• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

কেমন আছেন আ.লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা


নিজস্ব প্রতিনিধি মে ১৮, ২০২২, ১১:২৩ এএম
কেমন আছেন আ.লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও মতিয়া চৌধুরী

ঢাকা : তাদের বয়স ৮০ ছুঁই ছুঁই। বয়স বাড়লেও রাজনীতিতে সক্রিয়তা ধরে রেখেছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। শারীরিক অসুস্থতা বাধা না হয়ে দাঁড়ালে সরকারি দায়িত্ব এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকেই প্রাধান্য দেন তারা। রাজনীতির পাশাপাশি দু’একজন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও নিজেদের ব্যস্ততা বাড়িয়েছেন।

যদিও শারীরিক অসুস্থতা তাদের চলাফেরাকে সীমিত করে ফেলেছে। তবু তারা যথাসাধ্য দলে এবং সরকারে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করেন। রাজনীতির ফাঁকে তারা বই পড়েন, লেখালেখি করেন। এলাকায় ভোটারদের খোঁজখবর রাখেন। রাজনীতির ফাঁকে তারা বই পড়েন, লেখালেখি করেন। নিজের কাজ নিজে করাই তাদের দৈনন্দিন কর্মসূচি।

বর্তমান শাসক দলের এরকম চার নেতার সাম্প্রতিক জীবনযাপনের খোঁজ নেওয়া হয়েছে। এরা হলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী : বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে অধিকারী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদ ছাড়াও জাতীয় সংসদের উপনেতার পদটি তার। তিনি বর্তমানে ছোট ছেলে শাহতাব আকবর (লাবু) কে সঙ্গে নিয়ে ধানমণ্ডিতে থাকেন। ১৯৩৫ সালে জন্ম নেয়া প্রবীণ এ রাজনীতিবিদের বর্তমান বয়স ৮৭।

সাজেদা চৌধুরীর একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানান, অসুস্থতা এবং বয়সজনিত জটিলতার কারণে অনেক দিন তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন না। করোনা শুরু হওয়ার আগে থেকেই তার মধ্যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়। অনেক কর্মসূচিতে দেয়া বক্তব্য এলোমেলো হয়ে যায়।

সাজেদা চৌধুরী ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা, সালতা ও সদরপুর) থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। অসুস্থতার কারণে নির্বাচনি এলাকার খোঁজখবর রাখেন ছোট ছেলে শাহতাব আকবর চৌধুরী।

শাহতাব আকবর জানান, তার মা এখন ধীরগতিতে হলেও হাঁটাচলা করতে পারছেন। নিজে অফিসে যেতে না পারলেও সংসদ উপনেতার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের আনা কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন। শাহতাব জানান, সংসদ সংক্রান্ত কাজে মাকে সাহায্য করেন তিনি। পাশাপাশি মায়ের হয়ে এলাকা দেখভালের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

আমির হোসেন আমু : আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু আছেন দলের সংসদীয় বোর্ডেও। পাশাপাশি ১৪ দলের মুখপাত্র এবং সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। আওয়ামী লীগের এক সময়ের ‘মিস্টার ডিসিশন’ হিসেবে পরিচিত এ নেতার দলে প্রভাব এবং জৌলুস কমে যায় এক-এগারোর পরে। সে সময় পর্যন্ত তার দৈনন্দিন রুটিন ছিল ছকে বাঁধা। প্রতিদিন সকালে নাশতা সেরে আরাম কেদারায় বসতেন। বাড়িতে দেখা করতে আসা নেতাকর্মীরা তার পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিতেন।

৮০ বছর বয়সী এ নেতা এখন কদাচিৎ বাড়িতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন। করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর তা একপ্রকার বন্ধই হয়ে গেছে।

তার একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, আমির হোসেন আমু অতি ভোরে উঠে নিয়মিত ফজরের নামাজ আদায় করেন। সাধারণত সংবাদপত্র পাঠের মাধ্যমে তার দিন শুরু হয়। সকালে বেশ কয়েকটি দৈনিকে চোখ বোলান তিনি। এরপর নাশতা সেরে বিশ্রামে যান। রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলে তাতে অংশ নেন। অবশ্য তার বেশির ভাগই ভার্চুয়ালি। ১৪ দলের বৈঠক পরিচালনা করেন। দলীয় কর্মসূচীতে অংশ নেন।

গত মার্চ তিনি ১৪ দলের নেতাদের নিয়ে হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ সফররত ভারতীয় জনতা পার্টির এক থিংক ট্যাঙ্কের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সেটি ছিল সাম্প্রতিক সময়ে তার প্রকাশ্য রাজনৈতিক উপস্থিতি।

এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি ফোনে অথবা ভার্চুয়ালি যোগাযোগ রক্ষা করেন। করোনার প্রকোপ কমে আসার পর নিজের নির্বাচনি এলাকা ঝালকাঠির নলছিটিতে যাওয়া শুরু করেছেন। মাসে অন্তত একবারের জন্য হলেও তিনি নির্বাচনি এলাকায় যান।

দৈনন্দিন ব্যস্ততা নিয়ে আমির হোসেন আমুর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকার ও দলীয় দায়িত্ব পালন করতেই সময় চলে যায়। এলাকার জনগণের খোঁজখবর রাখেন নিয়মিত। জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনি এলাকার অবকাঠামো, যোগাযোগ, বিভিন্ন ভাতা বণ্টনের কাজ তদারকি করতে হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এসব নিয়ে নির্দেশনা দিতেই সময় পার হয়ে যায় তার।

তোফায়েল আহমেদ : তোফায়েল আহমেদ দলের উপদেষ্টা পরিষদ এবং সংসদীয় বোর্ডের সদস্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি তিনি। এই মুহূর্তে কিছুটা অসুস্থতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে চিকিৎসা শেষে ঈদের কয়েকদিন আগেই দেশে ফিরে নিজ নির্বাচনি এলাকা ভোলা ঘুরে এসেছেন তিনি।

গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই তা অসুস্থতায় ভোগার কথা জানা গিয়েছে। স্ট্রোক করার কারণে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন এ নেতা। ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, ধীর হলেও চলাফেরা করতে পারছেন।

৭৮ বছর বয়সী তোফায়েল আহমেদ জানান, তিনি ভালো আছেন। বই পড়ে, লেখালেখি করে, নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ আর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার মাধ্যমেই কেটে যায় তার দিন।

সকালে সংবাদপত্র পড়া তোফায়েল আহমেদের নৈমিত্তিক রুটিন। তার সংগ্রহে রয়েছে বিশাল এক গ্রন্থাগার। বনানীতে তার বাসার নিচতলায় এর অবস্থান। রাজনৈতিক ব্যস্ততা না থাকলে দুপুর পর্যন্ত তার গ্রন্থাগারেই কাটে। সেখানে লেখালেখি, বই পড়া দুটোই চলে। কোথাও সাক্ষাৎকার দেয়া কিংবা ভার্চুয়াল মিটিংয়ে অংশ নেয়ার কাজটাও তিনি এখানে বসেই করেন। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে নিচতলার অন্য অংশে।

রাজনৈতিক জীবনে বরাবর তিনি নিয়ম মেনে সপ্তাহে দু’দিন করে কাটিয়েছেন নির্বাচনি এলাকা ভোলায় (ভোলা-১)। সাধারণত বৃহস্পতিবার গিয়ে তিনি শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরতেন। তবে করোনা মহামারির পর স্বাভাবিকভাবেই তাতে ভাটা পড়ে। আর বয়স বাড়তে থাকায় শরীরও আগের মতো সাড়া দেয় না। এ কারণে এখন আর নিয়মিত যেতে পারেন না। তবে ঢাকায় বসে নিয়মিতই নির্বাচনি এলাকার খোঁজ-খবর রাখেন তিনি। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ইস্যুতে এলাকার জনগণ এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

এই বয়সেও দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকেন না এ রাজনীতিবিদ। দিবসভিত্তিক কর্মসূচিগুলোতে সশরীরে হাজির থাকতে না পারলেও আলোচনা সভা এবং অন্যান্য বৈঠকগুলোতে যান।

মায়ের নামে ভোলার উপশহর বাংলাবাজারে বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলেছেন তোফায়েল আহমেদ। ২০১৬ সালে তার নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এটির মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের জন্য হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম, শিক্ষাবৃত্তিসহ আর্তমানবতার সেবামূলক কাজ পরিচালিত হয়।

বাংলাবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে আজাহার ফাতেমা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতাল তোফায়েল আহমেদ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। ২২ অক্টোবর ১৯৪৩ সালে জন্ম নেয়া তোফায়েল আহমেদের বর্তমান বয়স ৭৮ বছর।

মতিয়া চৌধুরী : দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মতিয়া চৌধুরী। এ ছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তিনি। কী সরকারি, কী দলীয়– সব কাজই তিনি যথাসময়ে পুঙ্খাণুপুঙ্খভাবে করেন। নিজে উপস্থিত থাকেন। বয়স ৭৯ হলেও অনুকূল এবং প্রতিকূল দুই ধরনের পরিবেশেই সমানতালে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয় মতিয়া চৌধুরী। করোনার মহামারিকালেও দলীয় কার্যালয় এবং কর্মসূচিতে ছিল নিয়মিত উপস্থিতি।

জীবনযাপনে মতিয়া চৌধুঈ অত্যন্ত সাদাসিধে। এখনও দেশি কাপড় পরেন, চলেন সাদামাটা। সাজগোজ নেই, তবু পরিপাটি। খাবারদাবারেও নেই বাড়তি কিছু। সাধারণ চালের ভাত, শাকসবজি, ভর্তা আর তরিতরকারিতেই অভ্যস্ত। রাষ্ট্রীয় বা দলীয় কাজের বাইরে সময় পেলেই পত্রপত্রিকা ও বই পড়ে সময় কাটান। সময় পেলে নিজেই রান্না করেন। এ ছাড়া প্রয়াত স্বামী বজলুর রহমানের নামে ফাউন্ডেশন চালান।

তার বাসার পরিবেশও অনাড়ম্বর। তেমন কোনো আসবাব নেই বললেই চলে। ছোট্ট একটা ডাইনিং টেবিল। ছোট ছোট তিনটি রুম। পাঁচ-ছয়জন বসার মতো একটি সাধারণ সোফা সেট। ছোট্ট একটি টিভি। তবে, বাড়ি ভর্তি বইপত্র। প্রত্যেক ঘরে ছড়ানো-ছিটানো বই, দেশবিদেশের পত্রপত্রিকা।

মতিয়া চৌধুরী জানান, নিজের সব কাজ নিজে করার চেষ্টা করেন। সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনি এলাকা শেরপুর-২ এ যথাসম্ভব সময় দেয়ার চেষ্টা করেন। করোনাকালেও সেখানে গিয়েছেন। কখনও নিজে না পারলে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এলাকার মানুষের খোঁজখবর নেন এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেন। এ ছাড়া নিয়মিত দলীয় কার্যালয়ে যান। যান দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবনেও। দলীয় এবং সরকারি কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার পাশাপাশি দেলীয় প্রধানের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি। সূত্র : নিউজবাংলা। 

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!