• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পুড়ে অঙ্গার দেহগুলো চিনতে পারছেন না স্বজনরা


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৬, ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম
পুড়ে অঙ্গার দেহগুলো চিনতে পারছেন না স্বজনরা

ফাইল ফটো

ঢাকা: রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনের ঘটনায় নিহত চারজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে আনা হয়েছে। পুড়ে অঙ্গার হওয়া এসব মরদেহ এখন চেনার উপায় নেই। এজন্য ডিএনএ পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে স্বজনদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার (০৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে মর্গের সামনে ভিড় জমান স্বজনরা। পুলিশ তাদের লিখিত আবেদন জমা নিচ্ছে।

ঢাকা রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেতাফুর রহমান জানান, এখানে ৪টি মরদেহ আছে। ৪ জন তাদের স্বজনের সন্ধান চেয়ে আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। এছাড়া একজন মৌখিকভাবে বলেছেন।

সেতাফুর রহমান জানান, মরদেহগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করা ছাড়া পরিচয় শনাক্ত করা যাবে না। এজন্য ডিএনএ পরীক্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে স্বজনদের।

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া ছেলেকে খুঁজতে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন তার বাবা আবদুল হক। ফরিদপুর থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রা করেছিলেন ছেলে আবু তালহা।

আবদুল হক বলেন, এখানে (মর্গ) প্রথমে আমাকে মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। পরে দেখেছি। কিন্তু চিনতে পারছি না। একজন মানুষের উচ্চতা ৩/৪ হাত হলেও সবাই পুড়ে ১/২ হাত হয়ে গেছে।

এসব কথা বলার সময় কাঁদছিলেন আবদুল হক। তিনি বলেন, আমার ছেলে সৈয়দপুরের বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়ে। তার বয়স ২৪ বছর। আমার বাড়ি রাজবাড়ী জেলার কালুখালিতে। বর্তমানে ফরিদপুরে থাকি।

পেশায় ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করা আবদুল হক বলেন, আমার ছেলেকে ফরিদপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছি। সে ঢাকা হয়ে সৈয়দপুরে যাবে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তিনি বলেন, রাতে ট্রেনে আগুন দেওয়ার পরপরই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাচ্ছি। তার বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়েছি, সেখানেও যায়নি। তার শিক্ষকরাও তাকে খুঁজছেন। আমি রাতেই ঢাকা আসি। ঢাকায় এসে প্রথমে যাই মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানে তাকে খুঁজে পাইনি। এরপর শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেও আমার ছেলের খোঁজ পাইনি। তারপর আসি এখানে (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ মর্গ)।

তিনি আরও বলেন, জানি না আমার ছেলে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। আমি আমার ছেলের সন্ধান চাই।

এলিনা ইয়াসমিনের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীতে। স্বামী সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন এবং পাঁচ মাসের ছেলে সন্তান আরফানকে নিয়ে থাকতেন মিরপুরের ৬০ ফিটে। ১০ দিন আগে মারা যান এলিনার বাবা।

বাবাকে চিরবিদায় জানাতে শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। বাড়ি থেকে ঢাকায় ফেরার পথে শুক্রবার রাতে রাজধানীর গোপীবাগে তাদের ট্রেনে আগুন লাগে। এরপর থেকেই নিখোঁজ এলিনা ইয়াসমিন।

তার খোঁজে মর্গের সামনে আসেন ফুফা নজরুল ইসলাম এবং চাচাতো ভাই সোহেল রানা।

নজরুল ইসলাম বলেন, ট্রেনে করে আমাদের পরিবারের মোট ৬ জন সদস্য ঢাকায় আসছিলেন। এর মধ্যে এলিনা ইয়াসমিনের ৬ মাসের বাচ্চা আরফানও ছিল। এলিনা ছাড়া সবাই বেঁচে ফিরলেও এখনো তার খোঁজ পাচ্ছি না আমরা। এ বিষয়ে আমরা রেলওয়ে পুলিশকে অভিযোগ দিয়েছি।

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে ৮টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১০টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ওয়াইএ

Wordbridge School
Link copied!