ঢাকা : বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা পরিকল্পিত নয়, এটি বিছিন্ন ঘটনা। এসব হামলা চালিয়ে কিছু মানুষ চলমান পরিস্থিতির সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (১০ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সংখ্যালঘুদের ওপর পরিকল্পিত হামলা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বা অন্য যে কোনো দেশে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যখন কোনো পরিবর্তন আসে, কিছু মানুষ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশের প্রতিটি বিপ্লবে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা—তাঁরা হিন্দু বা মুসলমান যে ধর্মের হন না কেন, শিকারে পরিণত হন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু বিচ্ছিন্ন হামলা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো সুসংগঠিত (সিস্টেমেটিক) হামলা নয়। আর এসব হামলাকে ঘিরে কিছু মানুষ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে।‘ এছাড়া বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ‘অসাধারণ’ উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়া বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে ভারতের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল জোর দিয়ে বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সুদৃঢ় থাকবে এবং বিএনপি ক্ষমতায় এলে এর উন্নতির চেষ্টা করবে।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শেখ হাসিনার সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, যে সরকার অনেক মানুষকে হত্যা করেছে। এছাড়া তিনি ন্যায়ের পক্ষে এবং নিরপেক্ষ ছিলেন না, তার সময়ে, নজিরবিহীন দুর্নীতি হয়েছে। তাই তাকে অপসারণের দাবি ছিল ন্যায্য। ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।
শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে চরমপন্থীদের সম্পৃক্ততা ছিল কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এমন কোনো কিছু ছিল না। জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জামায়াত চরমপন্থী দল নয়। তবে বাংলাদেশে চরমপন্থী কিছু গোষ্ঠী ছিল, সেগুলোর অস্তিত্ব এখন আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।’
তিনি বলেন, এই আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে ছাত্রদের নেতৃত্বে হয়েছে। তাদের অধিকাংশেই অতি প্রগতিশীল। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া অনেকেই অসাধারণ মেধাবী।
শেখ হাসিনা দেশ তাগের আগে পদত্যাগ করেননি বলে জয়ের দাবির বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে প্রেসিডেন্ট নিজেই বলেছেন, তিনি (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করেছেন। সেখানে কোনো জবরদস্তি বা এমন কিছু ছিল না।
তিনি বলেন, যখন লাখ লাখ মানুষ শেখ হাসিনার বাসভবনের দিকে যাত্রা শুরু করেন, তখন তাঁর সামনে দুটি বিকল্প ছিল। একটি হলো থেকে যাওয়া এবং বিক্ষুব্ধ জনতার মুখোমুখি হওয়া। অপরটি হলো দেশ ছেড়ে যাওয়া। আর শেষ মুহূর্তে তিনি (শেখ হাসিনা) দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।’
বাংলাদেশে আবার কবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যদি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন, অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবেন।’
বিএনপি নেতা বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন আয়োজনের জন্য আরও সময় প্রয়োজন। পুরো নির্বাচনব্যবস্থাই দূষিত হয়ে গেছে। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের অবস্থায় নেই। নির্বাচনব্যবস্থায়ও সংস্কার আনতে হবে তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার)।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :