• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আ.লীগ, বিএনপির মহাসমাবেশ

কী হতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর?


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২২, ২০২৩, ০৯:৪৪ এএম
কী হতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর?

ঢাকা: সরকার পতনের দাবিতে টানা আন্দোলনে থাকা বিএনপি আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ ডেকেছে। সেই সমাবেশ থেকে দলটি আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’ শুরু করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেদিন হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিতে পারে বিএনপি। আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দলটি তাদের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ২৮ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এদিন তারাও ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে। সেই মহাসমাবেশ জনতার মহাসমুদ্রে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। এদিন জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য বিরোধী দলও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।

বিএনপি ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায়। শনিবার (২১ অক্টোবর) দলের পক্ষ থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পলিশের (ডিএমপি) কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। তবে ডিএমপি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। অন্যদিকে একই দিন একই সময়ে অল্প দূরত্বে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এতে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।

এবারও পরিকল্পিত কিংবা কাকতালীয়ভাবে সেই ২৮ অক্টোবর ঘিরেই রাজনৈতিক সংঘাত নতুন মাত্রা পেয়েছে। দুর্গাপূজার কারণে সাময়িকভাবে কর্মসূচি স্থগিত রাখা বিএনপি সেদিন শনিবার ছুটির দিনে রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির চলমান ‘নরম’ কর্মসূচির সেটাই শেষ দিন। এরপর হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি। 

২৮ অক্টোবর ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপ আগেও ছড়িয়েছে। ২০০৬ সালের এই দিনে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এদিন ক্ষমতা ছেড়েছিল। সেদিন ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের সেই আন্দোলনকে ‘লগি-বৈঠার আন্দোলন’ হিসেবে কটাক্য করেন বিরোধীরা। কারণ সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের লগি-বৈঠা নিয়ে রাস্তায় নামার আহ্বান জানানো হয়েছিল। রাজপথে প্রকাশ্যে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ মারার ঘটনা তখন দেশ-বিদেশে তখন ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তী সময়ে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পেছনে এই সংঘর্ষের ঘটনাটি বিশেষ ভূমিকা রাখে।

এবারও পরিকল্পিত কিংবা কাকতালীয়ভাবে সেই ২৮ অক্টোবর ঘিরেই রাজনৈতিক সংঘাত নতুন মাত্রা পেয়েছে। দুর্গাপূজার কারণে সাময়িকভাবে কর্মসূচি স্থগিত রাখা বিএনপি সেদিন শনিবার ছুটির দিনে রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির চলমান ‘নরম’ কর্মসূচির সেটাই শেষ দিন। এরপর হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি।

এদিকে নির্বাচন ঘিরে দেশি-বিদেশি চাপ সত্ত্বেও মাঠ ছাড়তে নারাজ টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন তারা মাঠে সক্রিয় থেকেই দমন করতে চায়। এজন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে ঢাকায় আন্দোলন দেখভালের জন্য দলের শীর্ষ দুই নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও জাহাঙ্গীর কবির নানককে দায়িত্ব দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। তারা ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আগামী দিনে মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে ছক কষছেন।

বিএনপিও ২৮ অক্টোবর ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে থাকা দলটি চাচ্ছে, যেকোনো মূল্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বাধ্য করতে। এজন্য ঢাকাকে ঘিরেই এবার আন্দোলনের ছক সাজানো হচ্ছে। দলের পক্ষ থেকে গ্রেফতার, হামলা, মামলাসহ সরকারের প্রতি নানা অভিযোগের পাশাপাশি নিজেদের প্রস্তুতি পুরোদমে সেরে নিচ্ছে বিএনপি।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নেতৃত্বে প্রতিটি বিভাগের জন্য একটি করে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকে কর্মী সমর্থকদের ঢাকায় আসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে। এ ক্ষেত্রে কোনো 'অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে' পরিস্থিতি অনুযায়ী সেটি মোকাবেলা করার কৌশল চূড়ান্ত করার জন্যও কাজ করবেন তারা। ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগের জন্য সমন্বয় কমিটি নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে জেলা ও উপজেলা কমিটিগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে। দলের নেতারা জানিয়েছেন সমন্বয় কমিটিগুলো প্রতিটি জেলার কাছে কেন্দ্রের যে বার্তা পৌঁছে দিয়েছে তা হলো– যত বেশি সম্ভব লোকজন নিয়ে ঢাকায় সমবেত হওয়া।

২৮ অক্টোবর ঘিরে ‘কথার যুদ্ধ’

গত ১৮ অক্টোবর সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণাকালে বলেন, এক দফা দাবি আদায়ে আংশিক কর্মসূচির হিসেবে আগামী ২৮ তারিখ শনিবার মহাসমাবেশ করব। এরপর আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। সরকারের পদত্যাগ না ঘটিয়ে আমরা আর বাড়ি ফিরে যাবো না। এটি যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শনিবার (২১ অক্টোবর) এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ২৮ তারিখ তো আমাদের কর্মসূচি আছে। আমাদের কর্মসূচি আমরা আগেই ঘোষণা করেছি। নতুন করে কিছু নাই। ২৮ তারিখ মহাযাত্রা আমাদেরও আছে। চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নদীর নিচে টানেল, বঙ্গবন্ধু টানেলের মহাযাত্রা শুরু হবে।

নির্বাচন ঘিরে দেশি-বিদেশি চাপ সত্ত্বেও মাঠ ছাড়তে নারাজ টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন তারা মাঠে সক্রিয় থেকেই দমন করতে চায়। এজন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। 

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ওইদিন বিকেলে (২৮ অক্টোবর) বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জনতার মহাসমুদ্র হবে। জনতার ঢল নামবে। কোথায় কী হবে? করবেন? কয়দিন সময় দেবেন? আমাদের আর সময় নাই। দাওয়াত দিচ্ছি আপনাদের।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দাওয়াত দিয়ে তিনি বলে, ফখরুল সাহেবকে দাওয়াত দিচ্ছি, ৪ তারিখে (৪ নভেম্বর) এই ঢাকায় স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জমায়েত হবে মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে। প্রধানমন্ত্রী সেখানে বক্তব্য রাখবেন। আমরা তো ২৮ তারিখেও আছি। ৪ তারিখেও আছি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, ‘আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারছি—ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘন ঘন বৈঠক করছেন কীভাবে বিএনপির কর্মসূচিকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করা যায়। ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের হিড়িক থামছে না, আরও জোরদার করা হয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘পুলিশের কর্মকাণ্ডে সুস্পষ্ট যে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন দলবাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না আসতে কী পরিমাণ নৃশংসতা চালাবে তারই ইঙ্গিত এখনই পাওয়া যাচ্ছে, আবারও ভোটের আগের রাত্রে নৌকা মার্কায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলতে তারা সর্বোচ্চ রক্তাক্ত সহিংসতায় লিপ্ত থাকবে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ২৮ তারিখ মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন। সেখান থেকে নাকি সরকারের পতনের কর্মসূচি শুরু হবে। আসলে ২৮ তারিখ বিএনপির পতনযাত্রা শুরু হবে।’

আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতকে ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। তিনি বলেন, 'সরকারের পতন ও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আগামী ২৮ অক্টোবর জামায়াত-বিএনপি মহাসমাবেশের নামে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে। নাম দিয়েছে মহাসমাবেশ কিন্তু এটা হলো তাদের অবরোধ। অবরোধে যা যা করার তারা করবে। এটা তাদের মরণকামড়।'

এদিকে ২৮ অক্টোবর কোনো সহিংসতা করলে তা কঠোরহস্তে দমন করার ঘোষণা দিয়েছে ডিএমপি। আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ। কর্মসূচি ঘিরে এরই মধ্যে একটি নিরাপত্তা শঙ্কা ও জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যদি কোনো উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে কীভাবে সামাল দেবে পুলিশ? জানতে চাইলে ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। বাংলাদেশের সংবিধানে যেকোনো রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক আন্দোলন, মিছিল-মিটিং সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ নিরাপত্তাও দিয়ে থাকে। ‌কিন্তু ২৮ অক্টোবর কর্মসূচির আড়ালে যদি কেউ সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে, ঢাকার সোয়া দুই কোটি মানুষের জানমালের নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দেয় বা যেকোনো পরিস্থিতি কঠোর হস্তে দমন করা হবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) পক্ষ থেকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার আইনজীবীদের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘তারা আন্দোলন করছে, করুক। আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আন্দোলনের নামে দুর্বৃত্তপনা করলে ছেড়ে দেব না। অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে এরা বাড়বে। কারণ অনেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিল, এখন আন্দোলনের সুযোগে একে একে সকলেই সামনে আসছে।’

এমএস

Wordbridge School
Link copied!