ঢাকা : রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত জনে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলে আমরা জেনেছি, এখানে যে শর্মা হাউজ ছিল। মূলত সেখান থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানে সম্ভবত গ্যাস জমেছিল এই গ্যাস বিস্ফোরণের কারণে আশেপাশের সাতটি বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পথে থাকা দুটি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা সাতজন মারা গেছে বলে খবর পেয়েছি।’
এর মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ১২ জন আহত অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শঙ্কর পাল।
এদিকে এই বিস্ফোরণে ৯ মাসের শিশু সন্তান হারিয়েছেন সুজন। সন্তানকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি। চিৎকার করছিলেন আর বলছিলেন,‘আমার বাবা আর বা-ব্বা, বা-ব্বা বলে ডাকবে না’
বিস্ফোরণে ঘটনায় তার ৯ মাসের শিশু সুবহানা ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আর স্ত্রী জান্নাতকে (২৩) মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে তিনিও মারা যান। ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দিশেহারা সুজনের কান্না যেন থামানো শক্তি নেই কারও।
কান্না জড়িত কণ্ঠে সুজন বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেল, কি নিয়ে আমি বাঁচব বলতে পারেন? আমার বাঁচার মতো তো কিছু রইল না। আমি কী অন্যায় করেছি যে এভাবে শাস্তি পেতে হবে! আমার ছোট শিশুর কী দোষ ছিল? কীভাবে কী হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমার তো বাঁচার মতো কিছু রইল না। সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমার সোনা মনি আমার সঙ্গে খেলা করেছে। সবে মাত্র কথা শিখতে শুরু করছে। আমার বাবা আমাকে বা-ব্বা, বা-ব্বা বলে ডাকতে শিখেছে। আর কখনও আমাকে বাবা বলে ডাকবে না।
সুজন আরও বলেন, আমি রমনা ফার্মেসিতে চাকরি করি। আমার ছোট শ্যালক রাব্বি আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছে। সন্ধ্যায় মগবাজার শর্মা হাউজে গিয়েছে তারা। আমার স্ত্রী জান্নাতের আত্মীয়রা সেখানে চাকরি করে, তাদের সঙ্গে দেখা করতে গেছিল। হঠাৎ বিস্ফোরণে আমার জীবনের সব কিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে। আমার বাচ্চা ও স্ত্রী মারা গেছে। শ্যালক রাব্বি কোথায় তাও জানি না। কী আর রইল আমার বেঁচে থাকার সম্বল?
প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম বলেন, সুজন আমাদের প্রতিবেশী। পাশাপাশি বাসায় আমরা ভাড়া থাকি। বড় মগবাজারের ৪৮৭ নম্বর নিচতলায় স্ত্রী ও ৯ মাসের শিশু সন্তান সুবহানাকে নিয়ে ভাড়া থাকে। একই সঙ্গে স্ত্রী ও সন্তান এভাবে চলে যাবে, এই ভয়াবহ দৃশ্য মেনে নেওয়া যায় না।
রোববার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় মগবাজার এলাকায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় সোমবার (২৮ জুন) সকাল পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন ঢামেকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দগ্ধদের মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসাধীন আছেন- রাসেল (২৪), জাকির হোসেন (৪০), স্বপন (২২), নয়ন (৩২), মোতালেব (৪০), আবুল কালাম (৩৫), মো. পইমল হোসেন (৪০) মোস্তাফিজ (৪৫), নবী (২৮),আজাদ (৩৫) ও ইমরান। এদের মধ্যে স্বপন নামে একজন মারা গেছেন। মৃত অবস্থায় দুজনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়েছে, তাদের দুজনের নাম-পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। বেশ কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে গেছেন।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেন, মগবাজারের দুর্ঘটনায় মোট ১৭ জনকে আমাদের এখানে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনকে আমরা মৃত অবস্থায় পাই। তিন জন ছিলেন দগ্ধ। এর মধ্যে দুজনকে আইসিইউতে, একজনকে এসডিইউতে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দগ্ধ তিন জনের অবস্থা খুবই খারাপ। নাইনটি পারসেন্ট বার্ন। তাদের সম্পর্কে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। বাকি আহতরা যারা আছেন, তাদের কারও পা কাটা গেছে, কারও পা ভেঙে গেছে।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :