• ঢাকা
  • বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

তৃণমূল সামলাতে বেসামাল আ.লীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ৯, ২০২১, ০৪:০৫ পিএম
তৃণমূল সামলাতে বেসামাল আ.লীগ

ঢাকা : এক সপ্তাহের মধ্যে আবারো ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এবার মেহেরপুরে নিহত হয়েছেন দুজন।

এদিকে দ্বিতীয় দফা ইউপি নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল। ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দলটির ভেতর। ঘটনা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন জেলা ও উপজেলাপর্যায়ের নেতারাও।

তবে দলটির তৃণমূল নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার কারণে ঘটছে এসব ঘটনা।

তারা বলছেন, যতদিন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে ততদিন এরকম বিরোধ ঘটবে। যদিও তৃণমূল নেতাদের সামলাতে জেলার নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতারাও কাজ করছেন, তারপরও তৃণমূলে বিরোধ বাড়ছেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০০টি সংঘাতের ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন অসংখ্য। সেপ্টেম্বরের ৩০ দিন এবং অক্টোবরের প্রথম চার দিনে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনি সহিংসতায় অন্তত ১৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চলতি নভেম্বরে এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনি সংঘাতে মারা গেছে ৫ জন।

সর্বশেষ গতকাল সোমবার মেহেরপুরের গাংনীতে দুই মেম্বারপ্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে দুজন নিহত ও আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার ধলা গ্রামে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হচ্ছেন-ধলা গ্রামের জাহারুল ইসলাম (৫৭) ও সাহাদুল ইসলাম (৫৫)। নিহত দুজনই ইউপি মেম্বর আজমাইন হোসেন টুটুলের ভাই।

পুলিশ ও স্থানীরা জানান, উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) আজমাইন হোসেন টুটুলের সঙ্গে উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ধলা গ্রামের বাসিন্দা আতিয়ার রহমানের বিরোধ চলছিল। এবার আতিয়ার হোসেন ও আজমাইন হোসেন টুটুল একই ওয়ার্ডে মেম্বর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্রচার-প্রচারণা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ চাঙা হয়ে ওঠে। সোমবার সকালে উভয়পক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে ২০-২২ জন আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলুর রহমান জানান, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ভোরে নরসিংদীর সদরের প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের নেকজানপুর গ্রামে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হন।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে সারা দেশের ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ৯০০।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক সাধারণ সম্পাদক বলেন, যারা মেম্বার হওয়ার যোগ্য নন তারাও চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে চান। দলীয় প্রতীক দেওয়ার কারণেই এ ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। মার্কা দেওয়ার আগে এটা ছিল না।

তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আঞ্চলিক ও গোষ্ঠীগত নানা ফ্যাক্টর কাজ করে।

ধরেন, আমি চেয়ারম্যান আছি, আমি নৌকাটা পেলাম না; কিন্তু আওয়ামী লীগ করি‌। আরেকজন নিয়ে গেল নৌকা। তখন আমি কিন্তু আমার প্রভাব-প্রতিপত্তি রক্ষা করার চেষ্টা করব। এমন অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে নৌকা প্রতীক দেওয়ার কারণে। আমার মনে হয়, দলীয় প্রতীক ছাড়া তৃণমূলের এ নির্বাচন হওয়া উচিত।

একই মন্তব্য করেন তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাও। তৃণমূল আওয়ামী লীগের ওই নেতারা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনটা একেবারেই তৃণমূলের বিষয়। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে বিভেদ তৈরি হলে তা এক সময় গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সময় এর প্রভাব পড়ে। এ কারণে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়াই ভালো।

তাদের মতে, আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ২/৩ জনের বেশি প্রার্থী পাওয়া যেত না। এখন ১০/১৫ জন প্রার্থী হচ্ছেন। কারণ, প্রতীক পেলে তো জয় নিশ্চিত। অনেক সময় সঠিক প্রার্থীও নির্বাচন করে না। উপজেলা কমিটি প্রার্থী নির্বাচন করে পাঠিয়ে দেয় জেলায়, জেলা পাঠিয়ে দেয় সেন্ট্রালে। সেন্ট্রাল (কেন্দ্র) ইউনিয়নের প্রার্থী কীভাবে চিনবে?

অনেকে আবার তদবির করে টাকার বিনিময়ে সেন্ট্রাল থেকে প্রতীক নিয়ে আসেন। দেখা যায় তিনি আওয়ামী লীগের কেউ নন। এ কারণে জটিলতা আরো বাড়ে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!