ঢাকা : ৯ বছর পর ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে তিনি নিখোঁজ হন। এরপর তাকে রাখা হয় আয়নাঘরে। সেখানে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা না হলেও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।
একান্ত আলাপকালে ভয়ংকর সেই দিনগুলোর দুঃসহ স্মৃতিচারণা করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘আয়নাঘরে একটা কবরের মতো নির্জন কক্ষে আমাকে রাখা হয়েছিল। যে কক্ষে বিচ্ছুরা প্রবেশ করত। কক্ষে কোনো রকম একটা ছিদ্র ছিল, যেখানে মল-মূত্র করতে হতো। আমাকে লোহার দরজার নিচ দিয়ে খাবার দেওয়া হতো। প্রতিমুহূর্তে গুনেছি মৃত্যুর প্রহর। এভাবে কেটেছে ভয়ানক ৬১ দিন...।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত সাড়ে ৯টা-১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদাপোশাকে এবং অস্ত্রধারীরা উত্তরায় এক বন্ধুর বাসা থেকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর আমাকে একটি গোপন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। জায়গাটি ছিল কবরের মতো, একটি কামরা। আমার মনে হয়েছিল এটি কোনো বাড়ির নিচতলা হবে। কামরাটির আয়তন হবে ৫ ফিট বাই ১০ ফিট। টয়লেটের জন্য জায়গাটাতে কোনো রকম একটা ছিদ্র ছিল, সঙ্গে একটা পানির ট্যাপ। আমাকে লোহার দরজার নিচ দিয়ে খাবার দেওয়া হতো। কামরাটির বাইরে একটি স্ট্যান্ডফ্যান চালু থাকত এবং ছাদের সঙ্গে হাই পাওয়ার লাইট ছিল।
তিনি বলেন, এ ঘরটিতে আমাকে ৬১ দিন রাখা হয়; যার মধ্যে কক্ষটা পরিষ্কার করার জন্য মাত্র এক দিন কিছু সময়ের জন্য বাইরে বের করা হয়েছিল, বাকি দিনগুলো কবরের মতো একটা কক্ষে একাকী কাটাতে হয়েছে। দরজায় শব্দ করলে তারা আসত এবং আমার কথা শুনে বাইরে থেকে চলে যেত। কারও মুখ দেখার সুযোগ ছিল না।
ভীষণ ইচ্ছে হতো প্রিয় মানুষগুলোকে দেখতে, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে কিন্তু সুযোগ ছিল না। একাকী নির্জন একটা কক্ষে দিনের পর দিন আমি মৃত্যুর প্রহর গুনছিলাম। শেখ হাসিনার সরকার একটি নয়, অনেকগুলো আয়নাঘর বানিয়েছিল, যার মধ্যে একটিতে আমাকে বন্দি রাখা হয়েছিল।
চাপ দিয়ে কোনো দাবি মানানোর চেষ্টা হয়েছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাকে প্রায়ই চোখ বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো। নানা প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু আমি তা মানতে রাজি হইনি। তবে এই সময়ে তারা আমাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেনি, ভালো আচরণ করেছে এবং নিয়মিত ওষুধপত্র সরবরাহ করেছে। সূত্র : দেশ রূপান্তর
এমটিআই