ঢাকা : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে মাটি ও মানুষের সংগঠন আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখনই ক্ষমতা দখলের জন্য পেছনের দরজা ব্যবহার করেনি, বরং তারা সব সময় নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে।
তিনি বলেন, আমরা ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছি। আওয়ামী লীগ কখনো পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি বা এটি কোনো মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে তৈরি করা কোনো সংগঠনও নয়।
বিভিন্ন দল ও ব্যক্তি বিএনপির সাথে গাঁটছড়া বাঁধছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেছেন, একটা দলে তো নেতৃত্ব থাকতে হয়। তাদের নেতৃত্ব কোথায়? দুইজনই সাজাপ্রাপ্ত। একটা তো ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, দুর্নীতি, এর পরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এই বিভিন্ন অপকর্মের জন্য সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের অর্থ আত্নস্বাৎ করে আরেকজন সাজাপ্রাপ্ত।
এই নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপি, আর বিএনপির সাথে আবার গাঁটছড়া বাঁধছে দেখলাম ডান, বাম, অতি বাম, অমুক, সমুক, মানে বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানী, গুণী অনেকেই সংযুক্ত হচ্ছেন।
শনিবার (৭ মে) বিকেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তার সরকারী বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি।
আজকে নির্বাচনে যতটুকু উন্নতি হয়েছে সেটা আওয়ামী লীগই করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা আমাদেরই দাবি ছিল, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটা তালিকা ও এখনকার ইভিএম। অর্থাৎ মানুষ শান্তিতে ভোট দেবে, সাথে সাথে ভোটের রেজাল্ট পাবে। যাতে মানুষের ভোটের অধিকারটা বলবৎ থাকবে।
তিনি আরো বলেন, মানুষ যদি আমাদের ভোট দিতে না চায়, দেবে না। আমরা আসবো না ক্ষমতায়। কিন্তু জনগণের ভোট প্রয়োগ সত্ত্বেও অতীতে বারবার চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনা থেকে দূরে রাখা হয়েছে। এই সংগঠন মাটি ও মানুষের সংগঠন এবং এই সংগঠন মাটি ও মানুষের জন্যই কাজ করে তা আজকে প্রমাণিত।
ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বারবার ক্ষমতায় বসানোয় দলের পক্ষে দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে গত ১৩ বছরে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে কারণ আওয়ামী লীগ এদেশের জনগণ ও এই মাটির দল।
তিনি বলেন, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান আর্মি রুলস এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে এ দেশে ভোট কারচুপির সংস্কৃতিটা শুরু করে। আর এভাবেই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে সব সময় ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। ভোটের পার্সেন্টেজের দিক থেকে আওয়ামী লীগ কখনো পেছনে ছিল না। কিন্তু বার বার ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে পেছনে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। আর শক্ররা কখনো ক্ষতি করতে পারে না যদি ঘরের শক্র বিভীষণ না হয়, এটা হলো বাস্তবতা। আর আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে এটা সব সময়ই দেখা গেছে। যেটা সব থেকে দুর্ভাগ্য ও দুঃখজনক বিষয়।
শত ষড়যন্ত্রের মাঝেও আওয়ামী লীগ এগিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংগঠনকে সুসংগঠিত করা আর ক্ষমতায় গেলে দেশের জন্য কি কাজ করবো সেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেই আমরা কাজ করেছি। কেননা জাতির পিতার যে ইচ্ছে এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো- তা আমাদের পূরণ করতে হবে।
’৯৬ সালে সরকারে আসার পর জাতির পিতার গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচির পদাংক অনুসরণ করে ঘরবাড়ির পাশাপাশি গৃহহীণদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় পরিবারে পাঁচজন সদস্য ধরা হলেও প্রায় ৪৫ লাখ লোককে আশ্রয় প্রদান করা হয়েছে। কোথাও খাস জমি না পেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে এখন জমি কিনেও ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। এই কাজ চলমান রয়েছে এবং ঈদের আগে আমরা প্রায় ৩৩ হাজার ঘর উপহার দিয়েছি। জুলাই মাসে আরো ৩৫ হাজার ঘর আমরা দিতে পারবো। আর বাকি থাকবে ৪০ হাজারের মতো। সেটা করতে পারলে ভূমিহীনদের যে হিসেবে আমরা নিয়েছিলাম সে অনুযায়ী আমরা পুনর্বাসন করতে পারবো।
তিনি এসময় তালিকার বাইরেও কোথাও কোনো গৃহহীন বা ভূমিহীন-গৃহহীন রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করতে দলের নেতা-কর্মীদের আহবান জানান। তাহলে সরকার তাদের পুনর্বাসন করবে। কেননা সরকার চায় বাংলাদেশে একজন মানুষও আর ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না।
আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় উল্লেখ করে দলের সভাপতি বলেন, যাদেরকে যুদ্ধ করে আমরা পরাজিত করেছি সেই পরাজিতদের পদাংক আমরা অনুসরণ করবো না। যদিও জাতির পিতাকে হত্যার পর সে রকম একটি মডেল হিসেবেই এদেশকে তৈরি করার ষড়যন্ত্র হয়। আমরা আমাদের স্বকীয়তা-ঐতিহ্য কৃষ্টি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবেই বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো।
ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় যেতে চান কিন্তু জনগণের ভোট চাইতে পারেন না বা সে সামর্থ যাদের নেই, সংগঠন করার সামর্থ নেই কিন্তু আকাঙ্খা আছে তারাই চাইবে এদেশের অস্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে। কারণ সাসরিক জান্তার পকেট থেকে ক্ষমতায় বসে যে সব দল গঠন হয় তারা গণতন্ত্র দিতেও পারে না, চর্চাও করে না, বোঝেও না।
যারা খুনের রাজনীতি করে, মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার রাজনীতি করে তাদের সেই রাজনীতি মানুষকে পূণরায় স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বিএনপির নেতৃত্ব শূণ্যতার দিকে আবারো ইঙ্গিত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা দলেরতো একটা নেতৃত্ব থাকতে হয়। তাদের নেতৃত্ব কোথায়, দুজনেই সাজাপ্রাপ্ত। একজন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, দুর্নীতি, ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন অপকর্মের জন্য সাজাপ্রাপ্ত। আরেকজন এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত। এই নেতৃত্ব নিয়ে চলছে বিএনপি। আর এরসাথে ডান, বাম, অতি বাম এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা অনেকে গাঁটছাড়া বাঁধতে চেষ্টা করছে। একটা অলটারনেটিভ থাকা উচিত। তারা যদি সুসংগঠিত হতে পারে হোক। তবে, তারা কেবল দেশের বদনাম বিদেশিদের কাছে করে বেড়ায়, যেন তাদের আকাঙ্খা বিদেশ থেকে কেউ এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও এখনকার বাংলাদেশ আর সেটা নয়।
পবিত্র ঈদুল ফিতরে নির্বিঘ্নে বাড়ি যাওয়া এবং ঈদ শেষে পুনরায় মানুষ নির্বিঘ্নে ফিরতে পারায় তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা বাংলাদেশের মানুষের একটা চমৎকার বিষয় যে, যেখানেই থাকুক ঈদে বাড়ি যায় এবং আত্মীয়-পরিজনের সাথে ঈদ উৎসব উদযাপন করে। আর এই উৎসব উদযাপনের মানসিকতাটা পৃথিবী থেকে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের বাঙালি সমাজে সেটা এখনো রয়েছে এবং সবাই ছুটে যায় নিজেদের মাটির টানে।
তিনি বলেন, এর ফলে গ্রামে যেমন অর্থ সরবরাহটা বাড়ে, তেমনি মানুষের স্বচ্ছলতাও বৃদ্ধি পায় এবং গ্রামেরও কেনাবেচাটা যথেষ্ট ভাল হয়। আর আল্লাহর রহমতে এখন আর সে দিন নেই যে দারিদ্র্যতার জন্য মানুষ ঈদ উদযাপন করতে পারে না। আর এভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও চাঙ্গা করে তোলাই সরকারের লক্ষ্য অর্থাৎ তৃণমূল থেকেই উন্নয়ন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের কার্যকরী কমিটির সব সদস্যকে বলবো আপনাদের নিজ এলাকার যেমন খোঁজ রাখতে হবে, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে এবং এই সংগঠনকে যারা ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবে তাদেরকেও সেভাবে তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ভালোবেসে, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করলে পরে সে নেতৃত্বই সাফল্য আনতে পারে।
রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তারা যে সরকার উৎখাত করতে চায়, আমাদের অপরাধটা কি? কোথায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি? দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছেছে, মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যতা ৪০ ভাগ থেকে ২০ভাগে নামিয়ে এনেছি। এবারের সেন্সাস রিপোর্টেও আপনারা দেখবেন এ্ই দারিদ্র্যতা বা হতদরিদ্র এমনভাবে কমে গেছে যে বিশ্বও বিস্মিত হবে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি হলেও সরকার কার্যকর ও তড়িৎ পদক্ষেপে দেশে সেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে ১০ শতাংশ এবং ইউরোপের কোনো কোনো দেশে ১৭ শতাংশ মূল্যস্ফীতি দেখা গেছে, আমেরিকার ধারণা তাদেরও আগামীতে মূল্যস্কীতি ১০ শতাংশ হবে। জিনিসপত্র, ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে না। লন্ডনে তেল কেনায় রেশনিং সিস্টেম চালু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যুদ্ধের ফলে পরিবহন ভাড়া যেমন বেড়েছে তেমনি আমদানির ওপরও বিরূপ একটা প্রভাব পড়েছে। সবকিছু আমরা উৎপাদন করতে পারি না কিছু কিছু দ্রব্য বাইরে থেকে আনতে হলেও সরকার অনেক কিছুরই এখন দেশে উৎপাদন শুরু করেছে। যেমন পেঁয়াজের কান্না (অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি) আর কাঁদতে হবে না।
তিনি এ সময় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। কেননা বিশ্বব্যাপী যে মন্দা তা আরো বাড়তে পারে এবং আমাদের দিকেও আসতে পারে। কাজেই এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে।
তার সংগঠন নিয়মিত সম্মেলনের আয়োজন করে এবং আবারো সম্মেলনের সময় ঘনিয়ে এসেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সংগঠনের ঘোষণাপত্রটাকে সময়োপযোগী করতে হবে। কারণ ইতোমধ্যেই আগের অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :