ঢাকা : বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) ত্যাগের মহিমায় উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহের ময়দানে। প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লিকে স্বাগত জানাতে ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে জাতীয় ঈদগাহ।
জাতীয় এ ঈদগাহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন হওয়ায় প্রতিবছর এর সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজ করে সংস্থাটি। অতিবৃষ্টি, বৈরি আবহাওয়া থাকলেও এই ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে আগেই জানিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ঘোষণা অনুযায়ী এ বছরও ডিএসসিসি কর্পোরেশনের অঞ্চল-১ প্রকৌশল বিভাগের আওতায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সব প্রস্তুতির শেষদিনে এসে আজ বুধবার (২৮ জুন) দেখা হচ্ছে সব লাইটগুলোর লাইন ঠিক আছে কি না, স্ট্যান্ড ফ্যানগুলো সঠিক লাইনে বসানো হলো কি না। এছাড়া মুসল্লিদের নামাজের কাতারে বসানো হচ্ছে বিশাল দৈর্ঘ্যের বিশেষ কাপড়। সব মিলিয়ে শেষ সময়ে এসে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখে নেওয়া হচ্ছে সার্বিক কার্যক্রম।
জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হওয়া উপলক্ষ্যে এ আয়োজনে প্রায় ৮০ লাখ টাকা খরচ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতের কাজটি তৃতীয় পক্ষ হিসেবে পেয়েছে পিয়ারু সরদার ডেকোরেটর নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তারাই প্রতিবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের প্রস্তুতির কাজটি করে।
জানা গেছে, ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুত করতে এবার ২৩ দিন সময় লেগেছে। প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ জন শ্রমিক কাজ করেছেন এখানে। বৃষ্টি থেকে মুসল্লিদের রক্ষায় ঈদগাহ ময়দানে প্রায় ১ হাজার ৯৫০টি ত্রিপল টানানো হয়েছে।
প্রস্তুতির শেষদিনে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে দেখা গেছে, শ্রমিকরা শেষ সময়ের কাজ করছেন। সামিয়ানার নিচে সিলিং ফ্যান লাগানো হয়েছে আগেই, এখন প্রতিটি কাতারের সামনে রাখা হচ্ছে স্ট্যান্ড ফ্যানগুলো। লাইটের সুইচগুলো অন করে আলো ঠিক আছে কি না, তা দেখে নেওয়া হচ্ছে। এর আগে মূল ফটকসহ সাজসজ্জার কাজ শেষ করে ফেলেছেন এখানে নিয়োজিত কর্মীরা।
জাতীয় এ ঈদগাহ ময়দানের ক্ষেত্রফল প্রায় ৩০ হাজার বর্গমিটার। এরমধ্যে ঈদগাহের প্যান্ডেলের ক্ষেত্রফল ২৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটার। এখানে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি এবার ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন। যার মধ্যে ৩১ হাজার পুরুষ আর সাড়ে ৩ হাজার মহিলা। এছাড়া এখানে নামাজ আদায়ের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ পুরুষ অংশ নেবেন ২৫০ জন ও অতিগুরুত্বপূর্ণ মহিলা ৮০ জন। সবার প্রবেশের জন্য পৃথক ৩টি গেট থাকবে ময়দানে। ৩৫ হাজার মুসল্লির জন্য জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজের কাতার সংখ্যা হবে মোট ১২১টি। এরমধ্যে ভিআইপি পুরুষদের জন্য কাতার থাকবে ৫টি ও ভিআইপি মহিলাদের জন্য ১টি। এছাড়া জনসাধারণের জন্য ৬৫টি বড় আকারের কাতার এবং মহিলাদের জন্য ৫০টি ছোট আকারের কাতার থাকবে। জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজের আগে মোট ১৪০ জনের একসঙ্গে ওযু করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জাতীয় ঈদগাহের সার্বিক বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মুখপাত্র আবু নাছের বলেন, ঈদগাহের সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। মুসল্লিদের সুবিধার্থে ১০টি এয়ারকুলার, ৬৫০টি সিলিং ফ্যান, ১৫০টি স্ট্যান্ড ফ্যান, ৭০০টি টিউব লাইট, ৪০টি মেটাল লাইট লাগানো হয়েছে। মহিলাদের জন্য আলাদা প্রবেশপথ ও ওযুখানার ব্যবস্থা করা আছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ টয়লেট, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সার্বিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান।
এদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতের জন্য ইমাম, কারী ও উপস্থাপক নিয়োগ করা হয়েছে। এখানে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. মাওলানা মুশতাক আহমেদ। বিকল্প ইমাম হিসেবে রাখা হয়েছে মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামানকে।
অন্যদিকে জাতীয় ঈদগাহে মূল কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কারী মো. এমদাদুল ইসলাম। এছাড়া বিকল্প কারী হিসেবে রাখা হয়েছে কারী মো. ইসহাককে। পাশাপাশি এখানে মূল উপস্থাপক হিসেবে থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক উপ-পরিচালক এস এম সালাহ উদ্দীন।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি সরেজমিন পরিদর্শনে গতকাল এসেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এসময় তিনি বলেন, জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকাবাসীর প্রতি আমার আহ্বান, আপনারা পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত আদায় করতে আসবেন। ঈদগাহে প্যান্ডেলের অভ্যন্তরে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, অতিবৃষ্টি হলেও জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি রয়েছে। আসন্ন ঈদুল আজহায় আমরা প্রতিকূল আবহাওয়ার আশঙ্কা করছি। আমরা আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে তথ্য পেয়েছি যে, ঈদের দিন ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। অতিবৃষ্টি, ঝড় হলেও যেন মুসল্লিরা সুষ্ঠুভাবে জামাত আদায় করতে পারেন সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। কোথাও যেন পানি না পড়ে এবং পানি পড়ার জায়গায় যেন জলাবদ্ধতা না হয়, সেই ব্যবস্থাও আমরা গ্রহণ করেছি।
এদিকে আজ সকাল থেকেই রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। দেশের প্রায় সব বিভাগেই কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) ঈদের দিন সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের সব বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাত হবে। তবে দুপুরের দিকে কিছুটা কম হলেও সন্ধ্যায় আবার বৃষ্টিপাত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :