• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১

ইসলামের দৃষ্টিতে নাগরিক সাংবাদিকতা


ইমন ইসলাম এপ্রিল ২৮, ২০২১, ০৩:১২ পিএম
ইসলামের দৃষ্টিতে নাগরিক সাংবাদিকতা

ঢাকা : ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম। ইসলাম হলো সত্য, সুন্দর ও কল্যাণকর একটি জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম এমন একটি জীবনবিধান যেখানে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল মানবজাতিকে অসত্য, অসুন্দর, মিথ্যা ও অকল্যাণকর পথ থেকে দূরে থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন। আর সাংবাদিকতা হলো একটি মহৎ পেশা। সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলো সঠিক ও সত্য তথ্য সংগ্রহ করে প্রকাশ করা। এক্ষেত্রে সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য ইসলামী নীতিকে সমর্থন করে। ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুযায়ী মিথ্যা সংবাদ বা মিথ্যা তথ্য প্রচার করা, প্রকাশ করা, মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া মস্ত বড় বা কবিরা গুনাহ। যা ইসলাম সমর্থন করে না। সংবাদ সংগ্রহ ও সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারের আশ্রয় নেওয়া যেহেতু ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ সেহেতু সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও জঘন্য অপরাধ।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিশ্ব সভ্যতা যেমন পরিবর্তিত হচ্ছে তেমনিভাবে সাংবাদিকতায়ও এসেছে আধুনিকায়ন। নাগরিক সাংবাদিকতা তারই বহিঃপ্রকাশ। আধুনিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের ছোঁয়ায় নাগরিক সাংবাদিকতা পেয়েছে নতুনমাত্রা নতুন রূপ। এক্ষেত্রে প্রতিটি নাগরিক সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। পেশাদার সাংবাদিক না হয়েও এখন নাগরিকরা সংবাদ সংগ্রহ করে সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার মাধ্যমে সাংবাদিকতায় যুক্ত হচ্ছেন। বর্তমান সময়ে কোনো ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই পুরো বিশ্ববাসী জানতে পারছেন নাগরিক সাংবাদিকতার গুণে। মূলধারার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে তথ্য প্রকাশ হবার আগেই তথ্য জানতে পারছেন সাধারণ মানুষ। নাগরিক সাংবাদিকতায় তথ্য প্রকাশে নেই কোনো বাধাধরা নিয়ম। যে কারণে সাধারণ নাগরিক ইচ্ছে মতো তথ্য ও ঘটনা ফেসবুকে পোস্ট করে ভাইরাল করছেন। এতে করে তথ্যের মান ও গুণগত দিক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেক সময় ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য মানুষ ভুল তথ্য ছড়িয়ে সামাজিক অস্থিতিশীলতা ছড়াচ্ছে। যা মোটেই কাম্য নয়। কারণ মানুষের দায়িত্বহীনতার পরিণতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দেশ, সমাজ, জাতি ও সাধারণ মানুষ।

সামপ্রতিক সময়ে নাগরিক সাংবাদিকতায় নাগরিকদের অসত্য ও বানোয়াট তথ্য প্রচার ও প্রকাশিত হয়ে এক ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। সামান্য কোনো ঘটনা ঘটলেই তা মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হচ্ছে। পরবর্তীতে তা বৃহত্তর ঘটনার জন্ম দিয়েছে। যা প্রতিটি নাগরিক সাংবাদিকদের দায়িত্বহীনতারই পরিচয়। এতে করে একটি শ্রেণী হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে সমাজের কাছে। আর তাই নাগরিক সাংবাদিকতায় শৃঙ্খলা দরকার। মানুষের মৌলিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতা রক্ষার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো নাগরিক সাংবাদিকতা। মানুষের প্রত্যহ ও দৈনন্দিন জীবনে নাগরিক সাংবাদিকতার ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। তাই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও তথ্য প্রচারই একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত নাগরিক সাংবাদিকতার। এজন্য দরকার নাগরিকদের সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা। আর এর জন্য ইসলামী বিধি বিধান হতে পারে অন্যতম একটি সমাধান।

ইসলাম সবসময় সত্যকে সমর্থন করে। আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসুল পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন সত্য ও ন্যায়ের বাণী মানুষের কাছে প্রচার ও প্রকাশ করতে। এক্ষেত্রে প্রতিটি নবী-রাসুল একেকজন সংবাদকর্মী। তারা পৃথিবীতে এসেছিলেন সংবাদবাহক হিসেবে। এযুগে যারা সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত তাদের প্রত্যেকের উচিত নবী-রাসুলদের আদর্শ অনুসরণ করে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা। সত্য ও নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে তথ্য প্রকাশ করা। এক্ষেত্রে কোরআনই হতে পারে নাগরিক সাংবাদিকতার নীতিমালা সংক্রান্ত গাইডলাইন। প্রতিটি নাগরিক সংবাদকর্মীর উচিত সংবাদ প্রকাশ করার পূর্বে তথ্যের বা সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করা। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন খবর প্রকাশ বা গুজব সৃষ্টিজাতীয় জীবনে কী ধরনের বিপর্যয় বয়ে নিয়ে আসে তা সামপ্রতিক সময়ের ঘটনাবলি দেখেই অনুমিত হওয়া যায়। সঠিক সংবাদ প্রচার করার পূর্বে সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করা প্রতিটি নাগরিক সংবাদকর্মীর একটি নৈতিক দায়িত্ব।

লেখক : শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Wordbridge School
Link copied!