ঢাকা : বিএনপির প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘পরিষ্কার বলে দিতে চাই, আন্দোলন করছেন, করেন। আন্দোলনে সহিংসতার উপাদান যুক্ত হলে খবর আছে। খবর আছে।’
শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ও অন্য নেতারা বক্তব্য দেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে যখন আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির সমাবেশ চলছিল। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশ করে বিএনপি।
ওবায়দুল কাদেরের মতো আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি সরকারের এখতিয়ার নয়। দেশে আইন আছে, আদালত আছে। আদালত যদি মুক্তি দেয় তাদের আপত্তি নেই। তবে আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় নেতাকর্মীদের প্রতিও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে প্রস্তুত করুন। তার আগে বলব বাড়াবাড়ি কেউ করবেন না। সারা বাংলাদেশে সবার উদ্দেশ্যে বলছি বাড়াবাড়ি করবেন না। ক্ষমতার দম্ভ কেউ দেখাবেন না। কাউকে ক্ষমা করা হবে না।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আবারও খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে, অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি রয়েছে। দুর্নীতিবাজদের কারও ছাড় নেই, কারও ক্ষমা নেই। এটা শেখের বেটি। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দেখিয়ে দেবেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি কতটা কঠোর হতে পারেন।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতিবাজরা এদেশে বেশি দুর্নীতি, দুর্নীতি বলে। যারা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে তাদের মধ্যে কত যে দুর্নীতিবাজ! একটু খুঁজে দেখেন পেয়ে যাবেন, আশপাশেই আছে।
বিএনপির মুখে দুর্নীতির কথা মানায় না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি মানেই দুর্নীতিবাজ। আর জাতীয়তাবাদী দুর্নীতিবাজ দল। তারেক রহমান দ-প্রাপ্ত পলাতক আসামি। কীসের দ-প্রাপ্ত? অভিযোগ, হাজার কোটি টাকা পাচার। অভিযোগ দুর্নীতি। বিএনপি নেতারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন, লজ্জা করে না। আপনাদের এক নম্বর নেতা তো বড় দুর্নীতিবাজ। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে আজ লন্ডনে বসে বিলাসী জীবন কাটাচ্ছেন। নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। ওই দুর্নীতিবাজকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। বিচার করতে হবে। সব তদন্ত হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি বড় বড় কথা বলে। বিএনপি নেতাদের আন্দোলনে জোর নেই, মুখের বিষে যত জোর। তাদের মুখের বিষ উগ্র। কিন্তু তাদের আন্দোলন কী? তাদের আন্দোলন ভুয়া। আন্দোলন দুই কূলের গাঙ। এতে আওয়ামী লীগ সরকার এতটুকুও বিচলিত নয়।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কী বলব, বিএনপিতে এখন আতঙ্কের নাম তারেক রহমান। মধ্যরাতে টেমস নদীর পাড় থেকে ফরমান আসে। একজন গেল, আরেকজন এলো, মধ্যরাতের ফরমান। তারেক রহমানের এ ফরমানে ফখরুল ইসলাম, গয়েশ্বর বাবু কোথায় যান? কেউ জানে না। এই জন্যই এখন তারেক রহমানের বন্দনা করছেন। তারেক বন্দনা বেড়ে গেছে বিএনপিতে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি নেতাদের অভিনন্দন জানানোর কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, ‘দালালি করতে চেয়েছিলেন পারেননি, পাত্তা পাননি। যত দোষ, নন্দ ঘোষ আওয়ামী লীগের। আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব। আর আপনারা দাস হয়েও ভারতের সমর্থন চান। ক্ষমতার জন্য আপনাদের যে কারও দাসত্ব মেনে নিতে কোনো আপত্তি নেই। আমরা বন্ধু আছি বন্ধু থাকব।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ৭৫ বছর আওয়ামী লীগের বয়স। দীর্ঘ সংগ্রাম, আন্দোলন, ঝড়, অন্ধকার, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীপ্ত পায়ে এগিয়ে যাওয়ার আরেক নাম আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, ‘আমরা মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে জীবনের জয়গান গাই। আমরা ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সৃষ্টির পতাকা ওড়াই। আমাদের শেকড় বাংলাদেশের মাটির অনেক গভীরে। আমাদের জন্ম জনতার মাঝ থেকে। আমরা অস্ত্র উঁচিয়ে শেষ রাতে ক্ষমতা দখলকারী দল নই। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সৃষ্টিশীল নেতৃত্বে।’
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম বছরব্যাপী উদযাপন করব। সেখানে খবর হয় আমরা নাকি পাল্টাপাল্টি করছি। গতকাল আমরা সাইকেল র্যালি করেছি, বিএনপির কি কিছু ছিল? তাহলে কেন এই অপবাদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন? আমরা সারা বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করব। আমাদের কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করা হবে। আগস্ট মাসের পরে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ হবে। সে সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন।’
আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কয়েকদিন আগে নির্বাচন হয়েছে, উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশে এখন শান্তি দরকার। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য নতুন সরকারের সময় দরকার। বিএনপিকে বলতে চাই, আবার ষড়যন্ত্র করে আজ মিটিং দিয়েছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি আমরা দেব না, দেশে আইন, কোর্ট আছে। কোর্ট যদি মুক্তি দেয় আমাদের আপত্তি নেই। আন্দোলন করে, সন্ত্রাস করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছর আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে। তখন আরেকটি নির্বাচন হবে। তখন ক্ষমতায় এলে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যতদিন থাকবে, জননেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, বাংলাদেশ নিরাপদে থাকবে। আমরা পেট ভরে খেতে পারব। শান্তিতে ঘুমাতে পারব। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সংসদে আছি, সরকারে আছি, রাজপথেও আছি।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ একমাত্র আইনিভাবেই খোলা আছে। আইনি ভাবে লড়াই করেন। আইনি লড়াইয়ে হেরে গেলে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার সুযোগ আছে। আপনারা সেদিকে যাচ্ছেন না। আপনারা সরকারকে অভিযুক্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চান।’
আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা সহজ নয় উল্লেখ করে আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসীদের গডফাদার বিএনপি-জামায়াত সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বলতে চাই আমরা সরকারে আছি, রাজপথে আছি, মানুষের সঙ্গে আছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাঈদ খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
এমটিআই