ঢাকা: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেই তা প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিক রাজপথে নামবে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে ঝটিকা মিছিল ও সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি থাকতে পারে। আর তফসিল ঘোষণার পরের দিন নির্বাচন কমিশন ভবন ঘেরাও করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে তিন রাজনৈতিক দলকে পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের চিঠিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তারা এ চিঠির জবাবও দেবে। তবে দলটি মনে করে, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে বন্দি রাখলে সংলাপের পরিবেশ থাকবে না।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, গত রবিবার রাতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব একাধিক বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় নেমে প্রতিক্রিয়া দেখানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঘেরাওয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, গত শুক্রবার ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকের পর বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও গণতন্ত্রের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান ফের স্পষ্ট করেছে।
গত ৩১ অক্টোবর থেকে চার দফায় ১৯৬ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানেও কর্মসূচি নিয়ে দলের নেতারা সন্তুষ্ট।
দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘প্রত্যাশা অনুযায়ী ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক নেতারা রাজপথে অবরোধের সমর্থনে কর্মসূচি করছে। তবে অন্যান্য অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠন এবং বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতাদের ভূমিকায় দলের নীতিনির্র্ধারকরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।’
গতকাল জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘তফসিল ঘোষণা হলে দল থেকে যে কর্মসূচি দেবে, সেই কর্মসূচি পালন করতে হবে। কেউ যদি অনুপস্থিত থাকে, তাহলে দ্রুত নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে।’
এদিকে জামায়াতে ইসলামী ও যুগপৎ আন্দোলনের জোট ও দলগুলোকে রাজপথের আন্দোলনে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। বিএনপি নেতারা জানান- ডান, বাম এবং ইসলামপন্থি- সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তিকে তারা পাশে চান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘বর্তমান সরকার নতুন করে আবার একদলীয় সরকার গঠন করে দেশের মানুষের ভোটাধিকারসহ সব মৌলিক অধিকার হরণ করেই চলবে- এটা বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ আর হতে দেবে না।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে না। দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারসহ জনগণের সব অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এই আন্দোলন। দাবি আদায়ে অবরোধের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। জনগণের দাবিকে পাশ কাটিয়ে তফসিল হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এদিকে একতরফা তফসিল হলে আজ বুধবার বিকাল ৩টায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটক থেকে মিছিল নিয়ে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে রওনা হবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার পরের দিন জেলা ও মহানগর পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করবে দলটি।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) শীর্ষস্থানীয় এক নেতা বলেন, নির্বাচনের নামে সরকারের কোনো প্রহসনে তারা পা দেবেন না। একতরফা তফসিল ঘোষণা হলে সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে আমরা বিক্ষোভ সমাবেশের আহ্বান জানিয়েছি। এরপর প্রয়োজনে হরতাল-অবরোধ দেব। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি হতে পারে। আন্দোলনের কর্মসূচি লাগাতার থাকবে।
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম এক বিবৃতিতে বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধী দলগুলো আন্দোলন করছে। দেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। বিরোধী দলের অনেক শীর্ষ নেতাসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এমতাবস্থায় তফসিল ঘোষণা করলে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতির দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।
এমএস