• ঢাকা
  • শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১
গণঅধিকার পরিষদ

সম্মেলন ঘিরে মুখোমুখি নুর-রেজাপন্থীরা, সংঘাতের আশঙ্কা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১০, ২০২৩, ১২:২৩ পিএম
সম্মেলন ঘিরে মুখোমুখি নুর-রেজাপন্থীরা, সংঘাতের আশঙ্কা

নুরুল হক নুর ও রেজা কিবরিয়া। ছবি: ফাইল

ঢাকা : গণঅধিকার পরিষদের প্রথম সম্মেলন ঘিরে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে দলটির সদস্য সচিব নুরুল হক নুর ও  আহ্বায়ক পদ থেকে সদ্য ‘অপসারিত’ রেজা কিবরিয়ার অনুসারীরা। যা সংঘাতের রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খোদ দলটির নেতাকর্মীরা।

মূলত অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যেই সোমবার (১০ জুলাই) সকাল ১০টায় রাজধানীর পল্টনের জামান টাওয়ারের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্মেলন আয়োজন করেছে নুরপন্থী একাংশ।  

তবে তা প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা কমিটি গঠন করতে যাচ্ছেন দলের আহ্বায়ক পদ থেকে ‘অপসারিত’ হওয়া রেজা কিবরিয়া। এর মাধ্যমে মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করে এসেই নানাভাবে আলোচনায় থাকা নতুন দলটি।

অন্যদিকে সকাল ১০টায় ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা ও আগ্রাসনের প্রতিবাদে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি থেকে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে অবস্থান নেবেন রেজাপন্থীরা। গণঅধিকার পরিষদের উভয় অংশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে তাকে দল থেকে অপসারণ করা হলেও অপসারণ প্রক্রিয়া অবৈধ জানিয়ে দলের ১২১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির অর্ধশতাধিক সদস্য রেজা কিবরিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

রোববার (৯ জুলাই) ড. রেজা কিবরিয়ার অপসারণ অগঠনতান্ত্রিক জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর চিঠিও দিয়েছেন কমিটির ৪৬ সদস্য।

তবে এসবের তোয়াক্কা করছে না গণঅধিকার পরিষদের নুরপন্থীরা। তারা দলের প্রথম জাতীয় সম্মেলনের বৃহৎ একটি অংশকে বাদ দিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

জানা যায়, সোমবার অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলে গোপন ভোটে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন। এতে ভোট দিতে পারবেন দলের ৫৫ জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব (দুই জন করে ১১০ জন হওয়ার কথা থাকলেও কোনো কোনো জায়গায় তা পূর্ণ সংখ্যা না হওয়ায় সে সংখ্যা হচ্ছে ৯০)। ভোট দিতে পারবেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ১২৬ সদস্যও। নির্বাচনে মোট ভোটার ২১৬ জন (১২৬+৯০ জন)।

কাউন্সিলে সভাপতি পদের জন্য চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তারা হলেন- বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুস সাকিব, জাফর মাহমুদ ও বায়জিদ হোসেন। সাধারণ সম্পাদক পদেও চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তারা হলেন- ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাশেদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক বিপ্লব কুমার পোদ্দার, মাহফুজুর রহমান ও জিলু খান।

তবে একটি সূত্রে জানা গেছে, জামান টাওয়ারে রেজা কিবরিয়াপন্থীরা কোনো ঝামেলা করলে নুররা বিকল্প ভেন্যুতে সম্মেলন করবেন। এজন্য তারা বিকল্প ভেন্যু হিসেবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির একটি হল ভাড়া করে রেখেছেন।

সম্মেলন প্রসঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, আমরা সম্মেলন করব। দলের ৮০ শতাংশ নেতাকর্মী আমাদের সঙ্গে আছে। এখন কেউ যদি গণঅধিকার পরিষদের নাম ভাঙিয়ে একই নামে রাজনীতি করতে চায়, তারা করতে পারে, আমাদের কিছু করার নেই।

তিনি আরও বলেন, সম্মেলনে সারা দেশের জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাকর্মীরা আসবেন। দলের মূল স্রোতের সঙ্গে আমরা আছি। যারা কাউন্সিলে অংশ নেবেন না, আগামীকালের পর তাদের লাফালাফি বন্ধ হয়ে যাবে।

তবে সম্মেলনে যোগ দেবেন না বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক (রেজা কিবরিয়াপন্থী) শাহাবুদ্দিন শুভ বলেন, আমরা কাউন্সিলে অংশ নেব না। পরে আলাদাভাবে কাউন্সিল করব কি না তা পরবর্তীকালে দলের আহ্বায়ক দেশে আসলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রেজা কিবরিয়াপন্থীদের একটি সূত্রে জানা গেছে, নুরুল হক নুর কাউন্সিল করে নতুন কমিটি গঠন করলে সেক্ষেত্রে কিবরিয়াপন্থীরাও আলাদা কমিটি গঠন করে দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে জমা দেবেন। আর কমিটিতে তারা রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক হিসেবে রাখবেন। হাসান আল মামুনকে সদস্য সচিব করার চিন্তা রয়েছে। কমিটির আকার হবে ৬০ থেকে ৮০ সদস্য বিশিষ্ট।

রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের মধ্যকার দ্বন্দ্বে যখন গণঅধিকার পরিষদ দুইভাগে বিভক্ত, সেই সময় দলের নিবন্ধনের জন্য কার্যালয় পরিদর্শনে আসবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেখানে নুর ও রেজা কিবরিয়াপন্থিদের উভয় অংশের নেতারা থাকবেন বলে জানা গেছে।

দুপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি দল দলীয় কার্যালয় পরিদর্শনে এলে নুরের পক্ষ থেকে নুর এবং রাশেদ খানসহ তাদের অনুসারীরা থাকবেন। রেজা কিবরিয়াকে অপসারণ করা হয়েছে সেটা যে বৈধ তার পক্ষে দালিলিক প্রমাণ তুলে ধরবেন ইসির কাছে।

অন্যদিকে রেজা কিবরিয়াপন্থীদের মধ্যে থাকবেন তার অবর্তমানে দায়িত্বে থাকা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিয়া মশিউজ্জামানসহ আরও দুই-একজন নেতা।

তারাও রেজা কিবরিয়াকে দলের আহ্বায়ক পদ থেকে অপসারণ যে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হয়নি এবং এই অপসারণ যে অবৈধ তা তুলে ধরবেন ইসির কাছে। উভয় পক্ষই নিজেদেরকে আসল গণঅধিকার পরিষদের দাবিদার প্রমাণ করার স্বপক্ষে ইসির কাছে প্রমাণ ও যুক্তি তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে।   

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!