ঢাকা : গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থা এখন ‘বেশ ক্রিটিক্যাল’ বলে বর্ণনা করে তার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের কথা বলার পর চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে তথ্য দিয়েছেন মির্জা ফখরুল।
শুক্রবার (২১ জুন) গভীর রাতে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতে সাড়ে ৩টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নেওয়া হয় বিএনপি নেত্রীকে।
এভারকেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা চলছে। সেখানে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক ও নার্স বাদে সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে।
ফখরুল বলেন, আমি আজকে (শনিবার) দুপুর দেড়টায় ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলাম। এখন তিনি সিসিইউতে আছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং চিকিৎসকরা এখন কাউকে ভেতরে যেতে দিচ্ছেন না।
আমি তার চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে যেটা বুঝলাম, ডাক্তারদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি যে, তার অবস্থা বেশ ক্রিটিক্যাল। তারা আজকে সন্ধ্যায় সম্ভবত আবার বোর্ড মিটিং করবেন এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় কী হবে, তা নির্ধারণ করবেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায়র কারাদণ্ডের সাজা পেয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যান। হাই কোর্টে আপিলে সাজা বেড়ে দ্বিগুণ হয় একই বছরের অক্টোবরে। সেই মাসেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৭ বছরের সাজা হয় তার।
জামির চেয়ে উচ্চ আদালতে সব আবেদন ব্যর্থ হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবার প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানালে নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করেন তিনি। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য সাময়িক মুক্তি পেলে। এরপর প্রতিবার ছয় মাস করে মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছে সরকার।
এই মুক্তির শর্ত হিসেবে দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছেন না বিএনপি নেত্রী। একাধিকবার তার পরিবারের আবেদন নাকচ করেছে সরকার। বিএনপির পক্ষ থেকে নানা সময় তাদের নেত্রীর জীবন সংকটে দাবি করা হয়। তিনি ‘জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে’ বলেও বছর দুয়েক আগে দাবি করেছিলেন ফখরুল।
সাময়িক মুক্তির পর খালেদা জিয়া ১০ বারের বেশি হাসপাতালে গেছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর পর বাসায় ফেরার আগে টানা পাঁচ মাস ভর্তি ছিলেন। এর আগেও একবার ৮৩ দিন ভর্তি ছিলেন।
খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণের কাছে আহ্বান জানাই তারা যেন ম্যাডাম সুস্থ হোন সে জন্য দোয়া করেন। আল্লাহতায়ালার কাছে সেই দোয়া চাই।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডাম সিসিইউতে ডাক্তারদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। চিকিৎসা চলছে। নতুন করে কিছু বলার মত নেই।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক একিউএম মহসিনসহ মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা কয়েক দফা বসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করেছেন।
মেডিকেল বোর্ডের এসব বৈঠকে লন্ডন থেকে পুত্রবধূ জোবায়েদা রহমান এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকেন জানিয়ে জাহিদ বলেন, ম্যাডামের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে তাৎক্ষণিক যা করণীয়, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
গত ২ মে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ওই সময় চিকিৎসকরা তাকে সিসিইউতে রেখে দুদিন চিকিৎসা দেন।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিস ছাড়াও হৃদ্রোগ, ফুসফুস, লিভার ও কিডনিজনিত বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :