ঢাকা : সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ‘সম্মানে’ ফাঁকা রাখা ময়মনসিংহ-৪ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি; দলের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা সরকার।
আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটকে সামনে রেখে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার আগের রাতে এই সিদ্ধান্ত হলো।
দলের চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত সোমবার জাতীয় পার্টি তিনশ আসনের মধ্যে ২৮৭টিতে প্রার্থী ঘোষণা করে। ফাঁকা রাখা আসনের একটি ছিল ময়মনসিংহ-৪, যেটি থেকে গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ভোট করে আসছেন রওশন এরশাদ।
জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব নিয়ে চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্বে এবারের মনোনয়নে রওশন অনুসারীরা বলতে গেলে সবাই বাদ পড়ে গেছেন।
রওশন ও তার অনুসারীদের অনেকেই দলের মনোনয়ন ফরমও তোলেননি। তবু রওশনের ‘সম্মানার্থে’ তার ময়মনসিংহ-৪ আসন ফাঁকা রাখার কথা বলেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
তবে দুই দিন পরেই রওশনের সম্মানের সেই আসন দিয়ে দেওয়া হয় মুসা সরকারকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, ম্যাডাম তো আসেনি। কালকে তো মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট। ওনি আসবেনই না, তাহলে আমরা আসন ফাঁকা রাখব কেন?
কেবল রওশনের আসনেই প্রার্থী দিলেন, নাকি ফাঁকা রাখা অন্য আসনগুলোতেও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, যারা যারা এসেছে, তাদের দিয়েছি। মনে হয় দুই তিনটাতে নিয়ে গেছেন।
সেগুলো কোন কোন আসন, তা নিশ্চিত করতে পারেননি চুন্নু, যিনি নিজে তার নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে অবস্থান করছেন।
গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে সেই আসন থেকে চুন্নু জিতে এসেছে। আওয়ামী লীগের সমর্থনে। তবে এবার সেখানে ক্ষমতাসীন দল নৌকা দিয়েছে মো. নাসিরুল ইসলাম খানকে। তিনি ছিলেন করিমগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান। নির্বাচন করতে তিনি পদ ছেড়েছেন। তার পদটি শূন্য ঘোষণা করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
রওশনের আসনে প্রার্থী ঘোষণার বিষয়ে জাতীয় পার্টি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি রাত আটটার দিকেও। দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও বিশেষ দূত মাশরুর মওলা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তিনি এখনও জানেন ময়মনসিংহ-৪ আসন ফাঁকা।
তিনি বলেন, দুই ঘণ্টা আগেও চেয়ারম্যানের (জি এম কাদের) সঙ্গে ছিলাম। ওনি তো বললেন, রওশন এরশাদ বলেছেন তিনি নির্বাচন করবেন না। কিন্তু যদি লাস্ট মোমেন্টে মাইন্ড চেঞ্জ করেন, সে জন্য আসনটি ফাঁকা থাকবে।
২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রওশন ও জি এম কাদেরের মধ্যে যে টানাপড়েন চলছে, তার প্রভাব পড়েছে এবারের মনোনয়নে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী রওশন তার নিজের এবং সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার জন্য রংপুর-১, ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদের জন্য রংপুর-৩, ময়মনসিংহ জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি কে আর ইসলামের জন্য ময়মনসিংহ-৬, পিরোজপুর-৩ এ রুস্তম আলী ফরাজীসহ কয়েকটি আসন চেয়েছিলেন।
কিন্তু জি এম কাদের রাঙ্গার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে রাজি নন, তার আসনে প্রার্থী করা হয়েছে জি এম কাদেরের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারকে। জি এম কাদের নিজে দাঁড়াবেন রংপুর-৩ আসনে। এমনকি ১৯৯১ সাল থেকে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে চার চারবার সংসদ সদস্য রুস্তম ফরাজীকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে রাতে রওশন এরশাদকে নিয়ে বৈঠকে বসেছেন তার অনুসারীরা। এই তথ্য নিশ্চিত করে মশিউর রহমান রাঙ্গা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নির্বাচনে আমরা যাব, কীভাবে যাব সেই বিষয় নির্ধারণ করতেই আজকে বৈঠক।
রাঙ্গা অবশ্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করার আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।
এমটিআই