বরিশাল : নৌকা নিয়ে এলেই কি ভোটে জিতে যাবেন নেতা শাহজাহান ওমর? এ প্রশ্ন তার নির্বাচনি এলাকা ঝালকাঠি-১ রাজাপুর-কাঁঠালিয়ায়। ওমর নৌকা পাওয়ায় এরই মধ্যে সেখানে ভোটযুদ্ধ থেকে ছিটকে পড়েছেন দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বর্তমান এমপি বিএইচ হারুন। তিনি যেহেতু নেই তাই ওমরকে ঠেকানো যাবে না ভাবা হলেও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
একদিকে যেমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জোরেশোরে মাঠে নেমেছেন ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান মনির তেমনই ওমরের হঠাৎ এ নৌকা পাওয়া মানতে পারছেন না আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সরাসরি কিছু না বললেও তারা যে থাকবেন না ওমরের সঙ্গে সেটি নানাভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন আভাসে-ইঙ্গিতে।
এদিকে শুক্রবার ঘোষণায় জাতীয় বেইমান আখ্যা দিয়ে ওমরকে ঝালকাঠিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে জেলা বিএনপি। এর আগে বৃহস্পতিবার তাকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয় কেন্দ্র। সব মিলিয়ে ৪৪ বছরের সম্পর্ক ভেঙে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা ওমরের জয়ী হওয়া কঠিন মনে করছেন এলাকার মানুষ।
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে এই প্রথম জেলে গিয়েছিলেন ওমর। জামিনে বের হয়েই নৌকা প্রতীকে দাখিল করেন মনোনয়ন। সবকিছুই পুরোনো আয়োজনের ফসল বলে মনে করেন রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বলেন, বিএনপিতে থাকাকালেই তার বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলার অভিযোগ ছিল। এ নিয়ে কেন্দ্রকে বহুবার বলেছি। তারা কানে তোলেনি। তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে সেগুলোও কিন্তু রাজনৈতিক নয়, দুর্নীতির। পিঠ বাঁচাতেই বেইমানি করলেন ওমর। ঝালকাঠি-১ বিএনপির ভোট দুর্গ। সেই ভোট তো আর তার সঙ্গে রইল না। ওদিকে আওয়ামী লীগে অনেক নেতা। বর্তমান এমপি যেমন চাইবেন না ওমর এমপি হোক, তেমনই ভোটের মাঠে আছেন তাদের আরেক নেতা মনিরুজ্জামান মনির। আমি মনে করি, এই বেইমানি তাকে ছুড়ে ফেলবে রাজনীতির আস্তাকুঁড়ে।
কেবল আজাদ নন, দলত্যাগী ওমরের রাজনীতি এখানেই শেষ বলে মনে করেন স্থানীয় বিএনপির অন্যরাও। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন বলেন, তাকে এ রকম না করতে বহু অনুরোধ করেছি। এখন পরিণতি ভোগ করবেন।
দলত্যাগী ওমর সম্পর্কে বিএনপি নেতাদের এসব কথা স্বাভাবিক মনে হলেও গোল বেধেছে নির্বাচনি এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে। দল পালটে ওমরের নৌকা নিয়ে নির্বাচন করা মানতেই পারছেন না দুই উপজেলার ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ড্যাজলিং তালুকদার বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় এ ওমরের ক্যাডার বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে পালিয়ে থেকেছি। ওমরের নির্দেশে হওয়া মামলায় এখনো আদালতে হাজিরা দিই। এখন সে যদি এসে বলে নৌকার প্রার্থী-সেটা কী করে মানব ভেবে পাচ্ছি না। কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল বাশার বাদশা বলেন, হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ সেটা কাকে বলব?
তারপরও পাথরচাপা কষ্ট বুকে নিয়ে নৌকার কথাই বলতে হবে। উপজেলা সহসভাপতি রুস্তুম আলী খান বলেন, পিঠ বাঁচাতে দলে আসা ওমরকে আওয়ামী লীগের সাধারণ ভোটাররা কতটুকু ভালোভাবে নেবে সেটা তারা বলতে পারবে।
রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মৃধা বলেন, এখন পর্যন্ত কেন্দ্র কিংবা জেলার কোনো নির্দেশনা পাইনি। সত্যি যদি ওমরকে নৌকা দেওয়া হয় তাহলে এটা হবে আমাদের বড় নৈতিক পরাজয়। যার কারণে মাসের পর মাস পালিয়ে বেড়িয়েছি তার জন্য ভোট চাইতে হবে ভাবতেই তো কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে।
রাজাপুরে বিএনপির অফিস ছিল উপজেলা শহরের বাইপাস সড়কে শাহজাহান ওমরের মালিকানাধীন ভবনে। আইনমন্ত্রী থাকার সময় এটি এবং বরিশাল নগরে থাকা বীরউত্তম ভবনসহ মোট ৩টি আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেন তিনি। নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দাখিল ও ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার ওমরের বাইপাসের বাসা থেকে খুলে ফেলা হয় বিএনপির সাইনবোর্ড ব্যানারসহ ফেস্টুন বিলবোর্ড। এ ভবন এখন নৌকার নির্বাচনি কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওমরের এভাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা বিষয়ে জানতে চাইলে বাগড়ী বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আনোয়ার হাওলাদার বলেন, আওয়ামী লীগের মুনির স্বতন্ত্র প্রার্থী না হলে হয়তো ভিন্ন কিছু হতো। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি নৌকার লোকজনই তো তার সঙ্গে থাকবে বলে মনে হয় না।
ওমরের নিজ গ্রাম সাঙ্গরের বাসিন্দা আয়মান খলিফা বলেন, বিএনপির ভোটাররা তো ভোট দিতে যাবে না। বাকি রইল আওয়ামী লীগের ভোট। এখানে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন বর্তমান এমপিসহ ৬ জন।
এ ৬ জন ও তাদের অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা যে ওমরকে ভোট দেবে না সেটা নিশ্চিত।
এ ব্যাপারে কথা বলতে শাহজাহান ওমরের ফোনে বেশ কয়েকবার কল দেওয়া হলেও ধরেননি তিনি। মোবাইলে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও উত্তর দেননি।
এমটিআই