Menu
কেরানীগঞ্জ : ঈদযাত্রার প্রস্তুতি নিতে নৌরুটের লঞ্চগুলো এক সময় রমজান মাসে রঙ করা আর ছোট খাটো ত্রুটি সারার কাজে ভিড় করত কেরানীগঞ্জের ডক ইয়ার্ডগুলোতে। তবে পদ্মা সেতু হওয়ার পর নদী পথে কমেছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রী। সেই সঙ্গে লঞ্চ মেরামতের কাজও কমেছে ডক ইয়ার্ডগুলোতে। ঈদের আগমনকে কেন্দ্র করে এখন আর চিরচেনা ডক ইয়ার্ডগুলোর কর্ম ব্যস্ততা চোখে পড়ে না।
কেরানীগঞ্জের চর কালিগঞ্জ এলাকায় লাইসেন্স করা ডক ইয়ার্ডের সংখ্যা ৩৩টি। লাইসেন্স ছাড়াও এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি ডক। এ ছাড়া হাসনাবাদ, ধলেশ্বরী এলাকায় রয়েছে আরো অনেক ডক ইয়ার্ড। ডক ইয়ার্ডের শ্রমিকেরা ঈদের আগে নাওয়া খাওয়া ভুলে দিনরাত লঞ্চ মেরামতের কাজে ব্যস্ত থাকত, ঈদের আগে তাদের ইনকাম ও হতো প্রচুর।
এ ছাড়া কেরানীগঞ্জের এসব ডক ইয়ার্ড সারা বছর জাহাজের পাশাপাশি যাত্রীবাহী লঞ্চ মেরামতের কাজ ও করত। তবে এখন যাত্রীবাহী লঞ্চ মেরামতের কাজ সারা বছর হয় না। শুধু দুই ঈদের আগে কাজ হয়। তবে সেটার সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক কম। এ কারণে এখানকার শ্রমিকদের ঈদ আনন্দ আগের মতো নেই।
সরেজমিন কেরানীগঞ্জের চর কালিগঞ্জ এলাকায় ডক ইয়ার্ডগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে বেশি যাত্রী পাওয়ার আশায় পুরোনো কিছু লঞ্চ সংষ্কার করা হচ্ছে। রঙ মেখে পুরাতন লঞ্চগুলোকে নতুনের আবয়ব দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিছু লঞ্চে ঝালাই ও মেরামতের কাজও চলছে। সেখানকার শ্রমিকেরা জানিয়েছেন- ঈদকে কেন্দ্র করেই এই লঞ্চগুলো চলবে। লঞ্চের ভেতরে করা হচ্ছে ওয়াল্ডিংয়ের কাজ, অন্যদিকে বাইরে দেওয়া হচ্ছে রং। চলতি সপ্তাহের মধ্যই লঞ্চগুলো চলাচলের জন্য পুরো তৈরি হবে জানিয়েছে তারা।
মহারাজ রিভার সার্ভিস কোম্পানির একটি লঞ্চে রঙ করার কাজ করছিলেন হুমায়ন নামে এক শ্রমিক। হুমায়ন জানান, আগে সারা বছরই কাজের চাপ থাকত, এখন শুধু ঈদের আগেই লঞ্চে কাজ থাকে। আগে সারা বছর ডক ইয়ার্ডগুলোতে লঞ্চে কাজ করলেও এখন কাজ না থাকায় বছরের অন্যন্য সময় তিনি বাসা বাড়িতে রংয়ের কাজ করেন। ঈদের আগে কাজের চাপ থাকত, ভালো ইনকামও থাকত। এখন আর তেমনটা নেই।
সাইফুল নামে অপর একজন জানান, কাজ কমে যাওয়ায় পেশা পরিবর্তন করে এখন অটো চালান তিনি। তবে কাজের মায়াটা ছাড়তে পারেননি বিধায় রমজান মাসে রংয়ের কাজে আসেন। রমজান শেষ হলে আবার অটো চালাবেন।
ঝালাইয়ের কাজ করা সবুর নামে এক শ্রমিক জানান, আগে রোজার মাসে যাত্রীবাহী লঞ্চের কাজ করে ব্যস্ত সময় কাটত। রোজার মাসে আয়-রোজকার ও বেশি হতো। তবে এখন লঞ্চের কাজ কমে যাওয়ায় তেমন কর্ম ব্যস্ততা নেই।
চর কালিগঞ্জে হোসাইন ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক মুহতাসিম তাজওয়ার হোসেইন বলেন, আগে ঈদকে কেন্দ্র করে আমরা ৮-১০টি যাত্রীবাহী লঞ্চ সার্ভিস করতাম। সেটা এখন কমে গেছে। এই বছর মাত্র ২টা লঞ্চের কাজ পেয়েছি। এখানে আমার মতো আরও ডক ইয়ার্ড আছে। তাদের সকলেরই এই অবস্থা। পদ্মা সেতু হওয়ার পর যাত্রীবাহী লঞ্চ সেক্টরে একটা ধস নেমেছে। এখন আর রমজান মাসে যাত্রীবাহী লঞ্চ মেরামতে আমাদের ব্যস্ততা থাকে না।
এমটিআই
© 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সোনালীনিউজ.কম
Powered By: Sonali IT