• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩০
তারেক রহমান

ধর্মীয় উগ্রবাদ ঠেকাতে না পারলে ফের গণতন্ত্রের কবর হবে 


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৯, ২০২৫, ১০:৫৩ পিএম
ধর্মীয় উগ্রবাদ ঠেকাতে না পারলে ফের গণতন্ত্রের কবর হবে 

ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে দেশে আবার গণতন্ত্রের কবর রচিত হবে।

বুধবার ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে বিএনপির ইফতার আয়োজনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে গণতান্ত্রিক বিশ্বে ভাবমূর্তি সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ।

রাজনীতিকদের সম্মানে আয়োজিত দলের ইফতারপূর্ব আলোচনা সভায় তারেক রহমান বলেন, “আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা ও চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে উগ্রবাদী জনগোষ্ঠি এবং পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি দেশে পুনরায় গণতন্ত্রের কবর রচনা করবে। অপর দিকে গণতান্ত্রিক বিশ্বের ইমেজ সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ।”

দুদিন আগে সোমবার ভারত সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্যাবার্ডের কাছে ‘বাংলাদেশের চরম ইসলামপন্থা’ ও সন্ত্রাস নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল।

তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, “চরম ইসলামপন্থিদের হুমকি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক যে প্রচেষ্টা, তাদের সবার শিকড় একই আদর্শ ও উদ্দেশ্যে মিশেছে। তাদের সে উদ্দেশ্য হল ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা।”

এটা স্পষ্ট, তাদের কাছে ‘গ্রহণযোগ্য ধর্ম’ ছাড়া অবধারিতভাবে বাকি সব ধর্মের অনুসারীদের তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। আর খেলাফতের মতবাদ তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় সন্ত্রাস ও সহিংসতার মাধ্যমে।

সেদিনই প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তবের বিষয়ে ‘গভীর উদ্বেগ ও হতাশা’ প্রকাশ করেছে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলেছে, মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের এমন মন্তব্যের পেছনে কোনো তথ্যপ্রমাণ কিংবা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। তার এক বক্তব্য এক তুলিতে পুরো জাতিকে অযৌক্তিকভাবে চিত্রিত করেছে।

বিশ্বের অনেক দেশের মত বাংলাদেশও চরমপন্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। কিন্তু আইন প্রয়োগ, সামাজিক সংস্কার ও সন্ত্রাসবিরোধী অন্যান্য প্রচেষ্টার মাধ্যমে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে দেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চরিত্র সম্মুন্নত রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, চরম পন্থা ও ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা প্রতিহত করার পাশাপাশি গণহত্যাকারী পলাতক মাফিয়া চক্রকে যেকোনো মূল্যে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।

এর মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থা শক্তিশালী করাই হবে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক পক্ষের শক্তির আগামী দিনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।

গত ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগের মধ্যে বিএনপি দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার জন্য সরকারকে তাগিদ দিচ্ছে।

জনপ্রত্যাশার কথা তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একটি রাষ্ট্রে একটি সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক নীতি কিংবা রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা দীর্ঘস্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী। সুতরাং রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী এবং টেকসই কার্য্কর রাখতে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

দীর্ঘ দেড় দশক ধরে ক্ষমতাহীন জনগণ এবার নিজেদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে প্রস্তুত।

তারেক রহমান বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত এবং জনদুর্ভোগ কমানোর সকল পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনকেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেবে এটাই গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রত্যাশা।

তিনি বলেন, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বৈষ্যমহীন নিরাপদ গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নির্বাচিত জাতীয় সরকারের মাধ্যমেই বিএনপি রাষ্ট্র ও রাজনীতি মেরামতের কাজগুলো সফল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

সেই লক্ষ্য পূরণে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার করবে যা অতীতেও আমরা জাতির সামনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।

‘সরকারকে সর্তক থাকতে হবে’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, তাদেরকে নিরাপত্তাহীন রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব।

সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি কিংবা অন্য কোনো কাজে বেশি মনোযোগী থাকার কারণে আমাদের মা-বোন-কন্যারা নিরাপত্তা সংকটে পড়েছে কি না এই বিষয়টি গভীরভাবে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।

‘গণতন্ত্র ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নাই’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “জাতীয় ঐক্যমত কমিশন হয়েছে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক দলের কাছে পৌঁছে গেছে। আপনারা নিশ্চয় তা গভীরভাবে পর্যালোচনা করবেন, দেখবেন, পরীক্ষা করবেন।

এই দেশে জাতির জন্য যেটা প্রয়োজন বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় ইতিহাস, তার কৃষ্টি, তার ঐতিহ্য, তার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সব কিছুকে নিয়ে যেন আমরা সামনের দিকে এগুতে পারি। এটাই হওয়া উচিত আমাদের সকলের লক্ষ্য।

আজকে এ কথাগুলো এজন্য তুললাম, আজকে বিভিন্ন রকম কথা-বার্তা বিভিন্ন মিডিয়ায় চলে আসছে, সমাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন কথা উঠছে। আমাদের মধ্যে বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তি ছড়ানো শুরু করেছে। গণতন্ত্রের পথে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই।

সে জন্য সমালোচনা সত্ত্বেও বিএনপি বার বার দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের কথা বলছে তুলে ধরে তিনি বলেন, “দ্রুত নির্বাচনের কথা আমরা খুব পরিস্কার করে বলছি এজন্য যে, ন্যুনতম সংস্কার করে যেন আমরা একটা জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক পার্লামেন্ট আমরা তৈরি করতে পারি। জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক একটা সরকার গঠন করতে পারি, যারা সেখানে নির্ধারিত করবেন পরবর্তী সংস্কারগুলো কীভাবে হবে, কীরূপে হবে।”

‘ভারতের দালালী করে লাভ হবে না’

এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ বলেন, “আমাদের একটা জিনিস অনুধাবন করতে হবে যে, দেশটা আমাদের। ভারতের দালালি করে কোনো লাভ হবে না। আমরা বহুদিন দালালি করেছি বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

তার দাবি, এবার ভারতের পেঁয়াজও নাই, এবার ভারতের চালও নাই। কিন্তু বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে।

নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়ে অলি আহমেদ বলেন, “অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যদি আমরা আগাই আমরা আর কখনো স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারবো না।

তারেক রহমানসহ তরুণ নেতৃত্ব যদি অভিজ্ঞতাকে নিয়ে এগোতে পারে তাহলে এদেশে আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হবে না বলে মন্তব্য করেন অলি।

‘৪ দফায় ঐক্য চাই’

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “আমি মনে করি, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য এখন জাতীয় ঐক্যই হবে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এই লক্ষ্য রেখেই যার যার জায়গা থেকে আমাদেরকে চারটি বিষয়ে এক থাকতে হবে।

এক. বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব বিষয়ে কোনো আপোষ নাই। দুই. একটি টেকসই গণতন্ত্র। তিন. একটি ফেয়ার ইলেকশন এবং চার. দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ।

এভাবে যদি ঐক্যবদ্ধ থেকে সমাজ তৈরি করা যায় তাহলে কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

‘আমরা ফ্যাসিস্ট আর দেখেতে চাই না’

জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘একটি কথা বলা হচ্ছে যে, ইনক্লুসিভ ইলেকশন। আমি মনে করি যে, এই ইনক্লুসিভ ইলেকশন হওয়ার মত বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার মত রাজনৈতিক দল বর্তমানে দেশে রয়েছে।

৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগন যে শক্তিকে পরাজিত করেছে… মুজিববাদ ও আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের বিদায় করেছে… বাংলাদেশের সামনের ভবিষ্যৎ, রাজনীতি, নির্বাচন সেখানে সেই মুজিববাদী রাজনীতির স্থান আসলে হবে না।

এআর

Wordbridge School
Link copied!