ঢাকা: মায়ের কাছে মাংস রান্নার আবদার করেছিল ১৩ বছরের মোবারক হোসেন। সেই আবদার মেনে মা ফ্রিজে রাখা কোরবানির গরুর মাংস বের করে রান্নাও করেছিলেন। কিন্তু সেই মাংস খাওয়া হয়নি তার। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই বিকেলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে মোবারক। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার মা ফরিদা বেগম জানান, ছেলের জন্য রান্না করা ওই মাংস তারা দরিদ্র-মিসকিনদের খাইয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ছেলে যে গরুর মাংস খাইতে পারেনি, সেটা লোকজন ডেকে খাওয়ালাম। আল্লাহ যেন আমার মোবারককে মাফ করে দেয়; আর কোনো বাপ-মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়।’
রাজধানীর কাঁঠালবাগানের বক্স কালভার্ট রোডের বাসিন্দা রমজান আলী ও ফরিদা বেগম দম্পতির ছেলে মোবারক।
সরেজমিনে ঘরে গিয়ে দেখা যায়, ইংরেজিতে পিঠে মোবারক লেখা জার্সি ধরে অঝোরে কাঁদছেন ফরিদা। বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘খ্যালতে যাওয়ার সময় না হয়, আন্দোলন দ্যাখতে গ্যাছেই; আমার পুলারে গুলি কইরা ক্যান মারছে? মিছিল দেখতে গেছে, অয় যদি অপরাধ কইরা থাহে, এক-দুইডা থাপ্পড় দিয়া খেদায় দিত, মাথার মধ্যে গুলি করল ক্যান। অয় তো রাজনীতি-ফাজনীতির মইধ্যেও ছিল না।’
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে বড় ভাই হজরত আলী রতন বিয়ে করে আলাদা বাসায় থাকেন। তিন বোন–রত্না, স্বপ্না এবং ফাতিহারও বিয়ে হয়েছে। সবার ছোট মোবারকই ছিল ফরিদা ও রমজানের সংসারের নিত্যদিনের সহযোগী।
রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় একটি মাঠে নিয়মিতই বন্ধুদের সঙ্গে খেলে মোবারক। ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পান ফরিদা। আন্দোলনকারী ও স্থানীয়রা তাকে গ্রিন রোডের গ্রিনলাইফ হাসপাতালে নেন। পান্থপথের ফার্নিচার দোকানের এক ভ্যানচালক হাসপাতালের চিকিৎসকদের মোবারকের বাবার ফোন নম্বর দেন।
পরদিন ২০ জুলাই দুপুরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, মোবারক বেঁচে নেই। রমজান আলী বলেন, ‘হাসপাতালে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা বিল হইছে। আমরা গরিব মানুষ দেইখা ওষুধের ১৭ হাজার টাকা ছাড়া আর কোনো টাকা নেয় নাই।’
আইএ