• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

ইউপিতে বিএনপির ২৯১ চেয়ারম্যান


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৩, ২০২২, ১২:১৯ পিএম
ইউপিতে বিএনপির ২৯১ চেয়ারম্যান

ঢাকা : ভোট বর্জন করে দলীয় প্রতীকের বাইরে নির্বাচন করে এ পর্যন্ত পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিএনপির ২৯১ জন তৃণমূল নেতা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

সর্বশেষ পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দলটির ৮৩ জন তৃণমূল নেতা চেয়ারম্যান হয়েছেন।

এর আগে দ্বিতীয় ধাপে বিএনপির ১৪ জন, তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৯৬ জন, চতুর্থ ধাপে বিএনপির ৯৮ জন তৃণমূল নেতা চেয়ারম্যান হয়েছেন। তবে প্রথম ধাপে বিএনপির কোনো তৃণমূল নেতা নির্বাচিত হতে পারেননি।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে ৬৬২টি ইউনিয়নে নৌকার ৩০৮, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১৯০, বিএনপি ৮৩ এবং অন্যান্য ৮১ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে।

এরপর মোট তিনটি ধাপের নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের আগে ভোটে দাঁড়ানোয় বিএনপি বেশ কয়েকজন নেতাকে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। কারণ উল্লেখ না করলেও এটি বিএনপির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জের কারণে, সেটি নিশ্চিত করেছেন নেতারা।

পঞ্চম ধাপে ৫ জানুয়ারিতে ৭০৮টি ইউনিয়নে ভোটের তফসিল ঘোষণা হয়। তবে বেশ কিছু ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ভোট হয় ৬৬৪টি ইউনিয়নে ভোট হয়। এর মধ্যে ২টি ইউনিয়নে ফলাফল স্থগিত হয়, বাকি ৬৬২টি ইউনিয়নে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩০৮টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হয়েছেন নৌকা নিয়ে লড়াই করা আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া নেতারা জিতেছেন ১৯০ ইউনিয়নে।

বাকিদের মধ্যে বিএনপির রাজনীতি সম্পৃক্ত ৮৩ জন ছাড়া অন্যদের মধ্যে জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত ১৩ জন, জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে জড়িত ৪ জন আর ১৯ জন বিভিন্ন দলের রাজনীতি করেন, কেউ কেউ কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।

বিএনপির রাজনীতিতে জড়িতরা সবচেয়ে ভালো করেছেন রাজশাহী বিভাগে। সেই বিভাগে দলটির সঙ্গে জড়িত ২০ জন পেয়েছেন জয়।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ ইউনিয়নে জয় এসেছে সিলেট বিভাগে, রংপুর বিভাগে জয় এসেছে ১৫টিতে, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ টিতে, ঢাকা বিভাগে ৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে জয়ী ৬ জন এবং খুলনা বিভাগে জয়ী ৪ জন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। বরিশাল বিভাগে বিএনপির কেউ জিততে পারেননি।

চতুর্থ ধাপের নির্বাচনেও বিএনপির নেতারা সবচেয়ে বেশি ভালো করেছিলেন উত্তরের দুই বিভাগ রাজশাহী ও রংপুরে। ওই ধাপে সিলেট বিভাগেও তারা দারুণ করেছিলেন।

রাজশাহী বিভাগে ভোট হয়েছে মোট ১২২টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে ২টিতে ফল ঘোষণা স্থগিত আছে। বাকিগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক জয় পেয়েছে ৬১টিতে। দলের বিদ্রোহী নেতারা জিতেছেন ৩৫টিতে আর বিএনপির নেতারা ২০ ইউনিয়নে এবং ৪টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন জামায়াত নেতারা।

এর মধ্যে বগুড়ায় সবচেয়ে বেশি ৬টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্তরা। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ৫ জন পেয়েছেন জয়। জয়পুরহাটের ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটিতেই জয় পেয়েছেন বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যেও তিনটিতে জয় পেয়েছেন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িতরা। নওগাঁয় বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ২ জন পেয়েছেন জয়। নাটোরের ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে নলডাঙ্গা উপজেলার বিপ্রবেলঘরিয়ায় জিতেছেন বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান আলী। এই বিভাগের বাকি দুই জেলা পাবনা ও সিরাজগঞ্জে বিএনপি সংশ্লিষ্ট কেউ জয় পাননি।

সিলেটে ১৭ ইউনিয়নে ভোট হয়েছে মোট ৭৫টি ইউনিয়নে। অন্যগুলোর মধ্যে নৌকা জিতেছে ২৯টিতে। ২১ ইউনিয়নে জিতেছেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপির ১৭ জন, জামায়াতের ৪ জন জয়ী হয়েছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির ১ জন, জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের ২ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আর নির্দলীয় ২ জন প্রার্থী এবার জয় পেয়েছেন। হবিগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ৭টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপি নেতারা। মৌলভীবাজারে বিএনপির রাজনীতিতে জয় পেয়েছেন ৬টি ইউনিয়নে।

উত্তরের বিভাগ রংপুরে ফল ঘোষিত হয়েছে মোট ৬৮ ইউনিয়নে। এর মধ্যে নৌকা জয় পেয়েছে সর্বোচ্চ ৩৩ ইউনিয়নে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া বিদ্রোহীরা জয় পেয়েছেন ১৪টিতে। বিএনপির রাজনীতিতে জড়িতরা জয় পেয়েছেন ১৫টিতে। বাকিগুলোর মধ্যে জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িতরা ২টিতে, জাতীয় পার্টির রাজনীতে জড়িতরা ৩টিতে এবং একটিতে জয় পেয়েছেন এমন একজন, যিনি রাজনীতিতে জড়িত নন।

বিএনপির তৃণমূলের নেতারা একক জেলা হিসেবে সর্বোচ্চ ৬টিতে জয় পেয়েছেন দিনাজপুরে। নীলফামারী ও কুড়িগ্রামে তিনটি করে ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপির তৃণমূল নেতারা।

পঞ্চগড়ের দুটি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপির নেতারা। গাইবান্ধায় বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত কেউ জয় পাননি।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১৩৫টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭০টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের বিদ্রোহী নেতারা জয় পেয়েছে ৪০ ইউনিয়নে। বিএনপির নেতারা ১৫টিতে, একটিতে জামায়াত নেতা, ৬টিতে নির্দলীয় প্রার্থী এবং বিভিন্ন দলের সঙ্গে সম্পৃক্তরা জয় পেয়েছেন ৪টিতে। এর মধ্যে বিএনপি সংশ্লিষ্টরা সবচেয়ে বেশি ৭টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন চাঁদপুরে। এদের মধ্যে ৬ জনই ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। কুমিল্লায় জয় পেয়েছেন দুই জন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপিসংশ্লিষ্ট দুই জন জয় পেয়েছেন।

ঢাকা বিভাগে ১৪৪টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৭টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছে নৌকা। ৩৫ ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। ৭টি ইউনিয়নে বিএনপির নেতারা।

আর চার জেলার ৪৬ ইউনিয়নে ভোট হয়েছে দলীয় প্রতীক ছাড়া। এর মধ্যে তিনটিতেই জয় এসেছে মানিকগঞ্জে। টাঙ্গাইলে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত দুই জন পেয়েছেন জয়।

ময়মনসিংহ বিভাগে ভোট হয়েছে মোট ৬১ ইউনিয়নে। এর মধ্যে নৌকা জয় পেয়েছে ৩১টিতে। দলের বিদ্রোহীরা জয় পেয়েছে ২৩টিতে। ৬ ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপির রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা আর একটিতে নির্দলীয় প্রার্থী। এই ৬টির মধ্যে তিনটি নেত্রকোণার এবং তিনটি শেরপুরের।

খুলনা বিভাগে ভোট হয়েছে মোট ৫২ ইউনিয়নে। এই বিভাগে নৌকা মার্কা জয় পেয়েছে ২৪ ইউনিয়নে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নেতারা জয় পেয়েছেন ২১টিতে। বিএনপি জয় পেয়েছে ৪টিতে, দুটিতে জামায়াত এবং একটিতে অন্যান্য। এই চার জনের মধ্যে তিন জনই কেশবপুর উপজেলার।

এছাড়া ৬টি ইউনিয়নে ভোট হয়েছে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুরে। এর মধ্যে ৩টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ, একটিতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও ২টিতে নির্দলীয় প্রার্থী।

চলতি বছর পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনার পর বর্তমান সরকার আর নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো ভোটে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ফলে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তাদের কোনো প্রার্থী নেই।

তবে গত ২ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, বিএনপি আসলে এই নির্বাচন থেকে একেবারে দূরে নেই।

সেদিন ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করাটা সঠিক নয়। তাই বিএনপি এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না। তবে বিএনপি থেকে কেউ স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিলে সেখানে বাধা নেই।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!