ঢাকা: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘিরে আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এর মধ্যে নতুন কর্মসূচিও আসবে; সেটা হতে পারে আগামী ৫ অক্টোবর। ওই দিন কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ কর্মসূচি থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে। নতুন কর্মসূচিও পালন করা হবে ধারাবাহিকভাবে; তবে নতুনত্ব থাকবে; বাড়বে গতিও। এ ছাড়া বিএনপি অক্টোবরে সরকারের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবে বলেও দলের একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন।
গত সোমবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে নতুন কর্মসূচিসহ আলোচনা হয় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। বিএনপি নেতারা মনে করেন, মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেশের জন্য অসম্মানের। তবে ক্ষমতাসীনরা আরও চাপে পড়ায় তারা ‘ভেতরে ভেতরে’ বেশ খুশি। বিএনপি মনে করে, মার্কিন ভিসানীতির একটা ইতিবাচক প্রভাব তাদের চলমান আন্দোলনেও পড়বে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মনে করেন, ‘ভিসানীতি যুক্তরাষ্ট্রের একটা পলিসি। তারা সারাবিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ভিসার যে বিধিনিষেধ শুরু করেছে, তা বাংলাদেশের জন্য অসম্মানের। এ জন্য দায়ী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। এই সরকার ক্ষমতায় থাকা মানে দেশের ক্ষতি হওয়া। এ জন্যই আমাদের আন্দোলন করতে হবে। এবারের আন্দোলন হবে ডু অর ডাই।’
বিএনপির নতুন কর্মসূচি সম্পর্কে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘সরকারের চরিত্র অনুযায়ী আগামীতে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করব। তবে সরকারের কোনো ফাঁদে আমরা পা দেব না; এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি।’
দলের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৫ অক্টোবর চলমান রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর আরও শক্তভাবে মাঠে নামবে বিএনপি। বিএনপি নেতারা বলছেন, ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু হওয়ায় এখন প্রেক্ষাপট বদলাতে শুরু করেছে। এর মধ্যে আসছে মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। ঢাকা সফরে তাদের মনোভাব বোঝার বিষয়ও আছে। এসব বিষয় বুঝে অক্টোবরের মাঝামাঝি চূড়ান্ত আন্দোলনের শেষ ধাপের কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘অক্টোবরের মাঝামাঝি ঢাকায় মহাসমাবেশ, সচিবালয় ঘেরাও, ঢাকা ঘেরাও এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে।’
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে শিগগিরই বৈঠক হবে। তাদের কাছ থেকে কর্মসূচির বিষয়ে প্রস্তাব চাওয়া হবে। এরপর তাদের প্রস্তাব দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি।
যুগপৎ আন্দোলনে থাকা একটি দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতা বলেন, ‘আমরা তফসিল ঘোষণার আগে আগে অর্থাৎ আক্টোবরের শেষদিকে আন্দোলনের মাঠ গরমের কর্মসূচি দেব। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। শেষদিকে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিসহ সব ধরনের কর্মসূচি থাকবে।’
শনিবার ১৫ সংগঠনের সম্মেলন
চলমান আন্দোলনে শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে আগামী শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে শ্রমিক-কর্মচারী সম্মেলন (কনভেনশন) করবে বিএনপি। দলটি বলছে, সম্মেলনে ১৫টি শ্রমিক সংগঠনের ১০ হাজারের বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। এসব সংগঠনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক জোট, বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদ, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতি, বাংলাদেশ বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতি, শ্রমিক আন্দোলন, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক জোট, বাংলাদেশ শ্রমিককল্যাণ মজলিশ ও জাতীয় শ্রমিক পার্টি।
কনভেনশনের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকনেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস জানান, ‘পৃথিবীর সব দেশেই শ্রমিক আন্দোলন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে মৌলিক ভূমিকা রেখেছে। রাজনীতির এই উত্তেজনাকর মুহূর্তে জাতীয় কনভেনশন নিঃসন্দেহে মানুষের মুক্তির লড়াইকে অনেক সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
এমএস