ঢাকা : দ্রুত নির্বাচনের জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ প্রদানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার পরিকল্পনা করছে দলটি।
সোমবার (১১ নভেম্বর) রাতে দলটির স্ট্যান্ডিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ডিসেম্বরের শুরুতে সমাবেশ শুরু হবে।
এ বিষয়ে বুধবার (১৩ নভেম্বর) দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা করে তফসিল চূড়ান্ত করবে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা।
দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, এই সমাবেশের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের এজেন্ডার আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা না করতে এবং বিএনপির রাজনৈতিক শক্তিকে যাতে খাটো করে না দেখা হয়, সে বিষয়ে তারা একটি বার্তা দেবেন।
এছাড়া ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে আরও একটি বড় জনসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। পাশাপাশি সংস্কারের অজুহাতে অন্তর্বর্তী সরকারের বেশি সময় নষ্ট করা উচিত হবে না মর্মে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে ৩১ দফা প্রস্তাব নতুন করে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেন, সংস্কার রূপরেখার মাধ্যমে জনগণের সমর্থন অর্জনের উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ৩১ দফা প্রস্তাব ফের চালু করার কথা রয়েছে দলটির। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনগুলোর কর্মীদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বিএনপি।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব নেতাকর্মী দেশের বিভাগীয় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরগুলোতে কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে ৩১ দফা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করবেন। সেইসঙ্গে রূপরেখাটি আরও সমৃদ্ধ করতে বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন খাতের লোকদের কাছ থেকে এ বিষয়ে বিএনপি প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করবে বলেও জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, তাদের শেষ দুইটি বৈঠকে সংস্কার, নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক এবং বিএনপির পরবর্তী করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে দলটির সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
ওই নেতা বলেন, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনি প্রক্রিয়া- দুটোই একইসঙ্গে এগিয়ে যাওয়া উচিত। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে একটি (নির্বাচনের) রোডম্যাপ উপস্থাপন করতে হবে। যতদিন এই রোডম্যাপ দেয়া না হবে, ততদিন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন পেছানোর আশঙ্কা থেকেই যাবে।
তিনি বলেন, বিএনপির বিশ্বাস করে যে, এই সরকারের কেবল নির্বাচনি প্রক্রিয়া সংস্কারের দিকেই মনোনিবেশ করা উচিত। কারণ বড় আকারের সংস্কার বাস্তবায়নে এই সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নীতিনির্ধারকদের সন্দেহ, পর্যায়ক্রমে উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো আসলে এই সরকারের দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার কৌশলের অংশ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নিজস্ব চিন্তা ও দর্শনের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের কোনো সুযোগ নেই। তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) কেবল সেই সংস্কারগুলোই বাস্তবায়ন করতে পারে যা সব পক্ষের দ্বারা অনুমোদিত; এতে আমাদের (বিএনপির) কোনো আপত্তি নেই। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশে দ্রুত গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে- এমন সংস্কার তারা করতে পারে।
খসরু বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে ভিশন ২০৩০-এর মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারেক রহমানও এক বছর আগে সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ৩১ দফা সংস্কার পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন। বিএনপি শুধু ঐক্যের ভিত্তিতে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবই উত্থাপন করেনি, তারা এটাও বলেছে যে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যদি আমাদের দলকে সমর্থন দেয় তাহলে জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা হবে।’
তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য, জনগণের পূর্ণ সমর্থন ও আস্থার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের সংস্কার সাধন করতে হবে। আর নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই তা অর্জন করা সম্ভব।
এমটিআই