
রাজনীতিকে ‘সার্কাসে’ পরিণত করেছে টকশোগুলো

ঢাকা : ‘খেলা হবে’ বলে রাজনীতিকরা যে ‘অশ্লীল’ হাঁকডাক দেন, সেসব খেলার বেশিরভাগের মাঠ মূলত টিভির টকশোগুলো। ‘ধাড়ী’ টকাররা (সম্পাদকরাও!) অনএয়ারের আগেই সঞ্চালকদের কানে কানে বলেন, “খেলা আজ কোন দিকে? বল কার কোর্টে যাবে?” সঞ্চালকরা খেলার গতিপ্রকৃতি, ফলাফল জানিয়েই ফুঁ দেন বাঁশিতে। টিআরপির দিকে ‘শকুনের চোখে’ চরম মুহূর্তের অপেক্ষায় থাকেন প্রডিউসাররা।

স্ব-স্ব রাজনৈতিক দলের ন্যারেটিভের পক্ষে-বিপক্ষের আলোচনা ক্রমে যুক্তি, পাল্টাযুক্তির গণ্ডি পেরিয়ে তর্কবিতর্ক থেকে বাকযুদ্ধ, অবশেষে মল্লযুদ্ধে রূপ নেয়। ক্যামেরার পেছনে তখন তুমুল উত্তেজনা, হাততালি। টিআরপির পারদ লাফাতে শুরু করে। ভিউ বাড়তে বাড়তে অবশেষে ভাইরাল। আর ভাইরালে ভাইরালে বেড়ে যায় চ্যানেলের ব্র্যান্ড ভ্যালু।

দেশের কয়েক ডজন টিভি চ্যানেল গত কয়েক দশকে একই ফর্মুলায় হাজার হাজার, লাখ লাখ টকশো উৎপাদন ও বিক্রি করেছে, করছে। ব্র্যান্ডের ভিত্তিতে টকারদের আয়ও বেড়েছে বহুগুণ। সঞ্চালনায় যুক্ত হয়েছে দারুণ গ্ল্যামার। কোনো কোনো সঞ্চালক আবার রাজনীতিকদের অসাধারণ মেধার প্রমাণ হিসেবে হাজির করেছেন তাদের নাচ-গান-নাটকের মহড়া।  

ফলে ফ্যান্টাসিতে বুঁদ হয়ে থাকা আমজনতার কাছে দিনে দিনে রাজনীতি হয়ে উঠেছে ‘সার্কাস’। রাজনীতিকরা পরিণত হয়েছেন এক একজন ‘জোকারে’। এত এত আয়োজনের পরেও দেশে রাজনীতির গুণগত মানে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি টকশোগুলো। নব্বই দশকের বড় ধাক্কার পরও গণতন্ত্র ফেরেনি দলীয় রাজনীতিতে।  

বরং ‘বখে যাওয়া রাজনীতি’ আর ‘লিপসার্ভিসের’ নেতারা টকশোর মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন ‘স্পেশাল এন্টারটেইনমেন্ট’। কুড়িয়ে যাচ্ছেন তরুণ প্রজন্মের চরম ঘৃণা আর উপেক্ষা। বোদ্ধারা হয়তো বলবেন, গণমাধ্যমের দায়িত্ব রাজনীতির ফ্যাক্ট তুলে ধরা, গণতান্ত্রিকভাবে শুদ্ধ করে তোলার দায়িত্ব নয়। তাহলে প্রশ্ন, “হৃদয়ে বাংলাদেশ”, “অবিরাম বাংলার মুখ”, “সময়ের প্রয়োজনে সময়”, “সংবাদ নয় সংযোগ”- অসাধারণ এসব স্লোগানের শানে নুযুল কী?

প্রথাবিরোধী, বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, টেলিভিশন, নিকৃষ্ট জিনিসের এক নম্বর পৃষ্ঠপোষক, হিরোইন প্যাথেডিনের থেকেও মারাত্মক। মাদক গোপনে নষ্ট করে কিছু মানুষকে, টেলিভিশন প্রকাশ্যে নষ্ট করে কোটি কোটি মানুষকে।” তিনি  আরও বলেছেন, “বাংলাদেশের প্রধান মূর্খদের চেনার সহজ উপায় টেলিভিশনে কোনো আলোচনা-অনুষ্ঠান দেখা। ওই মূর্খমণ্ডলিতে উপস্থাপকটি হচ্ছেন মূর্খশিরোমণি।

কয়েক দশক আগের সেই পরিস্থিতি থেকে আমরা কতটা এগিয়েছি? যদি বলতে পারতাম, টকশোর মাধ্যমে হিংসা, প্রতিহিংসা, বিভেদ ভুলে দেশে রাজনীতির গুণগত মানে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটেছে।  আগের চেয়ে অনেক বেশি রুচিশীল, উদার, গণতন্ত্রমনা, সহনশীল, অহিংস হয়েছে।” সত্যি দারুণ স্বস্তি হতো।

লেখক : সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!