ঢাকা : ছয়টি রুটে দ্রুতিগতির মেট্রোরেল চালুর মধ্য দিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যেই বদলে যাবে রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থা। ১২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেল নেটওয়ার্ক যানজটে নাকাল ঢাকাবাসীকে মুক্তি দিবে। প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
যেখানে ৬৭ কিলোমিটার উড়াল এবং ৬১ কিলোমিটার পাতাল রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। যা রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের যানজট কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে।
জানা যায়, ২০২৬ সালের মধ্যে উড়াল ও পাতাল সমন্বয়ে মেট্রো রুট-১ নির্মাণের লক্ষ্যে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন চলমান রয়েছে। ২০২৮ মধ্যে উড়াল ও পাতাল মেট্রোরেলের সমন্বয়ে মেট্রো রুট-৫-এর নর্দার্ন ও সাউদার্ন অংশ নির্মাণের লক্ষ্যে বিভিন্ন সার্ভে ও প্রাথমিক নকশা প্রণয়নও চলমান রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জি টু জি ভিত্তিতে পিপিপি পদ্ধতিতে মেট্রো রুট-২ এবং মেট্রো রুট- ৪ নির্মাণের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মেট্রোরেল রুট-৬ নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যেই ডিপোর অভ্যন্তরে রেল লাইন বসানোর কাজসম্পন্ন হয়েছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের ওপর রেললাইন স্থাপনের জন্য ট্র্যাক প্লিন্থ কাস্টিং সম্পন্ন হয়েছে।
এমআরপি লাইন-৬-এর নির্মাণ কাজের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৬১ দশমিক ৩৩ ভাগ। প্রথম পর্যায়ের নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব হতে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮৩ দশমিক ৫২ ভাগ।
দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থাকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৫৭ দশমিক ৬৮ ভাগ এবং ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৫১ দশমিক ৬৫ ভাগ।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, এটা যখন এই করিডোরে হয়ে যাবে, যারা বসবাস করছেন ডিফিনেটলি তারা একটা বড় সুবিধা পাবেন।
ঢাকায় রাস্তার ওপর যে ছোট ছোট গাড়ির চাপ, তারা যদি ছোট গাড়ি ছেড়ে দিয়ে মেট্রোতে উঠেন। তাহলে নিচের রাস্তাটা ফাঁকা হলে যানজট কমার বড় একটা সুযোগ রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে সমন্বয় করতে হবে।
ইতোমধ্যে লাইন-ছয়ের আওতায় উত্তরা থেকে মতিঝিল অংশের কাজ শেষের পথে। এরপরেই লাইন এক ও পাঁচের কাজও শুরু হবে চলতি বছর। ২০২৬ সালের মধ্যে উড়াল ও পাতালের সমন্বয়ে মেট্রো রুট-১ নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানান সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এখানে হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত এলিভেটেড হবে। আমিনবাজার থেকে এটা ভাটারা পর্যন্ত যাবে, এটা কিন্তু মাটির নিচ দিয়ে যাবে। তবে এমআরটি লাইন-১ কাজ শুরু হয়ে গেছে। এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পুরোটাই আন্ডারগ্রাউন্ড হবে। এটা পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত কানেক্ট হবে। এই অংশটি ওপর দিয়ে যাবে। এমআরটি লাইন-টু হবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে। জাপানের একটি কোম্পানি এটা বাস্তবায়ন করবে। এটার সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্নের পথে।
এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে জি-টু-জি ভিত্তিতে পিপিপি পদ্ধতিতে মেট্রো রুট-২ এবং মেট্রো রুট-৪ নির্মাণের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান সচিব।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের মাধ্যমে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে। সাহসী একটা পদক্ষেপ। বিশাল কর্মযজ্ঞ। ছয়টা মেট্রোরেলে এক লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা এই লাইনগুলোর কাজসম্পন্ন করব।
সড়ক, নৌ ও রেলপথের সমম্বয়ে ঢাকায় একটি পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার বড় সুযোগ রয়েছে। যেখানে মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করেন এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, এটা একটা সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দিয়ে যাবে নগরবাসীর জন্য। খেয়াল রাখতে হবে মেট্রোটা কিন্তু ভেরি ক্যাপিটাল ইন্টেন্সিভ একটা ইনফ্রাক্টাকচার। এটা একা গণপরিবহন সম্পর্কিত যে চাহিদা আছে, তা নিতে পারবে না। সে হবে একটা ইকো। গণপরিবহন ব্যবস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ে মেট্রো। তার নিচে থাকে বিআরটি। তার নিচে থাকে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ। তার নিচে থাকে অর্ডিনারি প্যারা ট্রানজিটগুলো। আমরা এখন ওপরেরটার আয়োজন করে ফেলছি। তবে নিচেরটা থেকে যেন আমরা দৃষ্টি সরিয়ে না নেই।
প্রকল্প বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে এখন থেকে কাজ শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের বিপুল পরিবহন চাহিদা সে নিতে পারবে বলা হয়নি। এখানে আরো পাঁচটা হওয়ার কথা। এই নেটওয়ার্কটা যদি হয়ে যায়, তখনই যানজট দূর করা, বসবাসযোগ্য নগরীর হিসাবে বলি একটা দৃশ্যমান উন্নয়ন লক্ষ্য করা যাবে।
তবে প্রকল্প চলাকালে এমআরটি লাইন-ছয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে আগামীতে নগরবাসীর চলাচল নির্বিঘ্ন করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে ডিএমটিসিএলের প্রতি আহ্বান এই বিশেষজ্ঞর।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :