ঢাকা : গত অর্থ বছরের ৭১ ভাগ বাজেটই বাস্তবায়ন করতে পারেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তারপরও নতুন করে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৭৪১.২৮ কোটি টাকার ঢাউস বাজেট দিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার ডিএসসিসির করপোরেশন সভায় এ বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী ৪ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজেটের বিস্তারিত জানানো হবে বলে ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জানা যায়, ডিএসসিসি গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৬৭৩১. ৫২ কোটি টাকার বাজেট পেশ করে। কিন্তু ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, তারা ওই অর্থবছরের যে সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করেছে তার পরিমান মাত্র ১৯২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৮ দশমিক ৫৮ ভাগ। বাকি ৭১ দশমিক ৪২ ভাগই তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বাজেটের চারভাগের প্রায় তিনভাগই বাস্তবায়ন করতে না পারার অন্যতম কারণ হিসেবে জানা গেছে, ডিএসসিসি ২০২১-২২ অর্থ বছরে আয়ের অন্যতম বড় লক্ষ্য ধরা হয়েছিলো সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে আয়ের খাত থেকে। যার পরিমাণ ছিলো ৪৮২৯.২৩ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ৭১ দশমিক ৭৪ ভাগ। কিন্তু তারা এ বছরে ওই খাত থেকে মাত্র ৫২৭ কোটি টাকা আয় করতে পেরেছে। যা এ খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রার ১১ ভাগ মাত্র। ডিএসসিসির ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে আয়ের খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৫৫৮.৪৮ কোটি টাকা। তবে আয় হয় ১১৮১.৫০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এ খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৪৪৮.৯৩ কোটি টাকা। আয় হয় ১৮৭১.২০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থ বছরে এ খাত থেকে একলাফে দ্বিগুন ৪৯১৬.৫৭ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু আয় হয় মাত্র ৬৪১.২৩ কোটি টাকা। এ খাতে হঠাৎ প্রায় দ্বিগুন বাজেট বাড়ানোর কারণে মোট বাজেটের পরিমাণও বেড়ে যায়। ২০১৯-২০ সালে মোট বাজেট যেখানে ছিলো ৩৬৩১.৪০ কোটি টাকা। সেখানে ২০২০-২১ সালে বাজেট গিয়ে দাঁড়ায় ৬১১৯.৫৯ কোটি টাকা। কিন্তু বাজেট বাস্তবায়নের পরিমাণ আগের মতোই রয়েছে। ফলে একটি খাতে হঠাৎ বেশি বাজেট বাড়িয়ে মোট বাজেটের আকার বৃদ্ধি একটি শুভংকরের ফাঁকি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে গত অর্থ বছরের বাজেটে নিজস্ব উৎস থেকে আয় তথা রাজস্ব খাত থেকে আয় ধরা হয়েছিলো ১২১৬.১৮ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি আরো কিছু খাত থেকে ২৩.৫০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ফলে এ খাতে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২৩৯.৬৮ কোটি টাকা। সেখানে রাজস্ব খাত থেকে ৮৩৩.৪৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরো ৪৬.১৬ কোটি টাকা আয় হয়েছে। ফলে নিজস্ব উৎস থেকে মোট আয় হয়েছে ৮৭৯ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৬০ কোটি টাকা কম। তবে বিগত বছরের তুলনায় নিজস্ব উৎস থেকে আয়ের এটি একটি রেকর্ড। ডিএসসিসির ইতিহাসে বিগত সময়ে নিজস্ব উৎস থেকে এত আয় হয়নি। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় হয় ৭০৩ কোটি টাকা। যা গতবারের চেয়ে ১৭৬ কোটি টাকা বেশি। তার আগের বছর রাজস্ব আয় হয়েছিলো ৫১৪ কোটি টাকা। ফলে গত দুই বছরে ডিএসসিসির নিজস্ব উৎস থেকে আয় বেড়েছে ৩৬৫ কোটি টাকা। হোল্ডিং ট্যাক্স, বাজার সালামী, ট্রেড লাইসেন্স, স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর কর, বাজার ভাড়া, রাস্তা খোঁড়ার ফিস, কুরবানির পশুহাট, ইজারাসহ বিভিন্ন খাত থেকে ডিএসসিসির এ আয় হয়ে থাকে।
জানা যায়, ডিএসসিসির মঙ্গলবারের করপোরেশন সভায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জন্য ৬৭৪১.২৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে। এ বাজেটের বিস্তারিত তারা এখনো প্রকাশ করেনি। আগামী ৪ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ বাজেট পেশ করবেন। তবে বোর্ডসভা সূত্রে জানা গেছে, নতুন এ বাজেটেও আয়ের অন্যতম বড় লক্ষ্য ধরা হয়েছে সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে আয়ের খাত থেকে। যার পরিমাণ ৪৮১৬.০৯ কোটি টাকা। এছাড়া রাজস্ব ও অন্যান্য খাত থেকে ১২৬৬ কোটি টাকা এবং সরকারি থোক ও বিশেষ বরাদ্দ থেকে ৬৫ কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছে।
নগর ভবনের মেয়র হানিফ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত করপোরেশন সভায় মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমাদের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রমে গত দুই বছরে আমরা ঢাকাবাসির প্রত্যাশা পূরণে উন্নত ঢাকার ভিত রচনা করতে পেরেছি। আপনারা শুনে খুশি হবেন যে, সর্বকালের ইতিহাস ভঙ্গ করে বিগত অর্থবছরে আমরা ৮৭৯ কোটিরও বেশি রাজস্ব আহরণ করেছি। আমরা মাত্র দুই বছরের মধ্যে একটি ভঙ্গুর করপোরেশনকে ঢাকাবাসীর আস্থার করপোরেশনে পরিণত করেছি।
বিগত বাজেটগুলো পর্যালোচনা করে ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, আমি যখন এ করপোরেশন সভায় প্রথম বাজেট উপস্থাপন করি, সেই বাজেটে আমাদের রাজস্ব আদায় ছিল মাত্র ৫১৪ কোটি টাকা। আপনাদের (কাউন্সিলরদের) সকলের নিরলস পরিশ্রমে, আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমে, সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় আমরা ঢাকাবাসীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। ফলে, করোনা মহামারীর মধ্যেও গত বছর আমরা ৭০৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছি। এবার আমরা গতবারের চেয়ে ১৭৬ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করে সেই রেকর্ডও ভঙ্গ করেছি।
দক্ষিণ সিটির সচিব আকরামুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও কাউন্সিলরবৃন্দ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :