ঢাকা : থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
মঙ্গলবার (২৪ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের গেটের পাশে ছাত্রদলের দুই নেতাকে মারধর করে ড্রেনে ফেলে দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের শহীদুল্লাহ হলের কর্মীরা এতে অংশ নেন বলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের অভিযোগ।
গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন ওই দুই ছাত্রদল নেতা। তারা হলেন— বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এজিএস ছাত্রদল নেতা আল আমিন বাবলু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সহ-সভাপতি মিনহাজুল আবেদীন নান্নু।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছাত্রদলের এই দুই নেতাকে ড্রেনে ফেলে বেধড়ক মারধর করছেন ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। এসময় তাদের বলতে শোনা যায়, এত বড় সাহস ছাত্রদল করিস। পরে পরে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক তুহিন রেজা, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের নেতা সৈয়দ শরিফুল আলম শফুর হস্তক্ষেপে ড্রেন থেকে তোলা হয়। তোলার পর আবারো কয়েক দফা মেরে রিকশায় তুলে দেয়। রিকশায় উঠলে আবারও লাথি মেরে ফেলে দেয়। পা ভেঙে যাওয়ায় রিকশায় উঠতে না পারলে তাকে ছাত্রলীগের দুইজন কর্মী তুলে দেয়।
ছাত্রদল নেতা মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেন, দোয়েল চত্বর মিছিল দিয়ে আসার পর শহীদুল্লাহ হলের কর্মীরা আমাকে টেনে ভেতরে নিয়ে গিয়ে মারতে শুরু করেন। লাঠি-হকিস্টিক দিয়ে মারার পাশাপাশি চাপাতি দিয়ে কোপও দেয় তারা। রিকশায় তুলে দিয়ে আবারও লাথি মেরে ফেলে দেয়। আমার পা পুরোপুরি ভেঙে গেছে। একা একা আমাকে মেডিকেলে পাঠানো হয়।
এর আগে সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ছাত্রদল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে টিএসসি যাওয়ার পথে শহীদ মিনার এলাকায় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।
এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। ছাত্রদল নেতাকর্মীদের অভিযোগ হামলায় তাদের অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
তবে ছাত্রলীগের প্রতিরোধের মুখে পিছু হটে ছাত্রদল। তবে শক্তি বাড়িয়ে ক্যাম্পাসে আসার পরিকল্পনা করেন তারা।
জানা গেছে, পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ করে ছাত্রদল।
ছাত্রলীগের অভিযোগ, সেই সমাবেশে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। এরপর থেকেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল ইউনিটের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে ছাত্রদলকে প্রতিহতের ঘোষণা দেন।
ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদকের সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল ছাত্রদলের।
তবে এর আগেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল ইউনিটের নেতা-কর্মীরা সকাল ৯টা থেকে মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেয়া শুরু করেন।
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ঢাকা মেডিক্যাল থেকে শহীদ মিনার হয়ে টিএসসিতে যাওয়ার পথে সেখানে অবস্থান নেয়া ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হামলা চালান।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘আমাদের সাধারণ সম্পাদক সেদিন কী বক্তব্য দিয়েছেন সেটি ব্যাখ্যা করার জন্য আজকে আমরা সংবাদ সম্মেলন ডেকেছি। এরপর আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগের গেট থেকে শহীদ মিনার হয়ে পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী টিএসসিতে যাচ্ছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে আমরা কোনো স্লোগান দেইনি। এরপর বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা আমাদের সামনে আসে। আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি আমাদের অপরাধ কী, কেন আমাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে? তারা কোনো উত্তর না দিয়ে আমাদের ওপর হকিস্টিক, লোহার রড, স্ট্যাম্প, চাপাতিসহ আক্রমণ করে। এ সময় আমাদের নারীনেত্রী লাঞ্ছিতসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন।’
ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘ছাত্রলীগ বলছে আমরা তাদের নেত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করেছি। কিন্তু কোন বক্তব্যে কটূক্তি করেছি সেটা তারা স্পষ্টভাবে বলতে পারছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ছাত্রদলের প্রতি সাধারণ ছাত্ররা আকৃষ্ট হচ্ছে এবং জনপ্রিয় সংগঠনে পরিণত হচ্ছে দেখে ঈর্শ্বান্বিত হয়ে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা করেছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি অভিযোগ করে আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘এই পরিস্থিতি হতে পারে ধারণা করে আমি সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কয়েকজনকে অনেকবার ফোন দিয়েছি। কিন্তু তারা কেউ ফোন রিসিভ করেনি। আমরা আহত হওয়ার পর আজকেও ফোন দিয়েছি কিন্তু কেউই রিসিভ করেনি।’
হামলার অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে ফোন দেয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :