• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১

ইউপিতে কৌশলে বিএনপি, ভোটে প্রার্থীদের চমক


নিজস্ব প্রতিনিধি ডিসেম্বর ২৯, ২০২১, ১২:৪৯ পিএম
ইউপিতে কৌশলে বিএনপি, ভোটে প্রার্থীদের চমক

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা : দেশের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলটি ভোট বর্জন করছে বিএনপি। তবে মাঠের চিত্র ভিন্ন। নতুন কৌশল নেয়ার পর তৃতীয় ধাপে ৯৬টি ইউনিয়ন পরিষদের পর চতুর্থ ধাপেও ৯৮টি ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপির নেতারা। তৃতীয় ধাপের তুলনায় চতুর্থ ধাপে ভোট হওয়া ইউনিয়নের সংখ্যা ছিল কম। সে হিসাবে বিএনপির নেতারা তৃতীয় ধাপের তুলনায় এবার আরও বেশি ভালো করেছেন।

এই বিজয়ী নেতারা ধানের শীষের বদলে ভোট করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। আবার সব ইউনিয়নে বিএনপির এই ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীরা’ ছিলও না। মোট কতগুলো ইউনিয়নে ছিল, সেটি জানাও সম্ভব নয় তাদের এই কৌশলের কারণে।

গত রোববারের ভোটে স্বতন্ত্র পরিচয়ে বিএনপির প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছেন রাজশাহী বিভাগে। এই বিভাগে মোট ২৬ জন বিএনপি নেতা জিতেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় এসেছে রংপুর বিভাগে ১৮ জন। ঢাকা বিভাগে বিএনপির ১৭ নেতা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। চট্টগ্রাম ও সিলেটে এই সংখ্যাটি ১৩ জন করে। এ ছাড়া ছয়জন আছেন ময়মনসিংহে, চারজন খুলনায় এবং বরিশালে একজন।

গত রোববার চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট শেষে যে ৭৮১টি ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণা করা হয়, তাতে দেখা যায়, বিএনপির এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জেলা হিসেবে সবচেয়ে ভালো করেছেন নওগাঁয়। এমনকি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ফরিদপুরেও চমক দেখিয়েছেন তারা।

বিভাগওয়ারি হিসাব করলে দেখা যায় স্বতন্ত্র পরিচয়ে বিএনপির প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভালো করেছেন রাজশাহীতে। উত্তরের আরেক বিভাগ রংপুরেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতা ইউনিয়নে জিতে এসেছেন।

বিএনপির প্রার্থীরা তৃতীয় সর্বোচ্চ ইউনিয়নে জিতেছেন ঢাকা বিভাগে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে সমানসংখ্যক ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন তারা।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের ভোটেও বিএনপি নেতাদেরও জয়

তবে ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে সাফল্য তুলনামূলকভাবে কম।

গত কয়েক বছরে বিএনপি জাতীয় ও স্থানীয় যেসব নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়েছে, তাতে তারা ভালো ফল করতে পারেনি। দলটির পক্ষ থেকে অবশ্য ভোট সুষ্ঠু না হওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তাদের সমর্থকদের ভোট দিতে দেয়া হয় না, প্রচারেও বাধা দেয়া হয়।

চলতি বছর পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনার পর বর্তমান সরকার আর নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো ভোটে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ফলে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তাদের কোনো প্রার্থী নেই।

তবে গত ২ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, বিএনপি আসলে এই নির্বাচন থেকে একেবারে দূরে নেই।

সেদিন ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করাটা সঠিক নয়। তাই বিএনপি এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না। তবে বিএনপি থেকে কেউ স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিলে সেখানে বাধা নেই।’

বিএনপির স্বতন্ত্র পরিচয়ে ভোটে অংশ নেয়ার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে চ্যালেঞ্জ করছেন বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার।

২০১২ সালে প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তৈমূরকে সমর্থন জানিয়েছিল বিএনপি। দলীয় প্রতীক ছাড়া ওই নির্বাচনে ভোটের আগের দিন তিনি সরে দাঁড়ান দৃশ্যত কোনো জোরালো অভিযোগ ছাড়াই। ধারণা করা হয়, আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানকে হারাতে একই দলের নেতা আইভীকে সুবিধা করে দিতেই তিনি এই কাজ করেছিলেন।

১০ বছর পর এসে আইভীর নৌকা ডোবাতে তৈমূর নেমেছেন হাতি প্রতীক নিয়ে।

বিএনপি দলীয় প্রতীক না নিলেও একই জেলায় দলের সব প্রার্থী একই ধরনের প্রতীক নিয়ে লড়ার চেষ্টা করেছেন। যেমন- নওগাঁয় ২৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ২০টিতে বিএনপির নেতারা আনারস আর ৬টিতে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ভোট করেছেন।

চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলাতে বিএনপির বিজয়ী তিন নেতাই লড়েছেন আনারস প্রতীক নিয়ে। আরও একাধিক জেলায় বিএনপির বিজয়ী প্রার্থীদের অনেকেই জিতেছেন আনারস প্রতীক নিয়ে।

বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীরও আটজন নেতা চেয়ারম্যান হয়েছেন রোববারের ভোটে। এদের মধ্যে চারজনই সিলেটের। বাকিদের মধ্যে একজন করে আছেন পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরার।

বিএনপি কেন দলীয় প্রতীকের বদলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একেক এলাকায় একেক প্রতীকে লড়াই করছে- এমন প্রশ্ন রাখা হয় দলের বর্ষীয়ান নেতা নজরুল ইসলাম খানের কাছে।

তিনি বলেন, ‘আপনারা একটা কথা কেন ভুল করেন বারবার৷ আমরা স্রেফ জানিয়ে দিয়েছি যে এবার আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না। আমাদের ওয়ে অফ ওয়্যার এখন ডিফ্রেন্ট। তাই কারা পাস করল আর কারা করল না- এই প্রশ্ন আমাদের জন্য না।’

যারা করছেন তারা তো বিএনপি নেতা। সে বিষয়ে কী বলবেন- এমন প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তারা ধানের শীষে ভোট করছেন? না, করেন নাই। বিএনপিকে যারা ভালোবাসেন তাদের সঙ্গে প্রতীক নিয়ে যারা জয়লাভ করবেন তাদের একটা নীতিগত পার্থক্য রয়েছে। দলের সমর্থক যারা স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন তাদের কোনো সাপোর্ট দেয়া হয়নি। কারণ আমরা আগেও বলছি এখনও বলছি- আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না।’

ফল সাজানো দাবি তৃণমূলের এক নেতার : রোববার নওগাঁয় ভোট হয়েছে মোট ২৬টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছেন ১১টি ইউনিয়নে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির নেতারা জিতেছেন ১০টিতে।

নওগাঁ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পৌরসভার মেয়র নজমুল হক সনিও এই ফলাফলে কিছুটা অবাক। তিনি  বলেন, ‘বেশ কিছু স্থানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের একটি রাজনৈতিক পলিসি। তারা বোঝাতে চাচ্ছে, নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হচ্ছে।’

জেলার ২৬টি ইউনিয়নেই বিএনপির এই কৌশলী প্রার্থী ছিল। স্বতন্ত্র পরিচয়ের বদলে যদি নেতারা ধানের শীষ নিয়ে অংশ নিতেন, তাহলে তৃণমূলের সমর্থকদের ভোট পেয়ে আরও বেশি ইউনিয়নে জিততে পারতেন কি না- এমন প্রশ্নে সনি বলেন, ‘আমি তো বললাম, বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হওয়াটা আওয়ামী লীগের আই ওয়াশ।’

তিনি বলেন, ‘যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হতো এবং ধানের শীষ প্রতীকে মনোনীত প্রার্থীরা দেশের সব ইউনিয়নে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত, তবে বিএনপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ে অবশ্যই বেশি এগিয়ে থাকত।’

বিএনপির সবচেয়ে বেশি জয় রাজশাহী বিভাগে : এই বিভাগে ফলাফল ঘোষিত হয়েছে মোট ১১৯টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে বিএনপি জয় পেয়েছে ২৬টিতে। জেলাগুলোর মধ্যে বিএনপি নেতারা সবচেয়ে বেশি ১০টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন নওগাঁয়।

বিজয়ীরা হলেন আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নে শেখ মুনজুরুল আলম, মুনিয়ারীতে সম্রাট হোসেন, পাঁচুপুর ইউনিয়নে খবিরুল আলম এবং হাটকালুপাড়ায় আফজাল হোসেন।

ধামইরহাট উপজেলায় বিজয়ীরা হলেন আগ্রাদ্বিগুণে ইসমাইল হোসেন ও খেলনা ইউনিয়নে আল হিল মাহমুদ চৌধুরী।

মহাদেবপুর উপজেলার সফাপুরে সামসুল আলম বাচ্চু, হাতুড় ইউনিয়নে এনামুল হক, ভীমপুরে রাম প্রসাদ ভদ্র এবং উত্তরগ্রাম ইউনিয়নে হাসান আলী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতে জয় পেয়েছেন দলটির নেতারা।

এর মধ্যে সদর উপজেলার এরুলিয়ায় ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আতিকুর রহমান আতিক, কাহালু উপজেলার বীরকেদায় ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সেলিম উদ্দিন, কালাই ইউনিয়নে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জোবাইদুল ইসলাম সবুজ, মালঞ্চা ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থক নেছার উদ্দিন জিতেছেন।

নন্দীগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়নে রেজাউল করিম কামাল, থালতা মাঝগ্রাম ইউনিয়নে বিএনপির কর্মী আব্দুল মতিন এবং ভাটগ্রাম ইউনিয়নে যুবদল নেতা আবুল কালাম আজাদ নির্বাচিত হয়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাঁচটির মধ্যে চারটি ইউনিয়নে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান। এর মধ্যে নাচোলে চারটির মধ্যে তিনটিতেই জিতেছেন দলটির নেতারা।

তারা হলেন সদর ইউনিয়নে নাচোল উপজেলা বিএনপির সদস্য সফিকুল ইসলাম, ফতেপুরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাদির আহম্মেদ এবং কসবা ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সদস্য জাকারিয়া আল মেহরাব।

ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়ায় জিতেছে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আফাজ উদ্দিন পানু মিঞা।

পাবনায় চতুর্থ ধাপের ভোটে জিতেছেন বিএনপির তিনজন নেতা। এরা হলেন সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নে জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ওমর ফারুক ও সাদুল্লাহপুরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল আলীম মোল্লা।

আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নে জিতেছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য ফারুক হোসেন।

এ ছাড়া রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নে বিএনপি কর্মী মিজানুর রহমান এবং জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নে বিএনপি নেতা তোজাম্মেল হক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

দ্বিতীয় অবস্থানে রংপুর বিভাগ : এই বিভাগে ফল ঘোষণা হয়েছে মোট ১২৬টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে ১৮টিতে জয় পেয়েছেন বিএনপি নেতারা। একক জেলা হিসেবে দিনাজপুরে সবচেয়ে বেশি ৬টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

এরা হলেন বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুরে তহিদুল ইসলাম মাস্টার, খামারপাড়ায় আবু বক্কর সিদ্দিক চৌধুরী, ৫ নং ভাবকির রবিউল আলম তুহিন, গোয়ালডিহিতে সাখাওয়াত হোসেন লিটন, ভেড়ভেড়ী রিয়াজুল ইসলাম বাবুল ও মোহনপুরে শাহিনুর রহমান চৌধুরী শাহিন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ঠাকুরগাঁওয়ে জয় পেয়েছেন বিএনপির চার নেতা। এরা হলেন সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নে জুলফিকার আলী ভুট্টো, জগন্নাথপুর ইউনিয়নে মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, রহিমানপুরে আব্দুল হান্নান হান্নু এবং জামালপুরে মো. মুস্তাক।

গাইবান্ধাতেও বিএনপির চার নেতা জয় পেয়েছেন।

এরা হলেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নে হাসানুর রহমান চৌধুরী ডিউক, রাজাহারে রফিকুল ইসলাম মাস্টার, কোচাশহরে জহুরুল হক জাহিদ ও হরিরামপুরে আজহারুল ইসলাম বিপ্লব।

রংপুরে তিনটি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপি নেতারা।

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কালুপাড়ায় শহিদুল হক মানিক, দামোদরপুরে শেখ আবু বকর সিদ্দিক ও গঙ্গাচড়ার উপজেলার আলমবিদিতরে মোকাররম হোসেন সুজন জিতেছেন।

রংপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ উদ্দিন বলেন, ‘নির্দলীয় ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ এলাকায় বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হব। তার প্রমাণ এই নির্বাচনে। দলীয় প্রতীক ছাড়াও আমাদের প্রার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় বিজয়ী হয়েছেন।’

এ ছাড়া কুড়িগ্রামে রাজারহাট উপজেলার উমর মজিদ ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপি সমর্থিত আহসানুল কবির।

সংখ্যায় তৃতীয় ঢাকা বিভাগ : এই বিভাগে রোববার ফল ঘোষণা হয়েছে মোট ১৫২ ইউনিয়নে। এর মধ্যে বিএনপির নেতারা জিতেছেন মোট ১৭টিতে। এর মধ্যে বিএনপির সবচেয়ে বেশি নেতা জিতেছেন কিশোরগঞ্জ জেলায়। সেখানে ৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন বিরোধী দলটির নেতারা।

এই ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই আবার কটিয়াদী উপজেলার। এরা হলেন: মুমুরদিয়া ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন সাবেরি, মসূয়ায় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক, লোহাজুড়ি ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি হায়দার এম রাজ্জাক মারুয়া, জালালপুর ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সদস্য রফিকুল আলম এবং বনগ্রাম ইউনিয়নে স্থানীয় নেতা জসিম উদ্দিন।

হোসেনপুর উপজেলার সাহেদল ইউনিয়নে জিতেছেন উপজেলা বিএনপির নেতা ফিরোজ উদ্দিন। তিনজন করে বিএনপি নেতা জিতেছেন মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরীতে জিতেছেন ইউনিয়নে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস আর আনসারি বিল্টু, বালিয়াখোড়ায় জিতেছেন ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য আওয়াল খান এবং সাটুরিয়া উপজেলার ফকুরহাটি ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপি কর্মী জিয়াউর রহমান।

রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নে কাজী শামসুদ্দিন, পাচুরিয়ায় মুজিবর রহমান রতন আর খানখানাপুরে জিতেছেন এ কে এম ইকবাল হোসেন।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহায় সিরাজুল ইসলাম, সাতৈরে রাফিউল আলম মিন্টু এবং রূপাপাতে মিজানুর রহমান মোল্যা ওরফে সোনা মিয়া জিতেছেন, যারা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।

টাঙ্গাইলের সদরের হুগরা ইউনিয়নে জিতেছেন নূর ই আলম তুহিন আর মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন আওলাদ হোসেন।

সিলেট বিভাগেও ভালো করেছেন বিএনপি নেতারা : এই বিভাগের চার জেলায় ভোটের ফল প্রকাশ হয়েছে মোট ৮১টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে বিএনপির প্রার্থীরা জিতেছেন মোট ১৩ টিতে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জে চারটি ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপির নেতরা। এরা হলেন: জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নে রফিক মিয়া ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নে মো. ছবাব মিয়া।

দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নে আলী আহমদ ও সরমঙ্গল ইউনিয়নে মোয়াজ্জেম হোসেন বিজয়ী হয়েছেন যারা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।

মৌলভীবাজারেও বিএনপির চার নেতা জয় পেয়েছেন। এরা হলেন: সদর উপজেলার কনকপুরে রুবেল উদ্দিন, খলিলপুরে আবু মিয়া চৌধুরী ও নাজিরাবাদ ইউনিয়নে আশরাফ উদ্দিন।

রাজনগর উপজেলার রাজনগর সদর ইউনিয়নে জিতেছেন জুবায়ের আহমদ চৌধুরী।

সিলেটে বিএনপির তিন নেতা জয় পেয়েছেন। এরা হলেন: বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নে মাহবুবুর রহমান, মুল্লাপুর ইউনিয়নে আব্দুল মান্নান এবং ভাদেশ্বর ইউনিয়নে শামীম আহমদ।

হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার লাখাই ইউনিয়নের আরিফ আহমেদ রুপন ও বানিয়াচংয়ের পৈলারকান্দিতে নাসির উদ্দিন জয় পেয়েছেন।

সিলেটের সমান জয় চট্টগ্রাম বিভাগে: এই বিভাগে মোট ১৫৫টি ইউনিয়নের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির ১৩ জন নেতা জয়ী হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কক্সবাজারে কোনো ইউনিয়নে জয় পাননি বিএনপির কোনো নেতা।

এক জেলায় সবচেয়ে বেশি বিএনপি নেতা জয় পেয়েছেন চাঁদপুরে। জেলায় ছয়জন নেতা চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন। এর মধ্যে শাহরাস্তি উপজেলার জয় পেয়েছেন তিনজন। এই উপজেলায় ভোট হয়েছে মোট ১০টিতে।

এর মধ্যে মেহের উত্তর ইউনিয়নে জিতেছেন জহিরুল ইসলাম, চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নে জিতেছেন আলাম বেলাল, চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নে জিতেছেন জোবায়েদ কবির বাহাদুর‌।

হাজীগঞ্জ উপজেলার বিএনপির বিজয়ী তিন চেয়ারম্যান হলেন বাকিলা ইউনিয়নের মিজানুর রহমান, কালচোঁ দক্ষিণ গোলাম মোস্তফা ও পশ্চিম বড়কুল ইউনিয়নে নুরুল আমিন হেলাল।

কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরে ২টি করে ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপির নেতারা। কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ৮ নং মালাপাড়ায় ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন ও ৫ নং দুলালপুর ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনিছুর রহমান ভূইয়া রিপন।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপির ওহিদুর রহমান আর কুশাখালীতে জিতেছেন কালা উদ্দিন মানিক। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ফেনীতে একটি করে ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপির নেতারা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম।

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপি নেতা জহিরুল আলম জহির। নোয়াখালী সদর উপজেলার পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়নে জিতেছেন ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আলম।

ময়মনসিংহ বিভাগে জয় ৬টিতে : এই বিভাগে মোট ৫৩টি ইউনিয়নে ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির নেতারা জিতেছেন মোট ৬টিতে। চারটি জেলার মধ্যে শেরপুরে সবচেয়ে বেশি তিন বিএনপি নেতা জিতেছেন ভোটে। এরা হলেন শ্রীবর্দী উপজেলার ৪ নম্বর তাতিঁহাটি ইউনিয়নে আব্দুর রউফ মিয়া, ৭ নম্বর ভেলুয়া ইউনিয়নে আব্দুল ক‌রিম ও ৯ নম্বর কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নে ফি‌রোজ খান নুন।

ময়মনসিংহ জেলায় জিতেছেন বিএনপির দুই নেতা। এরা হলেন: গৌরীপুর উপজেলার ১ নম্বর মইলাকান্দা ইউনিয়নের রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ ও ৩ নম্বর অচিন্তপুর ইউনিয়নের জায়েদুর রহমান। নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নে জিতেছেন আব্দুর রউফ স্বাধীন। এই বিভাগের অন্য জেলা জামালপুরের যে ১২টি ইউনিয়নে রোববার ভোট হয়েছে, তাতে বিএনপির কেউ জিততে পারেননি।

খুলনা বিভাগের বিজয়ীরা : এই বিভাগে মোট ৭৮ ইউনিয়নে ফল ঘোষিত হয়েছে। এর মধ্যে মোট চারটি ইউনিয়নে বিএনপির নেতারা জিতেছেন। এই চারজনের মধ্যে দুইজন আবার সাতক্ষীরা বিএনপির নেতা। এরা হলেন: শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নে মাসুদুল আলম ও পদ্মপুকুরে আমজাদুল ইসলাম।

বিজয়ী অন্য দুজন হলেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নে জহুরুল হক এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়নে হাফিজুর রহমান হাফিজ।

বরিশাল বিভাগে শুধু একজন : এই বিভাগে রোববার ভোট হয়েছে মোট ১৭টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে বরিশাল ও ভোলা জেলায় বিজয়ীদের কেউ বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত নন। পটুয়াখালীতে জিতেছেন একজন। তিনি হলেন কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের মো. মজিবর রহমান।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!