ঢাকা : আষাঢ়ের শেষ সময়ে এসে তুমুল বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভেঙেছে রাজধানীর মানুষের, যা সহজে থামেনি। টানা প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে চলা প্রবল বর্ষণে ডুবে গেছে শহরের বহু সড়ক এবং অলিগলি।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার বিকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। এরপর থেকে বৃষ্টি কমবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় আছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। যার কারণে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত কক্সবাজারে রেকর্ড ৩০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করার কথা জানিয়েছে অধিদপ্তর।
সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে কাকরাইল, মোহাম্মদপুর, শ্যাওড়াপাড়া, কাজীপাড়াসহ মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা এবং মিরপুরে মাজার রোড, এলিফ্যান্ট রোড, মৎস্য ভবন, সেন্ট্রাল রোড, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, বিজয় সরনী, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, তেজকুনি পাড়া, দক্ষিণ মনিপুরের মোল্লাপাড়া, মহাখালীর বিভিন্ন রাস্তায় পানি জমেছে।
এছাড়া শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, নয়া পল্টন, পুরানা পল্টন, আরামবাগ, শাহজাহানপুর, ফকিরেরপুল, বিজয়নগর সড়কে পানি উঠেছে। পানিতে তলিয়েছে দয়াগঞ্জ মোড়, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, কমলাপুরের কাছে টয়েনবি সার্কুলার রোড, যাত্রাবাড়ী, কাজলা, শনির আখাড়া, রায়েরবাগ, গোলাপবাগের নিচু এলাকাসহ আরো কয়েক এলাকা।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় পথে মানুষ কম থাকলেও কাজের জন্য ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষদের যানবাহনের অভাবে বৃষ্টিতে ভিজে নাকাল হতে হয়েছে।
এছাড়া কোথাও হাঁটু পানি এবং কোথাও কোমর সমান পানির মধ্যে দিয়েও অনেককে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা যায়।
জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি করেছে। এজন্য রাজধানীবাসীকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সময় হাতে নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।
মহাখালী দক্ষিণ পাড়ার গিয়ে দেখা যায় সেখানকার বাসিন্দা মাহবুবুল আলমের দোকানে পানি ঢুকেছে।
তিনি বলেন, রাস্তার ধারে আমার দোকান। কিছুদিন আগে আমি দোকানের সামনে কিছুটা পাকা করে দিয়েছিলাম। তাতে কোনও লাভ হয়নি। বৃষ্টির পানি প্রায় কোমরসমান হয়ে দোকানে ঢুকেছে। মালামাল সব ভিজে বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়ে গেল আমার।
এত উন্নয়নের কথা বলা হয়, অথচ সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে বাসাবাড়িতে ঢুকে যায়। দুর্ভোগের সীমা থাকে না।
শান্তিনগর বাজারেও পানি উঠেছে। সেখানকার এক মাংস বিক্রেতা আমিন মিয়া বলেন, এক সাবে মাংস নেবেন, কিন্তু দেখা নাই। বাজারে পানি উঠছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকালের বুলেটিনে বলা হয়, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত নোয়াখালীর সন্দ্বীপে ২১৯, রাজশাহী ১৩৫, কুষ্টিায় কুমারখালীতে ১১১ মিলিমিটারসহ প্রায় সারাদেশে কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে।
সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে সেটিকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয়ে থাকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত।
এর আগে বুধবার তিনদিনের ভারি বৃষ্টির সতর্কতাও জারি করেছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান ওই বার্তায় বলেছিলেন, বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারি (২৪ ঘণ্টায় ৮৯ মিলিমিটার বা এর বেশি) বৃষ্টি হতে পারে।
ভারি বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে বলে ওই বার্তায় সতর্ক করা হয়েছে।
এমটিআই