• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১
আসন ভাগাভাগি

১৪ দলে অপেক্ষা বাড়ল


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৫, ২০২৩, ০১:৪৫ পিএম
১৪ দলে অপেক্ষা বাড়ল

ঢাকা : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের ১৪ দলের শরিকদেরকে কোন কোন আসনে ছাড় দেবে, সে সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) গণভবনে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর বলা হয়েছিল, মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে জানাবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

কিন্তু মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসে ওবায়দুল কাদের জানালেন, আসন বণ্টনের সিদ্ধান্ত জানাতে আরো সময় লাগবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, চৌদ্দ দলের সাথে আমাদের একটা সমঝোতা অবশ্যই হবে। এ ব্যাপারে আমু ভাই (আমির হোসেন আমু) আমাদের সমন্বয়ক। বিষয়টি আজ-কালের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে।

২০০৮ সাল থেকেই ১৪ দল ও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে আসছে। তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দুটিতে জোটের শরিক হিসেবে ছিল জাতীয় পার্টিও। তবে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের পর জাতীয় পার্টি জোটে ছিল না। এবারও বিএনপি ভোটে আসেনি, জাতীয় পর্টিকেও জোটে রাখা হয়নি।

২০১৪ সালে জোট না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছে, এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেসব আসনেই জয় পায় দলটি। একাদশে জোট করার পর তাদেরকে দেওয়া হয় ২৬টি আসন, এর মধ্যে তারা জয় পায় ২৩টিতে। এবার দলটিকে কোথাও ছাড় দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি আওয়ামী লীগ।

গত নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদেরকে ১৬টি আসনে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ১৪টিতে প্রার্থীরা ভোট করে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায়, জাতীয় পার্টি (জেপি) দুইজন প্রার্থী তাদের দলীয় প্রতীক বাইসাইকেল নিয়ে ভোটে অংশ নেয়।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫টি আসন পায় ওয়ার্কার্স পার্টি। আসনগুলো ছিল ঢাকা-৮, রাজশাহী-২, বরিশাল-৩, ঠাকুরগাঁও-৩ ও সাতক্ষীরা-১। এর মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী ও সাতক্ষীরায় জয় পায় দলটি।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ পায় তিনটি আসন। এগুলো হল কুষ্টিয়া-২, ফেনী-১ ও বগুড়া-৪। দলটির দুই নেতা জয় পান কুষ্টিয়া ও ফেনীতে।

বিকল্পধারাকে দেওয়া হয় মুন্সীগঞ্জ-১ ও লক্ষ্মীপুর-৪ ও মৌলভীবাজার-২ আসন। তাদের প্রার্থীরা জয় পান মুন্সীগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরে।

তরীকত ফেডারেশন পায় লক্ষ্মীপুর-১ ও চট্টগ্রাম-২ আসন। দলটির প্রার্থী জয় পান চট্টগ্রামে।

জাতীয় পার্টি (জেপি) পায় কুড়িগ্রাম-৪ ও পিরোজপুর-২ আসন; এর মধ্যে জয় পায় পিরোজপুরে।

বাংলাদেশ জাসদ পায় চট্টগ্রাম-৮ আসন। সেই আসনে বিজয়ী প্রার্থী মইন উদ্দীন খান বাদল ২০২০ সালে মারা গেলে আওয়ামী লীগের নেতা মোসলেম উদ্দিন আহমেদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তারও মৃত্যু হয় ২০২৩ সালে। গত ২৭ এপ্রিল আবার উপনির্বাচন হলে জয় পান আওয়ামী লীগের নোমান আল মাহমুদ।

এই আসনগুলোর বাইরে আরও অনেকগুলোতে এসব দলের একক প্রার্থী ছিল গত নির্বাচনে।

এবার দুটি আসন ছেড়ে ২৯৮ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে তারা জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যাবে, এ কথা নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে জানিয়েছে আগেই। একইভাবে ১৪ দলের শরিক দলগুলোও আলাদাভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে।

কোন কোন আসনে সমঝোতা হবে, তা ঠিক করতে সোমবার সন্ধ্যায় জোট শরিকদের নিয়ে গণভবনে বসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।

শরিক দলগুলোর মধ্যে ছিলেন ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা; জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার; জাতীয় পার্টি (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে মেনন বলেন, আমরা জোটগতভাবে নির্বাচনে যাচ্ছি- এই বিষয়টা চূড়ান্ত হয়েছে। আর আসনের বিষয়টি আমির হোসেন আমু ভাই আর ওবায়দুল কাদের বসে ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, এটা সবাই মেনেই বৈঠক শেষ করেছি।

আর নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, আমরা জোটগতভাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করব। আসনের বিষয়টা নিয়ে আমু ভাই কথা বলে ঠিক করবেন।

সমন্বয় করার জন্য আমু ভাই, ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বাহাউদ্দিন নাছিমকে দিয়ে টিম গঠন করে দেয়া হয়েছে।

দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোটবদ্ধভাবেই আমরা নির্বাচন করব। তবে কিছু কিছু জায়গায় এককভাবেও প্রার্থী দেওয়া হবে। তবে আসন বণ্টন প্রক্রিয়া এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, ১৪ দলের শরিকদের বেশির ভাগ নেতা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। কেউ কেউ নিজের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবেন।

এবার জাসদ আসন চেয়েছে আটটি। বর্তমানে দলটির সংসদ সদস্য আছেন তিনজন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আসন চায় সাতটি। এ সংসদে দলটির সংসদ সদস্য আছেন তিন জন।

তরীকত ফেডারেশনের বর্তমানে একজন সংসদ সদস্য থাকলেও এবার তারা পাঁচটি আসন আশা করছে। জাতীয় পার্টি (জেপি) পাঁচটি আসন দাবি করলেও বর্তমানে দলটির একজন সংসদ সদস্য আছেন।

সাম্যবাদী দলের কোনো সংসদ সদস্য না থাকলেও এবার তারা একটি আসন চায়। জোটের বাকি শরিক দলের বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব নেই, তবে প্রত্যাশা আছে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমার পর যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে সোমবার। আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার সুযোগ আছে। সেদিনই জানা যাবে, কারা হবেন চূড়ান্ত প্রার্থী। শেষ দিন জোটের প্রধান দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তার নিজের ও শরিকদের নাম পাঠাবে নির্বাচন কমিশনে।

১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে ভোটের প্রচার, যা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। সব শেষে আগামী ৭ জানুয়ারি হবে ভোটগ্রহণ।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!