• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

আবার ক্ষমতায় এলে যা যা করতে চায় আ.লীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩, ০১:১৫ পিএম
আবার ক্ষমতায় এলে যা যা করতে চায় আ.লীগ

ঢাকা : টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে’ উত্তরণের পথে নিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবনমানের উন্নয়ন ঘটিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ জাতির কাতারে পৌঁছানোর যাত্রা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে।

দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের হাতে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতা দেওয়া হলে, বিগত বছরগুলোতে নেওয়া দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠিত হবে।

সেজন্য আবারও নৌকায় ভোট চেয়ে তিনি বলেছেন, “আপনারা আমাদের ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি দেব।”

২০০৮ সালের ‘দিনবদলের সনদ’, ২০১৪ সালের ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’, ২০১৮ সালের ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ এর পর আসন্ন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে– ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান, গত ১৫ বছরের অর্জন এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ধরে সাজানো হয়েছে ৯৮ পৃষ্ঠার এই ইশতেহার।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা, যিনি গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের সরকার পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রযুক্তি সক্ষমতা একান্ত প্রয়োজন। এজন্য আমরা ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সরকার’, ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ ও ‘স্মার্ট সমাজ’– এই চারটি স্তম্ভের সমন্বয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিই।

স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করছি। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ।

এবারের ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মত ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

বিশেষ অগ্রাধিকার

১. দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

২. কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।

৩. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

৪. লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

৫. দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো।

৬. ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

৭. নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা।

৮. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সকলকে যুক্ত করা।

৯.আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

১০. সাম্প্রদায়িকতা এবং সকল ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা।

১১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।

সুশাসনের অঙ্গীকার : গত ১৫ বছরে অনেক উন্নয়নের পরও যেসব ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে, তার মধ্যে ব্যাংক খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং খেলাপি ঋণের বিষয়টি অন্যতম। এবারে ইশতেহারে খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর হওয়ার অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ।

শেখ হাসিনা বলেছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং এক্ষেত্রে ব্যাংক যাতে বিধি নির্ধারিত সঞ্চিতি রাখে তা নিশ্চিত করা হবে।

আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমনে উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিল খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য পাঠ্যক্রমে দুর্নীতির কুফল ও দুর্নীতি রোধে করণীয় বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করার প্রতিশ্রুতিও এসেছে ইশতেহারে।

নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করে শেখ হাসিনা বলেছেন, “মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে আমরা সদা তৎপর। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদই পারে কেবল জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে।

আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করব।

আইনের শাসন ও মানবাধিকারের সপক্ষে আওয়ামী লীগ ‘সবসময়ই সোচ্চার’ দাবি করে শেখ হাসিনা বলেছেন, “সামাজিক বৈষম্য নিরসন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাঙ্খিত শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। যেখানে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা এবং সুবিচার নিশ্চিত হবে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে আমরা সদা তৎপর। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদই পারে কেবল জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে।

আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করব।

আরো একবার সুযোগ দিন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে অনুষ্ঠানস্থলে আসার পর জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর দেওয়া বক্তব্য ও ইশতেহার প্রণয়নের নানা দিক তুলে ধরেন নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য দেন এরপর। একটি অডিও-ভিডিও উপস্থাপনার পর ইশতেহার ঘোষণা করতে আসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে একটি ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি করেছে তার দল। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮-এর নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনাগুলোর ধারাবাহিকতা দ্বাদশ নির্বাচনি ইশতেহারেও রক্ষিত হয়েছে।

আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা থাকা সত্ত্বেও সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে সবসময়ই যে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি, এমন দাবি করব না। তবে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথামালার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা যা বলি তা বাস্তবায়ন করি। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন তার প্রমাণ।

লিখিত বক্তৃতায় শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে বলেন, বিগত ১৫ বছরের সরকার পরিচালনার পথ-পরিক্রমায় যা কিছু ভুলত্রুটি তার দায়ভার আমাদের। সাফল্যের কৃতিত্ব আপনাদের। আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা কথা দিচ্ছি, অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করব।

তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর যে ব্রত নিয়ে তিনি রাজনীতি করে আসছেন, সেই পথ থেকে তিনি সরে যাবেন না।

আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়েই আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই, বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এই উত্তরণ যেমন একদিকে সম্মানের, অন্যদিকে বিশাল চ্যালেঞ্জেরও। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা থাকতে হবে।

তার দাবি, ‘একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে’ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে।

জাতির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আসুন, আরও একবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!