ঢাকা : আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানোর রূপরেখা নিয়ে কাজ করছে সরকার। তাই রাজধানী ঢাকাকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করে তোলাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাজধানীর ভেতর যোগাযোগব্যবস্থা অর্থনীতির জন্য জরুরি বিষয়। তবে এখনো ঢাকার বেশিরভাগ রাস্তার ফুটপাত হকারদের দখলে। ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থা।
এদিকে পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর ঢাকার সড়কগুলোতে গাড়ির চাপ বাড়ছে। গাড়ির চাপ সামলাতে এবং সড়কগুলো যান চলাচলের উপযোগী রাখতে কাজ শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গুরুত্ব অনুযায়ী রাস্তাকে লাল, হলুদ ও সবুজ এই তিন রঙে চিহ্নিত করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ককে হকারমুক্ত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। হকার উচ্ছেদের কাজও শুরু করেছে ডিএসসিসি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যেসব রাস্তায় আছে, সেই রাস্তাগুলো লাল শ্রেণির বলে চিহ্নিত হবে। সেখানে কখনোই হকার বসতে দেওয়া হবে না। হলুদ শ্রেণির রাস্তা তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে সিটি করপোরেশনের নির্ধারণ করে দেওয়া সময়ে ও স্থানে হকার বসতে পারবে। আর সবুজ শ্রেণির রাস্তা হবে সেসব এলাকা যেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু কিছু অংশে হকার বসতে পারবে। এসব জায়গায় হকার বসলে পথচারী বা যান চলাচলে কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটবে না।
রাজপথ ও পায়ে হাঁটা পথগুলোতে হকার ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে তিন রঙে চিহ্নিত করতে ডিএসসিসি একটি কমিটি গঠন করেছে। ডিএসসিসির নগর পরিকল্পনাবিদকে আহ্বায়ক ও সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদকে সদস্য সচিব করে গঠিত এই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলররাও থাকবেন।
কমিটির আহ্বায়ক ও দক্ষিণ সিটির নগর পরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের কমিটির সদস্যরা এখনো বসেননি। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বসে আমরা এলাকাগুলো চিহ্নিত করবো।
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনাকেন্দ্রিক এলাকাগুলো হকারমুক্ত রাখার যে ঘোষণা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দিয়েছেন, তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন। কারণ, এর আগে ঢাকায় অনেকবার ফুটপাত হকারমুক্ত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, যা প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে।
জানা গেছে, অনেকবার হকার উচ্ছেদ করা হলেও সিটি করপোরেশন সম্পূর্ণ উচ্ছেদে কখনো সফল হয়নি। এবারের অভিযান নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, রেড জোনে হকারদের বসার সুযোগ দেওয়া হবে না। তারা যতবার বসবে, ততবারই আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। তাদের কোনোভাবেই এ জোনে বসতে দেওয়া হবে না।
তিনি আরো বলেন, এ অভিযানে কেউ ঝামেলা করতে আসবে না। যেসব রাজনৈতিক নেতা বা অন্যরা ঝামেলা করতে পারেন বলে মনে হয়েছে, আগেই তাদের সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে। রাসেল সাবরিন জানান, ভবিষ্যতে সিটি করপোরেশন তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আরো কঠোর হবে।
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের যাতায়াতের জায়গা ফুটপাত মুক্ত রাখতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কঠোর নির্দেশনা আছে বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির কর্মকর্তারা। তারা কয়েকটি রাস্তা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উচ্চ পর্যায় থেকে কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশসহ অন্যরা এ কমিটিতে রয়েছেন।
বিশেষ করে বঙ্গভবনের আশপাশের এলাকা এবং রাজধানীতে ঢোকা ও বের হওয়ার জায়গা বিবেচনায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়াল সেতুর দুটি অংশকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা যাত্রাবাড়ীতে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়াল সেতুর নিচের অংশ হকার ও যানজট মুক্ত করেছি। এছাড়াও বঙ্গভবন থেকে জিরো পয়েন্ট এলাকায় হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বঙ্গভবন (রাষ্ট্রপতি ভবন) থেকে সচিবালয়, মেয়র মো. হানিফ উড়াল সেতু থেকে গুলিস্তান চত্বরে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির চলাচল ও হানিফ সেতুর সঙ্গে ঢাকার ভেতরে আসা-যাওয়ার সম্পর্ক থাকায় এটি রেড জোন এলাকা।
গত রোববার এই এলাকার সহস্রাধিক হকার উচ্ছেদ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করায় ৯ ব্যক্তিকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
প্রতিবার অভিযানের সময় হকাররা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করলেও এবার তাদের এমনটি করতে দেখা যায়নি। বরং, সবাই নিজেদের মালামাল সরাতে আর সরে পড়তে ব্যস্ত ছিলেন। এমনকি তেমন কেউ গণমাধ্যমেও কথা বলতে রাজি হয়নি।
অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে ছিলেন করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. এনামুল হক ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন।
কাউন্সিলর রতন বলেন, প্রথম দিন হিসেবে আমরা কম জরিমানা করছি। হকারদের একটা বার্তা দিতে চাচ্ছি যে, এখানে আর থাকা যাবে না। আর কোনোভাবেই এখানে থাকা সম্ভব হবে না। আগামীতে আমরা আরো কঠোর হবো। তিনি আরো বলেন, সড়কে হকার থাকলে ঢাকা নাকাল হবে। আর ঢাকার যোগাযোগ ব্যাহত হলে পদ্মা সেতু আর পায়রা পোর্টের উন্নয়নের সুফল আমরা পাবো না।
ডিএসসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা মুনিরুজ্জামান বলেন, তিন দিন এখানে টানা মাইকিং করা হয়েছে। আমরা এখানে কোনো হকার বসতে এবং কাউকে অবৈধভাবে দোকানপাট ও স্থাপনা নির্মাণ করতে দেবো না। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :