ঢাকা : নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
দলের কর্মকৌশল ঠিক করতে বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মতামত নিচ্ছে বিএনপি। তারই অংশ হিসেবে এবার দল সমর্থিত পেশাজীবী নেতাদের সাথে বৈঠক করেছে দলটি।
টানা দুইদিনের বৈঠকের প্রথম দিন শুক্রবার (৮ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন।
বৈঠকের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্য বলেন, খালেদা জিয়া কারাবন্দী, গণতন্ত্রের যে সঙ্কট, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এর থেকে উত্তরণে আপনাদের মতামত রাখার আহ্বান করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এ সময়ে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান।
প্রথম দিনের বৈঠকে ২০টি পেশাজীবী সংগঠন অংশ নেয়। এর মধ্যে ছিলো- জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, আইনজীবী ফোরাম, ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েশন, এগ্রিকালচার অ্যাসোসিয়েশন, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোট, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী ফোরাম, আইনজীবী সমিতি সুপ্রিম কোর্ট, আইনজীবী ফোরাম, ঢাকা জজ কোর্ট, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, এমবিএ অ্যাসোসিয়েশন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েশন, ডিপ্লোমা এগ্রিকালচার অ্যাসোসিয়েশন, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন, টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশন, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোট, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ফিজিওথেরাপিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ও ইউনানি আয়ুর্বেদি ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশন।
পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা তাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব লিখিত আকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে দেন। কয়েকটি সংগঠনের নেতারা সভায় বলেন, সরকারের পতন ঘটাতে একমাত্র লক্ষ্য হবে- ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন’। এই লক্ষ্যে কঠিন সংকল্প নিয়ে একদফা আন্দোলনে নামতে হবে।
আন্দোলন হবে এক দফার ভিত্তিতে। বাড়তি অন্য কোনো অপশন দেয়া যাবে না। আন্দোলনে একাধিক দাবি থাকলে মূল দাবি দুর্বল হয়ে যায়। নেতাকর্মীদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তখন বিক্ষিপ্ত হয়ে আন্দোলনের মহাস্রোতটি ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে হয়ে একসময় হারিয়ে যায়। মূল দাবি মানতে বাধ্য করাতে পারলে অন্যান্য দাবিসমুহ যথাসময়ে পূরণ হতে থাকবে।
তারা বলেন, অতীতের মতো বর্তমানেও গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপিকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।
বিএনপির নেতৃত্ব মেনে নিয়ে এই আন্দোলনের অংশীদার হতে চাইলে ছোট-বড় যেকোনো দলকে জোটে নেয়া যাবে। আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্যকেই রাজপথে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ থাকতে হবে। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। কোনো কিছুই বিক্ষিপ্তভাবে করা যাবে না। সকল অঙ্গ সংগঠনের ও সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে আলাদা আলাদা সেল তৈরি করতে হবে। আর এই একেকটি সেলের দায়িত্বে থাকবেন একেকজন কেন্দ্রীয় নেতা।
পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, ফজলুর রহমান, ডা: ফরহাদ ডালিম ডোনার, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মাসুদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট আবেদ রেজা, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. আব্দুস সালাম, ডা. আব্দুস সেলিম, ডাক্তার শহিদুল আলম, ডা. সিরাজুল ইসলাম, ডা. শফিকুল হায়দার পারভেজ, প্রকৌশলি মাহবুল আলম, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, সেলিম ভুঁইয়া, শামীমুর রহমান শামীম, অ্যাডভোকেট আবদুল জব্বার, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী, অ্যাডভোকেট আজিজুল ইসলাম খান, কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুন, কৃষিবিদ জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল ফারুক, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, অ্যাডভোকেট খন্দকার মোহাম্মদ হজরত আলী, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান আনিস, অ্যাডভোকেট তাসলিমা আক্তার, অ্যাডভোকেট রমিজ উদ্দিন আহমেদ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- প্রকৌশলী ইবনে ফজল সাইফুজ্জামান সেন্টু, প্রকৌশলী মুসলিম উদ্দিন, জাকির হোসেন, মওলানা দেলোয়ার হোসেন, অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান, অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন তরফদার, অধ্যাপিকা কামরুন নাহার লিজি, জাহানারা সিদ্দিকী, শেখ মনিরউদ্দিন, কামরুল হাসান সরদার, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা: ফখরুজ্জামান, জিয়াউল হায়দার পলাশ, সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, প্রকৌশলী ফখরুল আলম, প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন, রোকেয়া চৌধুরী বেবি, পারভিন কাওসার মুন্নী, সুমনা আক্তার স্মৃতি, শাহনাজ আক্তার রফিকুল ইসলাম, এ কে এম মুসা লিটন, মামুনুর রশীদ, কামরুজ্জামান কল্লোল, ডা. মির্জা লিটন, ডা. আমিনুল বারী কাকনসহ মোট ১০২ জন।
বৈঠকে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সাহলে প্রিন্স এবং সভা পরিচালনা করেন প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। সহযোগিতায় ছিলেন তথ্য গবেষণা সম্পাদক রিয়াজুদ্দিন নসু, সহদফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মনির হোসেন, বেলাল আহমেদ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দুদিনে ৪৬টি পেশাজীবী সংগঠনের নেতা ও প্রতিনিধিরা মতবিনিময়ে অংশগ্রহণ করবেন। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম, জি-৯, জিয়া পরিষদ, জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে, ডিইউজে, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, ইউ ট্যাব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ ২৬টি সংগঠনের ৯৭ জনকে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে সেপ্টেম্বরে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদকমণ্ডলী, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতার সাথে দুই দফায় ছয় দিন রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিএনপির হাইকমান্ড। এরপর আইনজীবীদের সাথেও ভার্চুয়াল বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সূত্র জানায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করা যায়-এই মুহূর্তে এটাই একমাত্র ভাবনা বিএনপির। এ লক্ষ্যে কর্মপন্থা ঠিক করতে একের পর এক বৈঠক করছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নীতিনির্ধারকরা। কর্মপন্থা চূড়ান্ত করার পর পরিস্থিতি বুঝে রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচি করবে বিএনপি। রাজপথে নামার আগেই নিরপেক্ষ সরকারের দাবিকে জনগণের দাবিতে পরিণত করতে চায় বিএনপি।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :