ঢাকা: সোমবার রাতে গণভবনে ১৪-দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের শুরুতে ‘এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড’ জেতায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ১৪ দলের নেতারা।
বৈঠক শেষে নৈশভোজে অংশ নেন নেতারা। এ সময়ও অনানুষ্ঠানিক নানা আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী ও শরিক দলের নেতারা।
বৈঠকে অংশ নেওয়া সূত্রগুলো বলছে, আসন নিয়ে সমঝোতা হলে শরিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। তবে যেসব আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন, তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর ব্যাপারে কোনো চেষ্টা চালাবে না আওয়ামী লীগ।
জোটের শরিক দলের একজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়টি তোলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি স্বতন্ত্র কাউকে বসে যেতে বলবেন না। কারণ, ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য তিনি ইতিমধ্যে স্বতন্ত্র দাঁড়াতে বলেছেন। ভোট উৎসবমুখর করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী দরকার আছে।
বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, শিগগিরই আসন বণ্টনের বিষয়ে সমঝোতা করে ফেলতে হবে। এরপরও কোথাও সমস্যা হলে তিনি দেখবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শরিকদের কটি আসনে ছাড় দেওয়া হবে-এ বিষয়ে কাজ করতে আওয়ামী লীগের চারজন নেতার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়।
এখন এই কমিটির সদস্যরা শরিকদের সঙ্গে আরও কথা বলবেন। এরপর তালিকা চূড়ান্ত হলে জোটের প্রধান শেখ হাসিনার কাছে জমা দেবেন। এ বিষয়ে বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, শিগগিরই আসন বণ্টনের বিষয়ে সমঝোতা করে ফেলতে হবে। এরপরও কোথাও সমস্যা হলে তিনি দেখবেন।
এদিকে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ১৪ দলের বৈঠক সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন বলে জানা গেছে।
শরিক দলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, তাদের ছোট দল, এ জন্য বারবার নৌকা প্রতীকে ভোট করেন। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক মূল্য আছে। তাদের যেন ভুঁইফোড় দলের সঙ্গে তুলনা করা না হয়।
বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা করেন। এরপর শরিক দলের বেশ কয়েকজন নেতা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এরপর খাবার টেবিলে আলোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেছেন, তিনি সংবিধানের বাধ্যবাধকতার বাইরে যেতে পারবেন না। দেশি-বিদেশি নানা চাপ, ষড়যন্ত্রের মধ্যে তিনি চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। নির্বাচন দেশে যথা সময়ে হবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না।
সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেছেন, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। কিন্তু তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। তিনি পিছপা হবেন না। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। দেশের জনগণের প্রতি তাঁর আস্থা আছে।
বৈঠকের সূত্রে আরও জানা গেছে, শরিক দলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, তাঁদের ছোট দল, এ জন্য বারবার নৌকা প্রতীকে ভোট করেন। কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক মূল্য আছে। তাঁদের যেন ভুঁইফোড় দলের সঙ্গে তুলনা করা না হয়। ভোটের পরও নানা চাপে তাদের বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মূল্য আছে বলেই তো একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরও অনেক দূর যেতে হবে।
একজন নেতা বলেন, জোটের আসনে থাকা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উঠিয়ে দেওয়া যায় কি না। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এটা তিনি করবেন না। তিনি এ-ও বলেছেন, জাতীয় পার্টিসহ সব দলকে তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে বলেছেন। নিজের দলের নেতাদেরও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মোকাবিলা করে জিতে আসতে হবে। ১৪ দলের শরিকেরাও যাতে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি অর্জন করে, সেই পরামর্শ দেন।
বৈঠক শেষে একটি শরিক দলের প্রধান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মনে হচ্ছে আসন-সমঝোতা চূড়ান্ত হতে সময় লাগবে। দু-এক দিনের মধ্যে শীর্ষ কয়েকজন নেতার আসন চূড়ান্ত হয়ে যাবে। বাকিগুলো ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত গড়াতে পারে। ওই নেতা আরও বলেন, শরিকেরা তাদের কথা বলেছে। প্রধানমন্ত্রী বেশির ভাগ বক্তব্যই শুনেছেন। জবাব দিয়েছেন কম। এখন জোটের প্রধান শেখ হাসিনা কী করেন, সেদিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তেমন কিছু করার নেই।
গত সোমবার ১৪ দলের শরিকেরা জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর কাছে নিজেদের প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে। এমনকি তালিকায় শরিকদের অগ্রাধিকারের আসন কোনগুলো, সেটাও উল্লেখ করা হয়।
জোটের সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় পার্টি (জেপি), তরীকত ফেডারেশন ও সাম্যবাদী-এই দলগুলো সব মিলিয়ে ২৫টির মতো আসন তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছে।
তবে আওয়ামী লীগ এবার ছয়-সাতটির বেশি আসন জোটের শরিকদের দিতে রাজি নয়। গতকালের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শরিকদের বলেন, যেসব আসনে শরিকেরা ছাড় পাবে-এর বাইরেও শরিকদের প্রার্থী রাখতে হবে। তারা নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করবেন। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে।
বর্তমান সংসদে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব আছে ওয়ার্কার্স পার্টির তিনটি, জাসদের তিনটি এবং তরীকত ফেডারেশন ও জেপির একটি করে আসন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে আটটি আসন রয়েছে তাদের। সব কটিতেই নৌকা প্রতীকে ভোট করে জয়ী হন শরিক দলের নেতারা।
এবার বেশ কিছু আসনে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের ফেনী-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নির্বাহী সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী। গতকাল বৈঠক শেষে শিরীন আখতারের আসন নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। তবে সূত্র বলছে, এটি ছাড় না দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এআর