ঢাকা : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে সরকারকে যেকোনো পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার একদিকে ভোটের অধিকার হরণ করেছে, অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে প্রায় ছয় বছর আটকে রেখেছে। পরিষ্কার বলতে চাই, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন। অন্যথায় যেকোনো পরিস্থিতির জন্য আপনাদের তৈরি থাকতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ কখনো দেশনেত্রীকে এভাবে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি অবস্থায় চলে যেতে দেবে না।’
শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির উদ্যোগে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে মির্জা ফখরুল এ হুঁশিয়ারি দেন। প্রায় আট মাস পর খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি নতুন করে কর্মসূচি শুরু করল। আর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এই প্রথম দলটি সমাবেশ কর্মসূচি দিয়েছে।
বেলা পৌনে ৩টার দিকে বিএনপির সমাবেশ শুরু হওয়ার আগ থেকেই নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হন। দলীয় কার্যালয় পেছনে রেখে ছয়টি খোলা ট্রাক একত্র করে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে টানানো ছিল বিশাল ব্যানার। সেখানে খালেদা জিয়ার প্রতিকৃতির পাশে লেখা ছিল ‘প্রতিহিংসার শিকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সমাবেশ’। মঞ্চের দুই পাশে নয়াপল্টন থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত এবং অন্যপাশে কাকরাইল পর্যন্ত মাইক লাগানো হয়েছিল।
বেলা ২টার দিকে পুরানা পল্টন, বিজয়নগর, ফকিরের পুল ও আরামবাগ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তার পাশে, বিভিন্ন ভবনের সামনে জড়ো হন। পরে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দেন। সকাল থেকে দুই দফা বৃষ্টি হওয়ায় নয়াপল্টনের সড়কের দুই প্রান্তে বেলা ১টা পর্যন্ত পানি জমে থাকলেও নেতাকর্মীতে পরিপূর্ণ ছিল পল্টন কার্যালয়। নেতাকর্মীদের হাতে হাতে খালেদা জিয়ার ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল। কারও কারও হাতে ছিল জাতীয় ও দলীয় পতাকা। তারা ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘জেলের তালা ভাঙব, খালেদা জিয়াকে আনব’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। সমাবেশ ঘিরে কাকরাইল ও ফকিরেরপুল মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সদস্য মোতায়েন ছিলেন। তিন দিনের কর্মসূচির মধ্যে ১ জুলাই সারা দেশের মহানগরে এবং ৩ জুলাই জেলা সদরে সমাবেশ করবে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই। এই সরকার থাকা মানে হচ্ছে, দেশ, গণতন্ত্র, দেশের মানুষ ধবংস হওয়া। দেশনেত্রীকে রক্ষা করতে হলে, নিজেদের রক্ষা করতে হলে সামনের দিকে অবশ্যই আরও তীব্র থেকে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের, আন্দোলনের প্রতীক। তাকে বাঁচাতে হবে, রক্ষা করতে হবে।’ গণতন্ত্র ও অধিকার রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার যে সংগ্রাম, লড়াই, যুগপৎ আন্দোলন করছি, দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলনকে একইভাবে একীভূত করে সোচ্চার আওয়াজ তুলি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তরুণ-যুবকদের কাছে আমার আহ্বান থাকবে, কে আছো জোয়ান, হও আগোয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যৎ। তোমাদের হাতে কিন্তু নির্ভর করছে এ দেশের ভবিষ্যৎ। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুদূরে নির্বাসিত। তাকেও মিথ্যা মামলা ও সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। আমি বলতে চাই, বারবার সময়-সুযোগ আসে না। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এই ভয়াবহ দানবকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।’
সব কারাবন্দি নেতাকর্মীর মুক্তি, ‘মিথ্যা অভিযোগে’ করা মামলা ও সাজা প্রত্যাহারের দাবিও জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের আইন বিশেষজ্ঞ, পানি বিশেষজ্ঞরা ভারতের সঙ্গে চুক্তিকে দেশবিরোধী বলছেন। আমরা পানি চাই, ন্যায্য হিস্যা চাই, সীমান্তে হত্যা বন্ধ চাই। তা না করে এই সরকার সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনা এত গর্ব করে বলছেন, আপনি তো পানি দিয়েছেন তাতে কী হয়েছে। আপনি তো সব সময় দিয়েছেন। এর আগে বলেছিলেন, আমি সব উজাড় করে দিয়েছি। আপনি উজাড় করে দিয়েছেন, তাহলে বাংলাদেশ কী পেল। বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে ঘৃণা, অধিকার হরণ আর বাংলাদেশের যে সম্পদগুলো আছে, সেগুলো লুণ্ঠনের পথ তৈরি হয়েছে।’
সভাপতির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একটা ব্যানারে দেখলাম, খালেদা জিয়া সুস্থ হলে দেশ সুস্থ থাকবে। কথাটা ঠিক। বেগম জিয়া অসুস্থ, পুরো জাতি অসুস্থ। চোর-ডাকাত-বাটপার-বদমাশ সবাই মুক্তি পেয়ে যায় আর দেশনেত্রীকে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) মুক্তি দিতে চান না। পরিষ্কার বলতে চাই, দেশনেত্রীকে যেকোনো মূল্যে মুক্তি দিতে হবে। তার মুক্তির স্বার্থে কোনো আপস কারও সঙ্গে হবে না। তার মুক্তি ইনশা আল্লাহ আমরা করে ছাড়ব।’
মুক্তির লক্ষ্যে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, আরও কর্মসূচি আসবে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বহুদিন পরে আবার বেগম জিয়াকে নিয়ে মুখ খুলেছি, এই মুক্তির আন্দোলন থামবে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘বক্তৃতা থামান, বেগম জিয়াকে মুক্ত করে ঘরে ফেরেন। তাহলেই দেশ মুক্ত, গণতন্ত্র মুক্ত, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব মুক্ত। আমরা ভারতবিরোধী নই, আমরা আমাদের দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের পক্ষে। আমরা চাই না, বন্ধুত্বের নামে আমার দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হোক। এটাই বিএনপির দোষ, এটাই তো খালেদা জিয়ার দোষ।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা বরকত উল্লা বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রুহুল কবির রিজভী, আমিনুল হক, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, এসএম জাহাঙ্গীর, মাহাবুবুল হাসান পিংকু।
এমটিআই