ঢাকা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ২৪২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আংশিক কমিটি ঘোষণার সাড়ে আট মাস পর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হলো। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের এবারের কমিটি ছাত্রদলের সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে তারুণ্যনির্ভর কমিটি। অর্থাৎ আগের চেয়ে কম বয়সীরা এ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।
এই কমিটিতে জেন্ডার নায্যতা ও সমতা বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন নাফিসা তরঙ্গ। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে আসছে সামাজিক মাধ্যমে। পূর্বের বিভিন্ন স্ক্রিনশটে দেখা যায় তিনি বিএনপি বিরোধী মন্মোভাবী ছিলেন। কিন্তু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি ফেসবুকে একটি ব্যখ্যা দিয়েছেন।
নাফিসা বলেন, আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি সৈয়দ সুকাইনা নাফিসা তরঙ্গ। দেড় দশক ধরে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী লড়াইয়ে যে ছাত্র সংগঠনটি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে গতকাল সেই সংগঠনটির সবথেকে মর্যাদাপূর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে প্রথমবারের মতো 'জেন্ডার নায্যতা ও সমতা বিষয়ক সম্পাদক ' হিসেবে আমাকে মনোনীত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি আমার দায়িত্বের জন্য প্রথমেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এবং ছাত্রদল কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীনতা-সৌন্দর্য আমাকে বরাবরই মুগ্ধ করে।পারিবারিকভাবে আমার পিতা কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের বিগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
পরিবারের সকলে রাজনীতির সাথে জড়িত, তাই ছেলেবেলা থেকেই নির্যাতন-নিপীড়ন কি তা সামনে থেকে দেখেছি যার জন্য আমার সমগ্র জীবনের এক মুহূর্তের জন্যও হাসিনা ও আ.লীগকে পছন্দ করিনি যা আমার ঘনিষ্ঠজনেরা ভালোভাবেই জানেন। মহান স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দলটির প্রতি আমার ফ্যাসিনেশন অনেক আগে থেকেই।
কিন্তু সবাই সম সাহসী না, সবার প্রতিবাদ সমান নয়। কেও রাজপথে থেকে জানান দেয় কেও বা লিখে কেও বা চুপ থেকে। দেশ বা জাতির সেই ক্রান্তিলগ্নে নিজের বাবা রাজপথে থেকে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকার কারণে আমার ছাত্রদলের রাজনীতিতে তখন প্রকাশ্যে কাজ করার সুযোগ হয়নি।
তার ছড়ানো স্ক্রিনশট নিয়ে বলেন, গতকাল দায়িত্ব পাওয়ার পরই আমার কিছু ফেসবুক স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট নিয়ে অনেকে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি আমার স্ট্যাটাসের ভূল ব্যাখ্যা দাড় করানো হচ্ছে।
আমাদের প্রজন্ম যেভাবে বেড়ে উঠেছি তাতে আমাদের রাজনৈতিক ভাষা প্রয়োগের দূর্বলতা থাকতে পারে কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা বা লেখার মতো শিক্ষা পারিবারিক ভাবেই পাইনি এবং ব্যক্তিগতভাবে তার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা ব্যতীত অন্য কিছু কখনও চিন্তাতেও আসেনি।
৭ আগস্ট দীর্ঘ অসুস্থতা সত্ত্বেও জনগণের উদ্দেশ্যে উনার ভাষণকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখে আমাদের প্রজন্মের ভাষা দিয়েই আমি প্রকাশ করতে চেয়েছি কিন্তু অনেকে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা দাঁড় করানোয় হয়তো আমার স্ট্যাটাসটি ভূলভাবে সকলের কাছে যাচ্ছে। তারপরেও যদি কারো মনে আমার স্ট্যাটাস নিয়ে কোনও কষ্ট থেকে থাকে তাহলে দুঃখ প্রকাশ করছি।
রাইসাকে বিয়ে করেননি তৌহিদ আফ্রিদি, কাকে করলেন?রাইসাকে বিয়ে করেননি তৌহিদ আফ্রিদি, কাকে করলেন?
নিজের পদ নিয়ে বলেন, ছাত্রদলে জেন্ডার ন্যায্যতা ও সমতা বিষয়ক পদটি এবারই প্রথম। জেন্ডার সমতা’ এমন একটি ধারণা, যা বিশ্বাস করে নারী-পুরুষের যা অধিকার রয়েছে স্বাধীনভাবে বিকাশের, সক্ষমতা প্রকাশের, প্রচলিত ধ্যানধারণার সংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে বদ্ধমূল সনাতনী ভূমিকা থেকে বের হয়ে আসার।
জেন্ডার সমতা বলতে নারী-পুরুষ, ভিন্ন আচরণ, স্বপ্ন এবং চাহিদার স্বীকৃতি ও যথার্থ মূল্যায়ন।এর মানে এই নয় যে, তাদের (নারী-পুরুষের) অবস্থা একই রকম হয়ে যাওয়া। কিন্ত তাদের অধিকার, দায়িত্ব এবং সুযোগ-নির্ভর করবে না তারা নারী-পুরুষ বা অন্য লিঙ্গের হয়ে জন্ম নিয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে। জেন্ডার সমতা টেকসই উন্নয়নের অন্যতম মূল লক্ষ্য।
নাফিসা বলেন, জেন্ডার নায্যতার মূল বক্তব্য এমন না যে সব ক্ষেত্রেই ছেলে-মেয়ে ইকুয়াল হতে হবে। একটা ছেলে নিজেই তো অন্য সকল ছেলের সাথে সব দিক থেকে ইকুয়াল হতে পারবে না; যেমন- বুদ্ধিমত্তা, সাহস, শক্তি, উচ্চতা, ওজন, পৌরুষত্ব, পিতা হবার সক্ষমতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সকল পুরুষ অন্য পুরুষের মতো সমান যোগ্য নয়। তাই বলে কি সকল পুরুষ আইনের চোখে সমান নয়?
তেমনি, জেন্ডার ইকুয়ালিটি বলতে শুধুমাত্র আইনি প্রক্রিয়ার সামনে ইকুয়ালিটির কথা বলা হয়। যেমন- মত প্রকাশ, প্রফেশন, চলাফেরা, রাজনীতি, শিক্ষা, সম্পত্তি অর্জন প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলোতে জেন্ডার ইকুয়ালিটি থাকতে হবে এটাই জেন্ডার ইকুয়ালিটির মূল বক্তব্য।
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭, ২৮ এবং ২৯ হল এই দেশে জেন্ডার ন্যায্যতার মৌলিক ভিত্তি। ইনশাল্লাহ, দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে একটি গনতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মানের আন্দোলনকে তরান্বিত করার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
এমটিআই