ঢাকা : জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে প্রথমে যে কাজটি করছি সেটি হলো আমরা সংগঠনকে শক্তিশালী করছি। সারাদেশে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে যে কমিটিগুলো আছে, সব কমিটি আমরা রি-অর্গানাইজ (পুনর্গঠন) করে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের কাজ করছি। ইতোমধ্যে অনেক উপজেলায় ও জেলায় সম্মেলন হয়েছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে আমরা সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির সম্মেলন শেষ করব। অক্টোবরের পর আমরা বিভাগীয় পর্যায়ের সব কর্মীকে ডেকে বিভাগীয় সমাবেশ করব।
সম্প্রতি দেশের একটি জনপ্রিয় গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তিনি এক কথা জানান।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের শুরুতে যে নির্বাচন হবে আমরা সেটাকে টার্গেট করেছি। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার মতো বা নির্বাচন করার মতো সঙ্গতি আমাদের আছে, সামর্থ্যও আছে। আমাদের যথেষ্ট কর্মী আছে। আমরা যে জোটে যাব এমন কোনো গ্যারান্টি বা কনফারমেশন দিইনি। আবার যাব না, সেটাও আমরা বলছি না। তবে, আমাদের প্রাথমিক টার্গেট হলো ৩০০ আসনে লড়াই করা। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির ওপর ডিপেন্ড করবে আমরা কোনো জোটে যাব কি না; নাকি আমাদের সঙ্গে কেউ জোটবদ্ধ হবে কি না। সেটা তখনকার পরিস্থিতি বলে দেবে।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি বীতশ্রদ্ধ। আওয়ামী লীগের এই আমলে দুঃশাসন, করাপশন (দুর্নীতি), টাকা পাচার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকারত্ব— এসব কারণে মানুষ অসন্তুষ্ট। আবার বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তারা বিশ্বে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তারাও সুশাসন দিতে পারেনি। এরশাদ সাহেবের আমলে অনেক কাজ হয়েছে, সুশাসনও ছিল। মানুষের এখন দাবি জাতীয় পার্টি যাতে ক্ষমতায় আসে। সেই কারণে মানুষের মনের তাগিদে, তাদের চাহিদার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, তাই জাতীয় পার্টি ভালো হলেও নির্বাচনে যায়, খারাপ হলেও নির্বাচনে যায়। কারণ, জাতীয় পার্টির একটাই উদ্দেশ্য, দেশে কোনোভাবেই যাতে অনির্বাচিত সরকার বা কোনো অ্যাবনরমাল (অস্বাভাবিক) সরকার না আসে। সেজন্য আমরা প্রত্যেকটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। আওয়ামী লীগসহ সব দলের কাছে আমাদের চাওয়া, আগামী নির্বাচনটা যেন সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে হয়। বিদেশের চাপ বা অমুকের চাপ— এটা বড় প্রশ্ন নয়। বড় প্রশ্ন হলো আমাদের জনগণের চাপ। জনগণ চায় একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরাও সেটা চাই। সেজন্য কারও সঙ্গে যদি কোনো রকম কো-অপারেশন (সহযোগিতা) করতে হয়, জাতীয় পার্টি সেটা করতে রাজি আছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সময়ে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আমরা কয়েকটা নির্বাচন করেছি যে তারা ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশের ভালো করবে, মঙ্গল করবে। তারা যে দুর্নীতি করবে ব্যাপকভাবে এবং সুশাসন দিতে পারবে না— এটা আমরা চিন্তা করিনি। এখন আমাদের ধারণা, ওই দুই দলকে মানুষ আর চায় না। আমরাও চাই না। আমরা চাই, নিজস্ব স্বকীয়তায় ৩০০ আসনে নির্বাচন করার।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ৩১ বছর হলো আমরা বিরোধী দলে। আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল না। তারা খণ্ড খণ্ড হয়ে গিয়েছিল, টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে ১৯৮১ সালে আসার কারণে আওয়ামী লীগ আবার এক হয়েছে। বিএনপি আজ ১২ বছর ক্ষমতায় নেই। আপনি দেখবেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় না আসলে তারাও ভেঙে যাবে। কিন্তু এরশাদের জাতীয় পার্টি ৯০ থেকে আজ ২০২২ সাল, ৩১ বছর ক্ষমতায় নেই কিন্তু এখনও টিকে আছে। ইনশাল্লাহ, মানুষের দোয়া-সমর্থন এবং এরশাদ সাহেবের কাজের কারণে আমরা টিকে আছি। আগামীতেও মানুষের জন্য কাজ করব। আমাদের যে পরিকল্পনা, সেগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিলে, মানুষের সমর্থন পেলে আগামীতে আমরা সরকার গঠন করব। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :