ঢাকা : ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।
বিডিআর বিদ্রোহের তদন্তকাজ আমার ভালো লাগেনি, সেখানে অনিয়ম হয়েছে। আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছিলাম না। একটা পর্যায়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কথা না শুনতে। তারা আমার কথা শুনবে না কিন্তু আমাকে আবার ওই পদে থাকতে হবে! সুতরাং আমার মনে হয়েছিল, আমাকে এবং আমার পরিবারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হচ্ছিল না। এরপরও পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চলে যাই। পরে সেখান থেকে তার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। আমি বারবার বলেছি, আমাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু তিনি আমাকে ছাড়বেন না। ওটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বিস্ময়কর ফোনালাপ।’
সোহেল তাজ বলেন, ‘সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল- তিনি (শেখ হাসিনা) ফোনকলে গান গাওয়া শুরু করলেন। তিনি গাইলেন, “আমি তোমাকে ছাড়ব না, আমি কাউকে ছাড়ি না”। আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম। এটার মানে কি? প্রধানমন্ত্রী কি আমাকে হুমকি দিলেন, নাকি স্নেহ দেখালেন! অনেকেই বলেন, এটা স্নেহের একটা বিষয় ছিল। এরকম অনেকগুলো কারণে আমি পদত্যাগ করেছি।’
শেখ হাসিনা আ.লীগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন: শেখ হাসিনা আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল।
সোমবার সাংবাদিক কনক সারোয়ারের ইউটিউব চ্যানেল কনকসারোয়ারনিউজে এক আলাপচারিতায় অংশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সোহেল তাজ।
সোহেল তাজের কাছে কনক সারোয়ার জানতে চান যে, দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় কেন তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন? জবাবে সোহেল তাজ বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার সময় আমি ইন্সপায়ার্ড ছিলাম যে বাংলাদেশে একটি গুণগত চেঞ্জ আসবে। একটা সিস্টেমিক চেঞ্জ আসবে। আমি সেই বিশ্বাস থেকে ইলেকশন করেছিলাম। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, বাট আই ফিল কমপ্লিটলি বিট্রেইড। আমি আস্থা রেখেছিলাম আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ওপর। শি বিট্রেইড মি, শি বিট্রেইড দ্য পার্টি, আওয়ামী লীগ, শি বিট্রেইড বাংলাদেশ। বিকজ আমরা যে দিনবদলের সনদ, যেটা আমরা মানুষের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম করব সেটা করতে হলে প্রথম ছয়মাসেই সেই চিত্র পাওয়া যেত। কিন্তু আমরা তো সেদিকে যাইনি, বরং গতানুগতিক পলিটিক্যাল কালচার মেইনটেন করে আমরা সেটাকে আরও ধ্বংসের পথে…।
এছাড়াও এক ঘণ্টা ৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের দীর্ঘ আলাপচারিতায় সোহেল তাজ নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।
কথা বলেছেন জেলহতা নিয়ে, বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে, আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, বদলি বাণিজ্য, ক্ষমতার বাইরে থাকলে এক হাসিনা, ক্ষমতায় গেলে হাসিনার বদলে যাওয়া, জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার পরও নিজের বোনের আওয়ামী লীগে থাকা এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে সোহেল তাজ বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে না; হত্যা, গুম-খুন-দুর্নীতির সঠিক বিচার হলে এমনিতেই আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :