ঢাকা : দেশের বিভিন্ন স্থানে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন।
সোমবার (২৪ জুলাই) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বলা হয়, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে নেতাকর্মীরা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ-পশ্চিম গেইটে জড়ো হবেন, ১টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে, বিকাল ৩টা থেকে শুরু হবে সমাবেশ।
একইদিন সরকার পতনে এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসাবে বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
বিএনপির সমাবেশের পাল্টায় এই সমাবেশ করছেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। রাজনৈতিক দল হিসেবে সহাবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করব।
সাপ্তাহিক কর্মব্যস্তার দিনে দুই দলের পাল্টাপাল্টি এমন সমাবেশ যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টির যে শঙ্কা রয়েছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নিখিল বলেন, আমরা একটি স্থান জানালাম। পরবর্তীতে স্পট পরিবর্তন করতে পারি।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এ বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হবে, নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে দেশবিরোধীচক্র, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী আবারও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। অগ্নিহত্যার ড্রেস রিহার্সেল হিসাবে তারা ঢাকা শহরে অন্যতম বিদ্যাপীঠ বাংলা কলেজে সাধারণ শিক্ষার্থীর উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে জ্ঞানের আলো লাইব্রেরি ভাঙচুরসহ ছাত্রীদের উপর হামলা ও শ্লীলতাহানী করে।
যার ধারাবাহিকতায় বগুড়ায় একই দিনে ইয়াকুবিয়া বালিকা বিদ্যালয়ে হামলা করে শতাধিক ছাত্রীকে আহত করে। খাগড়াছড়ি ও লক্ষ্মীপুরে শান্তি সমাবেশে হামলা করে শতাধিক মানুষকে আহত করে।
নিখিল বলেন, গত ২১ জুলাই যুবলীগের খুলনা বিভাগীয় তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার পথে নড়াইলের পেরুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আজাদ শেখকে ‘ওঁৎপেতে থাকা বিএনপি-জামাতের সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা’ নির্মমভাবে হত্যা করে। একই দিনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ১২ ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা শেখ ওয়ালিউল্লাহ রুবেলকেও হত্যা করা হয়।
গত ৩০ এপ্রিল তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জামাল হোসেন এবং গত ৩০ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. আলাউদ্দিন পাটোয়ারীকেও ‘বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা’ নির্মমভাবে হত্যা করে বলে অভিযোগ করেন যুবলীগ নেতা।
তিনি বলেন, গত ২৫ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান ও যুবলীগ নেতা রাকিব ইমামের হত্যাকাণ্ডের সাথেও বিএনপি-জামাতের ‘সম্পৃক্ততা রয়েছে’। গত ২১ জুন কুমিল্লা জেলার লাকসাম পৌরসভা শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইফতেখার অনিককে ‘বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলায়’ নিহত হয়।
ইতোপূর্বে বগুড়া শহর শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাহিদ হাসান ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. রমজান আলীকেও ‘বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীরা’ নির্মমভাবে হত্যা করে বলে নিখিলের অভিযোগ।
তিনি বলেন, “প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা, এটা নতুন কিছু নয়। এটা বিএনপির জন্মলগ্ন থেকেই পরিষ্কার চিত্র। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর হাজার হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষকে গুম-হত্যা করে তার ক্ষমতাকে সুসংহত করেন।"
স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক অফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রোববার এক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যুবলীগ জানিয়েছিল, তাদের ঢাকা বিভাগীয় ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ সোমবারের পরিবর্তে বৃহস্পতিবার হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন।
এরপর সোমবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে বৃহস্পতিবার যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হল।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :