ঢাকা : বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি। এর আগে বিভাগীয় ও গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে সমাবেশ করতে চায় দলটি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে ৩০ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে বড় ধরনের শোডাউনের চিন্তাভাবনাও করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। কার্যত, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের আগেই বিএনপি রাজপথ ‘উত্তপ্ত’ করতে চায়। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে করণীয় ঠিক করতে গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন দিনের রুদ্ধদ্বার ধারাবাহিক বৈঠকে নেতাদের প্রায় সবাই ঘুরেফিরে আন্দোলনে যাওয়ার পক্ষেই মত দেন। তবে রাজপথে নামার আগে বিএনপিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো ‘আন্দোলনমুখী’ নেতৃত্বে পুনর্গঠনের দাবিও উঠে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভার্চুয়ালে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভাপতিত্ব করেন। তিন দিনের ধারাবাহিক বৈঠকে মোট ২৮৬ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ১১৮ জন নেতা বক্তব্য রাখেন বলে জানান দলের কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
জানা যায়, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বেগম জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ও সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০-১২ দফা খসড়া দাবি প্রণয়ন করা হয়।
শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে সিরিজ বৈঠকের মতামত নিয়ে আলোচনা হয়। একই সাথে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব, বিভিন্ন পেশাজীবী ও বিশিষ্টজনদের সাথে নতুন করে সিরিজ বৈঠকের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সে লক্ষ্যেই আমরা দলীয় নেতাদের মতামত নিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে আমরা কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাংগঠনিক জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের মতামত নেব।
সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে আমরা সামনে পথ চলতে চাই। এটাও ঠিক, আমাদের দাবিগুলো সরকার স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেবে না। এক্ষেত্রে আন্দোলনের বিকল্প নেই। আমরা আন্দোলনেই আছি। সময়মতো আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দেব।’
সূত্রমতে, তিন দিনের সিরিজ বৈঠকে বিএনপির সিনিয়র, মধ্যম ও তরুণ নেতাদের সবাই বলেছেন, আন্দোলন ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না। আন্দোলন ছাড়া নির্দলীয়, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হবে না।
বিএনপির হাইকমান্ডও ডিসেম্বরে আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছে, সামনে রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে। যেসব দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মাঠে থাকবেন না তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজপথে থাকা নেতাদেরই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ঠাঁই দেয়া হবে।
ধারাবাহিক বৈঠকে বিএনপি নেতারা হাইকমান্ডকে আরো জানান, দলকে আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তারা মনে করেন, এই দাবি আদায়ে কোনো রকম ছাড় দেয়া যাবে না। সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনে নামতে হবে।
বৈঠকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেন, ঘোষণা দিতে হবে, শেখ হাসিনার অধীনে ‘নো’ নির্বাচন, সংসদ বহাল রেখেও নির্বাচন হবে না। জোট ঠিক আছে। কিন্তু নির্বাচনী জোটের নেতৃত্বে বিএনপিকে থাকতে হবে। আমাদের কূটনীতিক দুর্বলতা আছে-এই দুর্বলতা কাটাতে উদ্যোগ নিতে হবে এবং কেন আমরা নির্বাচনে যাব না-তা বিদেশিদের বোঝাতে হবে।
ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, জোট ফ্রন্টের দরকার নেই। আমরা রাজপথে দাঁড়াতে পারলে সবাই আমাদের সাথে আসবে। যুগপৎ আন্দোলন করাটাই ভালো।
বিএনপির জলবায়ু বিষয়ক সহসম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই। আর আন্দোলনের জন্য দল এবং সংগঠনকে গোছাতে হবে। এরপর সর্বশক্তি নিয়ে আন্দোলনে নামতে হবে।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই নির্বাচনে যেতে হবে। এর ফয়সালা রাজপথেই করতে হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, সিরিজ বৈঠকে নির্বাচন সামনে রেখে দলের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকজন নেতা কথা বলেন।
এদিকে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এই কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগেই নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নাম চূড়ান্ত করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের আগেও রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। পরে রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপেও বসেছিল তারা। ওই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি।
জানা যায়, ক্ষমতাসীন সরকার নতুন আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠনের চিন্তাভাবনা করছে। বিএনপি বলছে, সার্চ কমিটিই হোক আর আইন করেই হোক এই সরকারের অধীনে সব নির্বাচন কমিশনই হবে আজ্ঞাবহ।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :