ঢাকা : চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে ঢাকায় বিএনপির শনিবারের মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে; পিছিয়ে গেছে চিকিৎসার জন্য তার বিদেশ সফরের পরিকল্পনাও।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ম্যাডাম পরশু রাত থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যে কারণেই চিকিৎসদের পরামর্শ অনুযায়ী শনিবার মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশটি স্থগিত করা হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে ওই দিন আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, গুলশানের বাসায় চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে উনার চিকিৎসা চলছে। এই অসুস্থতার কারণে উনার বিদেশে যাওয়াটাও পিছানো হয়েছে।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ড থেকে মুক্ত হওয়ার গত ২৯ অক্টোবর খবর আসে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া।
কথা ছিল চলতি মাসে প্রথমে তিনি লন্ডনে যাবেন ছেলে তারেক রহমানের কাছে। বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।
পরে লন্ডন থেকে অন্য একটি দেশে নিয়ে তাকে কোনো একটি ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিকেল সেন্টারে’ ভর্তি করা হবে বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান। সেইসঙ্গে এর মধ্যে সৌদি আরবে ওমরাহ পালনেরও কথা ছিল খালেদা জিয়ার।
বিদেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জিয়া ও তার চিকিৎসা দলকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস এসেছিল অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে।
সেই অনুযায়ী যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবের যেতে পাসপোর্টে ভিসা কাজও সম্পন্ন হয়েছে ইতিমধ্যে।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে আইসিইউতে রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে দীর্ঘ সময়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল শেখ হাসিনার সরকার। প্রতিবারই তাকে দুটি শর্ত দেওয়া হচ্ছিল। তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।
সাময়িক মুক্তির পর তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের তরফ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও ওই শর্তের যুক্তি দিয়েই বার বার তা প্রত্যাখ্যান করেছে শেখ হাসিনার সরকার।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন।
মুক্তির পর গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে এই সংবর্ধনায় উপস্থিত হন খালেদা জিয়া।
এমটিআই