ঢাকা : শনিবার (১ জুলাই) বিকেলে ঢাকায় মুষলধারায় বৃষ্টি হয়েছে। প্রায় দুই ঘণ্টার এ বৃষ্টিতে নগরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি তলিয়ে যায় বৃষ্টিতে। ঈদ ও সরকারি ছুটি থাকায় বাইরে মানুষের চলাচল কম ছিল।
এরপরও জরুরি প্রয়োজনে যারা বাইরে বের হয়েছিলেন; তারা ভিজে একাকার হয়েছেন। হাঁটুসমান জলাবদ্ধ সড়কে চলাচলে রীতিমতো নাকাল হতে হয়েছে সেসব নগরবাসীকে।
তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী তিন দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শুক্র ও শনিবারের মুষলধারার বর্ষণে ঢাকার প্রায় সব এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। গত দুদিন এ মৌসুমের সবচেয়ে ভারী বর্ষণ হয়েছে। দুদিনের বৃষ্টিতে বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, ধানমন্ডি, মিরপুর-১৩, হাতিরঝিল এলাকা, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীরগেট, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডসংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, গুলশান লেকপাড় এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। শুধু এসব এলাকা নয়, গত দুদিন ঢাকার সব এলাকার চিত্রই ছিল একইরকম; জলাবদ্ধ-কর্দমাক্ত সড়কে নগরবাসীর ভোগান্তির চূড়ান্ত অবস্থা ছিল। এ দুদিনে ঢাকায় বৃষ্টিপাতের গড় ছিল প্রায় ১৫০ মিলিমিটার।
নগরের পানি নিষ্কাশনের দায়িতপ্রাপ্ত সংস্থার প্রতিনিধিরা বলছেন, গত দুদিন এ মৌসুমের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে সড়কগুলোয় পানি জমেছে। আর নগর সংস্থার কর্মীরা এ সময়ে শহরের কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে ব্যস্ত থাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করতে পারেনি। তবে শনিবার বিকেল থেকে পানি নিষ্কাশন কাজে নিয়োজিত কর্মীদের তাদের কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে সিএনজি অটোরিকশার চালক নাজমুল হোসেন বলেন, বৃষ্টি শুরুর কিছুক্ষণ পরেই ধানমণ্ডি শুক্রাবাদের কিছু সড়কে পানি জমে যায়। এর মধ্যে গাড়িতে যাত্রী নিয়ে আসার সময় ইঞ্জিন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। পরে যাত্রী নামিয়ে কিছুদূর গাড়ি ঠেলে নিয়ে আসতে হয়েছে। পরে গাড়ি স্টার্ট নিয়েছে। হাতিরঝিল হয়ে গুলশানের দিকে আসার সময়ও অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে।
এদিকে বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা ও যানজট পরিস্থিতি তুলে ধরে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে তাদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরেছেন। যানজট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের গ্রুপ ট্রাফিক অ্যালার্টে অনেকেই জলাবদ্ধতার ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন। ঢাকার জলাবদ্ধতার এ করুণ দশায় অনেকে হতাশ হয়ে, আবার কেউ কেউ রসিকতাও করছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, শুক্র ও শনিবার ঢাকায় মুষলধারায় বৃষ্টি হয়েছে। এজন্য অনেক সড়কে পানি জমে গেছে। কোরবানির বর্জ্য অপসারণে বিশেষ মনোযোগ দেওয়ায় পানি অপসারণে কিছুটা ত্রুটি হয়েছে। তবে আজ (শনিবার) বিকেল থেকে পানি নিষ্কাশনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে নিয়মিত পানি নিষ্কাশন কার্যক্রমে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, শুক্র ও শনিবার ঢাকায় প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বর্জ্য পরিষ্কারেও ডিএসসিসির বিশেষ মনোযোগ ছিল। সেজন্য শহরের পানি সরানোর কাজে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া যায়নি। তবে শনিবার বিকেল থেকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নেত্রকোনায় ১২৪ মিলিমিটার। এ ছাড়া ময়মনসিংহে ১২৩, সিলেটে ১১১, ঈশ্বরদীতে ৮৪, ঢাকায় ৮০, টাঙ্গাইলে ৭৪, কুমারখালীতে ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেডর্ক করা হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, সারা দেশে আজ দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৩৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপামাত্রা ছিল টাঙ্গাইলে ২৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :