ঢাকা : বিএনপি-জামায়াতের ‘সহিংসতা ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট।
বুধবার (২ আগস্ট) থেকে সপ্তাহব্যাপী সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
সোমবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে আমির হোসেন আমুর বাসভবনে জোটের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে কর্মসূচি ছাড়াও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বিএনপির আন্দোলনসহ সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো পরিবেশ ও প্রয়োজনীয়তা নেই বলেও মত দেন জোটের নেতারা।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, আগামী ২ আগস্ট (কাল) থেকে আমরা (১৪ দল) মাঠে নামব। সাতদিনের কর্মসূচি আছে। মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষের কাছে দেব। অনুমোদন সাপেক্ষে সপ্তাহব্যাপী এ কর্মসূচি চলবে।
বিএনপির কর্সসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করার মাধ্যমে দেশের সাংবিধানিক ধারাকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া বিএনপির চিরাচরিত অভ্যাস।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চারনীতিকে হটানো, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবেশ ঘটানো এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ নস্যাৎ করা হয়েছিল, সেই একই ধারা আবার তারা প্রবর্তন করতে চায়।
সংবিধান পরিবর্তন করে বিএনপির নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে আমু বলেন, সংবিধানে হাত দেওয়ার কথা তারা বারবার বলে আসছে।
অর্থাৎ নির্বাচন ইস্যুটাকে সামনে রেখে তারা সাংবিধানিক ধারাকে বানচাল করে অন্য ধারার প্রবর্তন করাতে চায়। এর অর্থ হচ্ছে তারা মূল সংবিধানে হাত দিতে চায়। এতে ১৪ দল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলেও জানান তিনি।
এটা প্রতিহত করার জন্য ১৪ দল বিগত দিনে যেভাবে সোচ্চার ছিল, আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিল, ঠিক তেমনিভাবে আগামী ২ আগস্ট (কাল) থেকে মাঠে নামবে বলেও মন্তব্য করেন ১৪ দলের মুখপাত্র। আমির হোসেন আমু বলেন, ১৪ দলের মূল লক্ষ্য সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রেখে নির্বাচন হতে হবে।
সেখানে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য তাদের যত শর্ত থাকে সেটা মেনে নিতে রাজি। আমরা ১৪ দল প্রস্তুত। আমার মনে হয় আওয়ামী লীগও প্রস্তুত। কারণ প্রধানমন্ত্রী সবাইকে বলেছেন-অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা, বিদেশিরাও সেটা বলেছে। সেটাই আমরা চাই।
বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সংলাপের প্রয়োজন আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আমু বলেন, ওরাতো আলোচনায় বিশ্বাস করে না। তারাতো উৎখাতের কথা বলে। তাই কীসের সংলাপ? যারা রাজনৈতিক ধারায় বিশ্বাস করে না তাদের সঙ্গে কি কারণে বসব?
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, তারা বলেছে সরকার উৎখাত করা ছাড়া ঘরে ফিরবে না। যেখানে তারা এই কথা বলছে, সেখানে সংলাপ করার প্রশ্নই উঠে না।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের শিরিন আখতার বলেন, যেকোনো সংলাপে মিনিমাম পয়েন্ট অব ফিউরিটি থাকে। একটা ঐক্যবদ্ধ জায়গার ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু তারাতো সেই জায়গায় নেই। তাই এখানে সংলাপের কোনো জায়গা নেই।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, গণতন্ত্রী পার্টির ডা. শাহাদাত হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণআজাদী লীগের অ্যাডভোকেট এস কে সিকদার, বাসদের রেজাউর রশিদ খান, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির জাকির হোসেন, ন্যাপের মোহাম্মদ আলী ফারুক, জাতীয় পার্টি জেপির অ্যাডভোকেট এনামুল হক রুবেল, আবুল খায়ের সিদ্দিকী আবু প্রমুখ। এদিকে সূত্র জানায়, বৈঠকে হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না। তারা সংবিধান মানে না, দেশের গণতন্ত্র মানে না। তারা চায় ক্ষমতাতন্ত্র। জঙ্গিবাদের হোতা বিএনপি-জামায়াত দেশের রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই