ঢাকা: বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক নেতা এমএ কাইয়ুমের বিরুদ্ধে নির্বাসন আদেশ প্রত্যাহার করেছে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগ। বুধবার সকালে (২৯ মে) দেশটির হাইকোর্টের বিচারককে মুনিয়ান্দি, অনুমতি সংক্রান্ত রায় রেকর্ড করার সময়, কাইয়ুমকে তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের কাছে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আবেদনকারী এবং তার ডিপেন্ডেন্টদের (নির্ভরশীল) তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসনের অপেক্ষায় মালয়েশিয়া থেকে আটক বা নির্বাসিত করা হবে না। তবে শর্ত থাকে যে, তিনি কোনো ফৌজদারি অপরাধে জড়িত নন এবং আদালতে তিনি কোনো অভিযুক্তও হননি।
তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আবেদনকারীকে অবশ্যই একটি যথাযত সময়ের মধ্যে দেশত্যাগ করতে হয়। দেশটির আদালত বলেছে, আবেদনকারী ১২ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ এর মধ্যে তাদের গ্রেফতার এবং আটকের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ব্যবস্থা করবেন না।
গত ১৮ জানুয়ারি, একই আদালত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা এমএ কাইয়ুমের বিরুদ্ধে নির্বাসন আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ মঞ্জুর করেন। সেই সময় তিনি মালয়েশিয়ার পুলিশ এবং বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
এদিকে স্থানীয় নিউ স্ট্রেইটস টাইমসের আরেকটি সংবাদ থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় এ রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে নির্বাসন আদেশের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন মালয়েশিয়ার মানবাধিকার সংগঠন, সুয়ারা রাকয়াত (সুয়ারাম)। মানবাধিকার সংগঠনটি ইউএনএইচসিআরের স্থানীয় দপ্তরে যোগাযোগ করে এমএ কাইয়ুমের মুক্তির জন্য সহযোগিতাও চেয়েছিলেন সেই সময়।
জানা গেছে, ঢাকার প্রয়াত মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা মেয়র থাকার সময় গুলশান-বাড্ডা এলাকার কমিশনার ছিলেন কাইয়ুম। দলের প্রয়াত মেয়র আব্দুস সালাম তালুকদারের হাত ধরে তিনি বিএনপিতে এসেছিলেন বলেও শোনা যায়। বর্তমানে এমএ কাইয়ুম, কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদক। তিনি ঢাকা উত্তর বিএনপির সভাপতিও ছিলেন এক সময়। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে গুলশান-বাড্ডা আসন থেকে বিএনপির প্রার্থীও হয়েছিলেন কাইয়ুম।
ধারণা করা হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাবস্থায়ই মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করেছিলেন কাইয়ুম। এ বিষয়ে কাইয়ুমের স্বজনরা বলছেন, ২০১৫ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় তিনি ‘সেকেন্ড হোম’ হিসেবে অবস্থান করছেন। এর পাশাপাশি তিনি জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তালিকাভুক্ত শরণার্থী হিসেবে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।
দেশে একের পর এক মামলার বেড়াজালে পড়ার কারণে দেশের বাইরে (মালয়েশিয়া) থাকতে হচ্ছে এমএ কাইয়ুমকে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় গাড়ি পোড়ানো মামলাসহ নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা আছে অর্ধশতাধিক। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মামলাগুলোর মধ্যে গুলশানে ইতালি নাগরিক তাবেল্লা সিজার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তিনি।
অভিযোগ আছে, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির জয়ের পর গুলশান, বাড্ডা এলাকায় জমিদখলসহ নানা অভিযোগ ওঠে কাইয়ুমের বিরুদ্ধে। ২০০৪ সালে কমিশনার হওয়ার পর বাড়তে থাকে তার প্রভাব প্রতিপত্তি। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে গড়ে তোলেন আবাসন প্রতিষ্ঠান স্বদেশ প্রোপার্টিজ।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে কাউয়ুমের আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয় তার স্ত্রী শামীম আরাকে। শুরুতে কয়েক দিন মাঠ গরম করলেও নির্বাচনের আগমুহূর্তে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি।
গত জানুয়ারিতে তাকে আটকের সময়, মালয়েশিয়ার পুলিশ জানিয়েছিলেন, অভিবাসন আইনের আওতায় অবৈধভাবে অবস্থানের কারণে তাকে আটক করা হয়েছে। কারণ তার পাসপোর্ট বাতিল হয়েছে। পরে আটক করে থানায় নিয়ে গেলে এ সময় পুলিশকে এটাও জানানো হয় যে, তিনি ইউএনএইচসিআরের শরণার্থীবিষয়ক কার্ড নিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।
আইএ