• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

রাতের ঢাকা ‘ভয়ংকর’


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৫, ২০২৩, ১১:১৪ এএম
রাতের ঢাকা ‘ভয়ংকর’

ঢাকা: রাতের ঢাকায় ভয়ংকর ভাবে বেপরোয়া হয়ে পড়েছে ছিনতাইকারীরা। ঈদ শেষে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফেরা মানুষ তাদের টার্গেট। অনেকেই ছিনতাইকারীদের শিকার হয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। কেউ বাধা দিতে গেলে আহত-নিহত হচ্ছেন। ছিনতাইকারীদের হাতে খোদ পুলিশ সদস্যই মারা গেছেন। ঈদের রাতে হাতিরঝিলে রাকিবুল হাসান রানা নামে একজন সংবাদকর্মীকে ছুরি মেরে জিনিসপত্র নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। বিপদের ভয়ে অনেকেই ছিনতাইকারীদের হাতে সর্বস্ব তুলে দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাতের ঢাকা শহর ছিনতাইকারীমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। গত কয়েক দিনে ১৫০ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।

পুলিশের ডেটাবেজ অনুযায়ী ঢাকায় প্রায় ৬ হাজার ছিনতাইকারী আছে। ডেটাবেজে তথ্য থাকার পরও বারবার তারা কীভাবে ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘এদের প্রত্যেকে গ্রেফতার হয়েছে বলেই আমাদের ডেটাবেজে নাম এসেছে। আমরা প্রত্যেককে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছি। গ্রেফতারের পর একটা আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাদের জামিন পাওয়ার অধিকারও রয়েছে। তারা আইনি প্রক্রিয়ায় জামিনে বের হয়ে আসে। এরপর তাদের আমরা আবার অন্য মামলায় গ্রেফতার করি।’ আইন সংশোধন করা দরকার কি না, সেই প্রশ্নে কমিশনার বলেন, ‘তা অপরাধ বিজ্ঞানী বা সমাজ বিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন। আমাদের কাজ অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা। আমরা সেটা করছি।’

এদিকে রাজধানীর ফার্মগেটে পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান তালুকদার হত্যা মামলায় গ্রেফতার তিন ছিনতাইকারী গতকাল মঙ্গলবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ঢাকা মহানগর হাকিম মো. জাকী আল-ফারাবী ছিনতাইকারী রাব্বি ও কামরুলের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আর মহানগর হাকিম মো. রশিদুল আলম রেকর্ড করেন আসামি লিটনের জবানবন্দি। আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা শেখ রাকিবুর রহমান জানান, এ দিন আসামিদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। তারা স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার এসআই শাহ আলম। তারা সবাই পুলিশ কনস্টেবল হত্যায় নিজেদের জড়িয়ে সবিস্তার জবানবন্দি দেন। এ সময় তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি বলেও জানান রাকিবুর।

ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত ইনডিপেনডেন্ট টিভির সহকারী প্রযোজক রাকিবুল হাসান রানাকে দেখতে গতকাল ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) যান পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ‘২০ নম্বর ফ্যাক্টর’। প্রথম ১৯টি বাদ দিয়ে ‘২০ নম্বর ধরে টানাটানি’ করলে হবে না। ঈদের ছুটির মধ্যে রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের তত্পরতা নগরবাসীর মনে আতঙ্ক ছড়ায়। তিনি বলেন, পুলিশ কনস্টেবল ও সংবাদকর্মী দুটি ঘটনাতেই পুলিশ অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। তাদের বিচারের জন্য আইনানুগভাবে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা নেওয়া হচ্ছে।

রাজধানীকে ছিনতাইকারীমুক্ত না করা পর্যন্ত পুলিশের বিশেষ অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়ে কমিশনার বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, ঢাকা মহানগরকে ছিনতাইমুক্ত রাখার। এর জন্য যত কঠোর হওয়া দরকার আমরা হব, যত পরিশ্রম আমাদের করা প্রয়োজন আমরা করব। ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে গত কয়েক দিনে দেড় শ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে তথ্য দেন তিনি। আমরা ঈদের আগেই অনেক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছিলাম। কিন্তু এরপরও দুঃখজনকভাবে বিষয়গুলো ঘটেছে। পুলিশ এসব বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক আছে।’

‘অপরাধের কারণ ও নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক সমাজবিজ্ঞানের একটা প্রবন্ধ পড়েছিলেন জানিয়ে কমিশনার বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও কারণের মধ্যে অনেকগুলো বিষয় আছে, যার মধ্যে পুলিশ হলো ২০ নম্বর। এর আগে ১৯টি বিষয় রয়েছে, যার কারণে মানুষ অপরাধী হয়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রথম ১৯টা বাদ দিয়ে ২০ নম্বরের পুলিশ ধরে টানাটানি করলে তো হবে না। পুলিশ জানিয়েছে, রাকিবুল হাসানকে কুপিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- সোহেল (৩০) ও ইউসুফ (২৪)। এদের মধ্যে সোহেল ভাড়ার মোটরসাইকেলচালক আর ইউসুফ ইলেকট্রিশিয়ান। তাদের কাছ থেকে একটি হোন্ডা হর্নেট মোটরসাইকেল এবং দুটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। তারা পেশাদার ছিনতাইকারী বলে পুলিশের ভাষ্য।

প্রসঙ্গত, ঈদের ছুটি শেষে শনিবার ঢাকায় ফিরে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় ফার্মগেট এলাকায় ছুরিকাঘাতের শিকার হন পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান। বাস থেকে নেমে রাস্তা পার হয়ে অন্য একটি বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মনিরুজ্জামান। এ সময় তিন জন ছিনতাইকারী তার পিছু নেয়। একজন মনিরুজ্জামানের সামনে দাঁড়িয়ে মানিব্যাগ নিতে চায়। কিন্তু সে বাধা দেয়। পরে পেছন থেকে একজন মনিরুজ্জামানের উরুতে ছুরি মারে এবং আরো আঘাত করে মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন নিয়ে আরো পশ্চিমে চলে যায়। 

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!