• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

উত্তাপ ছড়াচ্ছে নাসিক নির্বাচন


নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১০, ২০২২, ১০:৪৪ এএম
উত্তাপ ছড়াচ্ছে নাসিক নির্বাচন

নারায়ণগঞ্জ : আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। মেয়র পদে কে বিজয়ী হবেন তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিনা হায়ৎ আইভী ও তৈমুর আলম খন্দকার ভোটের মাঠ চোষে বেড়াচ্ছেন। প্রচারণায় গিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন তারা। উভয়ই নির্বাচনে জয় পেতে আশাবাদী।

আগামী ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। প্রচার-প্রচারণায় জমে উঠেছে এই নির্বাচন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন আইভী।

অন্যদিকে বিএনপি দলগতভাবে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতা তৈমুর আলম খন্দকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে হাতি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।

এছাড়া মেয়র পদে বেশ কয়েকজন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুইজনের মধ্যেই। তাদের মতো অন্য প্রার্থীরাও সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে বেড়াচ্ছেন। জনগণকে দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি।

নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে সাত প্রার্থী লড়াই কর‌ছেন। তারা হ‌লেন- আওয়ামী লীগ ম‌নো‌নীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী (নৌকা), খেলাফত মজলিসের প্রার্থী এবিএম সিরাজুল মামুন (দেওয়াল ঘড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভো‌কেট তৈমুর আলম খন্দকার (হাতি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মোহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ (হাত পাখা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন (বট গাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ রাশেদ ফেরদৌস (হাত ঘড়ি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম বাবু (ঘোড়া)। এছাড়াও সি‌টি কর‌পো‌রেশ‌নের ২৭টি সাধারণ ওয়া‌র্ডে এবং ৯টি সংর‌ক্ষিত নারী ওয়া‌র্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন নির্বাচনি মাঠ চ‌ষে বেড়া‌চ্ছেন।

স‌রেজ‌মি‌নে গি‌য়ে দেখা গে‌ছে, নাসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাড়া-মহল্লার অলিগলি ও চায়ের দোকানগুলোতে চলছে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীরা ততই নির্বাচনি মাঠে দিন-রাত সময় দিচ্ছেন। ভোটারদের সমর্থন আদায়ে দোকানপাট ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। তবে এলাকার রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়নে কাজ করবেন এমন ব্যক্তিকেই ভোট দিতে চান ভোটাররা।

ভোটের প্রচারণায় মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তৈমুর আলম খন্দকার বাগ যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছেন। করছেন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ।

আইভীর অভিযোগ, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের প্রার্থী। তার এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৈমুর বলেন, আইভীকে নাকি কেউ সাপোর্ট দেয় না। এখানে আমি কী করব! তাদের এমপি ও দলের নেতাকর্মীরা তাকে সাপোর্ট না দিলে সেখানে আমার করার কিছু নেই। সিটি করপোরেশনে অতিরিক্ত তিন-চার গুণ ট্যাক্স দিতে গিয়ে তো তারাও ভুক্তভোগী।

নৌকার প্রার্থী আইভী দাবি করেন, ভোটের মাঠ তার দখলে রয়েছে। তিনি বলেন, সারা নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা আমার কথা বলেন। আমার বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার চালানো হয়েছে, ধর্মীয় ব্যাপারে উসকানি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোটাতেই কাজ হবে না।

সংসদ সদস্য শামীম ওসমান প্রসঙ্গে আইভী বলেন, তিনি (শামীম ওসমান) আমার দলের লোক। তিনি সমর্থন দিলে দেবেন, না দিলে না দেবেন। তিনি আমাকে অপছন্দ করতেই পারেন। এটা কোনো ব্যাপার না। আমার কিছু করার নেই, জনগণের রায়ই রায়। তারা ষড়যন্ত্র করবে, কিন্তু তা ধ্বংস করে দেবে জনগণ।

তিনি বলেন, আমি জনগণের জন্য কাজ করেছি। এখানে রাস্তা ড্রেন হয়েছে মাঠ হয়েছে। একটা কাজ বাকি সেটা হল কদমরসূল ব্রিজ। এই প্রজেক্টটিও পাস হয়েছে। করোনার কারণে পিছিয়ে গেলেও এবার এটার কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এই কদমরসূল ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। গতকাল সকালে বন্দর এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণার শুরুতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

একই দিন নারায়ণগঞ্জের ১২ নং ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে নৌকার নির্বাচন করার জন্য হুমকি দিচ্ছে।

তিনি বলেন, পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে হুমকি দিচ্ছে নৌকার নির্বাচন করার জন্য। সরকারদলীয় প্রার্থীর অবস্থা এতোটাই করুণ যে, পুলিশ দিয়ে তার দলের লোকজনকে মাঠে নামাতে হচ্ছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মানুষ ‘ভয়ে মরে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর’ এই নীতিতে অটল থাকবে।

তিনি আরো বলেন, আমার বক্তব্য স্পষ্ট।  ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী তিন বার বলেছেন তৈমুর জেতার মতো ক্যান্ডিডেট। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমি বলি প্রধানমন্ত্রীও নারায়ণগঞ্জের ভোটার হলে আমাকেই ভোট দিতেন। জনগণের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততাকে তিনি মূল্যায়ন করতেন। আমি নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত। আমি কোনো দলের ব্যানারে দাঁড়াইনি। আমাকে মানুষ দলমত নির্বিশেষে সমর্থন দিচ্ছে। পত্রিকায় আপনারা দেখেছেন জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ অনেকেই আমার সঙ্গে ছিলেন।

তৈমুর বলেন, স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করায় মানুষ অভ্যস্ত না। এখানে নির্বাচনটা হচ্ছে নাসিকের ব্যর্থতা ও ঠিকাদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এখনও সেই ঠিকাদাররা নির্বাচন করছে। আইভীর আশপাশে দেখেন ঠিকাদাররা প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, জনগণ এবার ইসলামী শক্তিকে বিজয় করার জন্য বদ্ধপরিকর। হাতপাখার যেভাবে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারলে বিজয় আমাদের হবে ইনশাআল্লাহ।

নির্বাচন সুষ্ঠু ও নির‌পেক্ষ কর‌তে প্র‌য়োজনীয় প্রদ‌ক্ষেপ নেওয়া হ‌য়ে‌ছে ব‌লে জানিযেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার। তি‌নি ব‌লেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার কাজ চালানোর জন্য ১৮ দিন সময় দিয়েছে নির্বাচন কমিশন, যা বিগত নির্বাচনের চেয়ে দুদিন বেশি। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। নির্বাচনে জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে। কেউ নির্বাচনি আচরণ লঙ্ঘন কর‌লে ক‌ঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হ‌বে।

উল্লেখ্য, এবা‌রের নির্বাচ‌নে সি‌টি কর‌পো‌রেশ‌নের ২৭টি সাধারণ ওয়া‌র্ডে এবং ৯টি সংর‌ক্ষিত ওয়া‌র্ডে মোট ১৮৭টি ভোট কে‌ন্দ্রে মোট ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ ভোটার তা‌দের ভোটা‌ধিকার প্র‌য়োগ কর‌বেন। এর ম‌ধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ জন, ম‌হিলা ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪ জন। এ নির্বাচনে ইভিএমএ ভোট দিবেন ভোটাররা।

এর আগে, গত ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দলীয় নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেন ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। ওই নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে প্রায় ৮০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন সেলিনা হায়াৎ আইভী।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!