ঢাকা: রাজধানীর নিউমার্কেট ও পল্টন থানার পৃথক দুটি হত্যা মামলায় পাঁচজন ভিআইপি আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু এবং সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি সূত্র জানিয়েছে, মামলাগুলো এখনো থানা পুলিশের কাছেই তদন্তাধীন। তবে ভিআইপি আসামি হিসেবে তাদের মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। সেখানেই তদন্ত কর্মকর্তাসহ ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
হত্যা মামলাসহ দেশে অরাজকতা ও রাজনৈতিক সহিংসতা এবং বিভিন্ন প্রসঙ্গে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের বিষয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তার দাবি, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পুরো বিষয়টি তিনি প্রায় নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন। কিন্তু সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পুলিশকে দিয়ে বলপ্রয়োগ করে আন্দোলন দমাতে চাইলে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি ভেস্তে যায়।
এছাড়া আনিসুল হক অতি-উৎসাহী কিছু পুলিশ কর্মকর্তার ওপরও দায় চাপিয়েছেন। তার দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচারে গুলি চালানোটা উচিত হয়নি। এতে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আসার বিপরীতে আরও বেশি তীব্র আকার ধারণ করেছে।
ডিএমপির একাধিক সূত্র জানায়, বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না বলে দাবি করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুলি করার নির্দেশনা দেওয়ার তারা কোনো অথরিটি নন বলেও দাবি তাদের। আর ডেপুটি স্পিকার হওয়ার পর রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না বলেও দাবি করেন শামসুল হক টুকু।
গ্রেফতারের পর থেকেই বেশিরভাগ সময় কান্নাকাটি করছেন জুনাইদ আহমেদ পলক। ইন্টারনেট শাটডাউনের বিষয়েও তিনি দায় অস্বীকার করেছেন। তার ভাষ্য, প্রতিমন্ত্রী হলেও ইন্টারনেট বন্ধ করার ক্ষেত্রে তার একক কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না।
জিজ্ঞাসাবাদকারী সূত্রের দাবি, ভিআইপি আসামিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়েছেন জুনাইদ আহমেদ পলক। মাঝেমধ্যেই অগোচরে তার চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে। নিজেকে তিনি নির্দোষ দাবি করেছেন। এত দ্রুত সরকারের পতন হতে পারে, তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। যদিও একদিন আগেই স্ত্রী-সন্তানদের বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়ার কথাও তিনি স্বীকার করেছেন।
ভিআইপি আসামিদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় এ প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে চাননি। আসামিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, ওষুধ ও খাবার দেওয়া হচ্ছে বলেও জানায় পুলিশের একাধিক সূত্র।
আইএ